‘তিন দিন থিকা পানিতে, ত্রাণ দেয় নাই কেউ’
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
গতকাল সোমবার কথাগুলো বলছিলেন গৃহিণী রোকেয়া বেগম (৬০)। রাজীবপুর উপজেলার নুরু ফকিরের চরের মৃত আব্দুল মজিদের স্ত্রী তিনি। সরেজমিনে বন্যাকবলিত এলাকা দেখতে গেলে রোকেয়া বেগমের সঙ্গে কথা হয়।
রোকেয়া বেগম বলেন, ‘তিন দিনে তিন বেলা খাবার পাইছি। ঘরে চালও নেই। হুনছি সরকার বানভাসিদের ত্রাণ দিচ্ছে। আমগর চরে তো কেউ ত্রাণ নিয়া আইসে না। খেয়ে না খেয়ে আছি। স্বামীর ঘর থেকে চলে আসা মেয়ে ও নাতিও আছে আমার সঙ্গে। তাগরও একই অবস্থা। মাচা ডুইবা যাওয়ার কারণে ঘর ছাইড়া পাশের পশ্চিম রাজীবপুর গ্রামের সালামের বাড়িতে গিয়া উঠমু। বেলা ১২টা বাজে, এহন খাবার খাই নাই। না খাইয়া আছি। আমগর মতো গরিব মাইনসের কেউ খোঁজ নেয় না। ভোটের সময় ঠিকই আসে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা। বানে ভাসছি, কিন্তুক তাঁদের কোনো খোঁজ নাই।’
রোকেয়া বেগমের মেয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে সাগর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। পোলা আমার বারবার খাবার চাইছে, কিন্তু দিবার পারি নাই। ত্রাণের জন্য পানি ভাইঙ্গা কাইল ইউনিয়ন পরিষদে গেছিলাম, খালি হাতে আইছি। আইজ কি খামু তা জানি না। ঘরে চাইল নাই। কার কাছে কর্জ চামু। সবার বাড়িতে পানি। না খাইয়া থাকা ছাড়া কোনো উপায় নাই। ’
রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের নুরু ফকিরের চরে অর্ধশত পরিবারের বসবাস। চরটি নিচু হওয়ায় সবার বাড়িতে পানি। অনেকেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। আবার কেউ কেউ পানির মধ্যেই বসবাস করছে। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নুরু ফকিরের চরের ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন বলেন, ‘চরটি ডুবে গেছে। আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি, আমার ওই চরের মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার জন্য।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে ১২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দ্রুত বিতরণের জন্য। আপনি যে চরের কথা বললেন সেটার জন্য চেয়ারম্যানকে বলে দিচ্ছি।’
দিনবদলবিডি/এইচএআর