ডলার পরিহার বলয় :কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
ডলারের রিজার্ভ কারেন্সির কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যেকোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্যাপক অর্থনৈতিক ব্যয় চাপিয়ে দেয়। তাই মার্কিন ডলারের আধিপত্য কমাতে বিশ্বব্যাপী নানা আয়োজন চলছে। অনেক দেশই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দ্বিপক্ষীয় মুদ্রা ব্যবহারের চুক্তি করছে। পাশাপাশি রিজার্ভ সংরক্ষণেও বিকল্প মুদ্রায় ঝুঁকছে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো একমাত্র ডলারেই তেল বিক্রির নীতি গ্রহণ করায় মার্কিন ডলার বৈশ্বিক মুদ্রা হয়ে উঠেছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এসব দেশ মার্কিন ডলারকে পাশ কাটিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে তাদের নিজস্ব স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করছে। এর মধ্যে -ব্রাজিল, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরবসহ ২০টি দেশ নিজস্ব মুদ্রায় পরস্পরের সাথে বাণিজ্য করার পথ বেছে নিয়েছে।
বিশ্লেষকের মতে, দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় জ্বালানি বিক্রির উদ্যোগ কার্যকর হলে তা ডলারের অধিপত্যে প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য অনুসারে, স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহারের ফলে মার্কিন ডলার গত দুই দশকে বাজার অংশীদারিত্বের ১৩ শতাংশের বেশি পয়েন্ট হারিয়েছে।
বাংলাদেশ কি মার্কিন ডলার পরিহার বলয়ে যাচ্ছে:
ইদানিং যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হলে যে কোনো উসিলায় যেকোনো দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাকে।বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতিতে পড়লে করণীয় কী হবে? এমন ভাবনা সামনে রেখেই সম্প্রতি জাতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার উদ্যোগ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রায় বাণিজ্যের প্রস্তাব ও চাপ আসছে প্রধানত ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। এক বছরের বেশি সময় আগে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এই অবস্থায় সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প কোনো ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব চাওয়া হয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা এখনো চলছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলেন, ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের জন্য দুই দেশের বাণিজ্যিক অবস্থা বিবেচনা করা দরকার। ডলারের মতো রুপি-টাকার আন্তর্জাতিক মানও ওঠানামা করে। এটিও স্থিতিশীল নয়। এ কারণে ব্যাংকের জন্য এই লেনদেন ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এই ঝুঁকির কারণে ব্যাংক বাড়তি চার্জ রাখতে পারে। তাই এই দুই দেশের বড় আকারে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যে যাওয়ার সুযোগ কম বলে মনে করেন তারা।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ছিল ভারত। এ সময় ১৬.১৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয় ভারত থেকে। বাংলাদেশ একই বছর প্রতিবেশী দেশে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। দুই দেশের বাণিজ্যে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ যেহেতু কম, তাই রুপি ও টাকার লেনদেনে ভারত লাভবান হলেও বাংলাদেশ চাপে থাকবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সম্প্রতি চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে টাকা-রুবলে লেনদেনেরও আলোচনা চলছে। এখন রুপির বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে এবং এতে ঢাকার সাড়া চূড়ান্তভাবে কী দাঁড়ায় সেটিই দেখার বিষয়। যদি ভারতের প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাজি হয় তাহলে আমদানির ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি আমেরিকান চাপও বাড়তে পারে। এই চাপের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সংসদে মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের সরকার উল্টাতে পাল্টাতে পারে। কাজেই দেশের স্বার্থে চীন, রাশিয়ার প্রস্তাবে রাজী হলেও ভারতের ডলার পরিহার বলয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হচ্ছে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানান বিশ্লেষকরা।
দিনবদলবিডি/Rakib