বাইডেনকে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি, প্রবাসে তীব্র প্রতিক্রিয়া

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ রাত ০৯:১৬, সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

রাশিয়া-চীনের সাথে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক সইতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ২৫ মে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করার জন্য এবং বাংলাদেশের জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সর্বোত্তম সুযোগ দেয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ট্রুপস নিষিদ্ধ করারও পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

চীন এবং রাশিয়ার সান্নিধ্যে এসে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকেও বিপন্ন করে তোলেছেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতি বিপন্ন করতে অন্য মিত্রদেরকেও উৎসাহিত করছেন। স্বাক্ষরকারি কংগ্রেসম্যানরা হলেন পেনসিলভেনিয়ার স্কট পেরী, ভার্জিনিয়ার বব গুড, আলাবামার ব্যারি মোর, টেনেসীর টিম বারসেট, ওহাইয়োর ওয়ারেন ডেভিডসন এবং টেক্সাসের কীথ সেলফ।

শুধুমাত্র রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানরা কেন শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে সরিয়ে দিতে ডেমক্র্যাট-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন-এ নিয়ে সচেতন প্রবাসীরাও হতভম্ব। কারণ, এই ৬ কংগ্রেসম্যান কখনোই বাংলাদেশ নিয়ে কোন কথা বলেননি কিংবা বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোন ইস্যুতেও তাদেরকে সরব হতে দেখা যায়নি। তাদের চিঠিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথাও রয়েছে। শেখ হাসিনার এই আমলে নাকি সংখ্যালঘুদের অনেকেই নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন-উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লংঘনের শতশত ঘটনা নথিভুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউজ-জাতিসংঘসহ বিভিন্ন এনজিও-এ অভিযোগ করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নাগরিকদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত আচরণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে, নির্যাতনের পর বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাও ঘটছে। বিরোধী মতপ্রকাশকারি রাজনীতিকদের গুম এবং সাংবাদিকদের জেলে নেয়া হয়েছে, প্রতিবাদকারিদের নিগৃহিত অথবা হত্যা করা হয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। চিঠিতে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এই কংগ্রেস সদস্যরা। বাংলাদেশের জনগন যাতে অবাধ এবং সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সেজন্য এ দ্রুত ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে তারা চিঠিতে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশে বিরোধীমতের ওপর দমন-নিপীড়ন প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে দেশটির লাখো মানুষ। এই সুষ্ঠু নির্বাচনই হাসিনার সরকার পরিবর্তনে তাদের একমাত্র আশা। এই আন্দোলন দমাতে নির্যাতন, গুম এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের অন্যতম হাতিয়ার র‌্যাবকে ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার, ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংস্থা র‌্যাবকে সরকারের ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে উল্লেখ করেছে বলেও চিঠিতে বিবৃত হয়েছে।

এসব কারণে ইউএস প্রশাসন র‌্যাব’কে ‘জঘন্য মানবাধিকার লংঘনকারি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বছরাধিককাল আগে। র‌্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ঘটনাও ঘটেছে একইসাথে। এতদসত্বেও শেখ হাসিনার আমলটি বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে,ক্ষেত্রবিশেষে বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে ঐ চিঠিতে। নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লংঘন রোধে কিংবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষায় কোন প্রভাবই ফেলেনি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কারণে ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে এবং বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারি সংস্থা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যগণকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি।

এ ধরনের চিঠির সংবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে কম্যুনিটিতে। আর নেপথ্যে রয়েছে একাত্তরের ঘাতক হিসেবে মৃত্যুদন্ডে ঝোলা রাজাকারদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত স্বজনরা বলেও জানা গেছে। এরা কাড়ি কাড়ি ডলার ঢালছেন রাজনীতিকদের পেছনে। যুক্তরাষ্ট্রে ঘাপটি মেরে থাকা এক সংখ্যালঘু নেতাও কলকাঠি নাড়ছেন শেখ হাসিনার সরকারকে উচ্ছেদের অভিপ্রায়ে-এমন গুঞ্জনও রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের যে অঙ্গিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন তাতে পূর্ণ আস্থা রেখে ইতিমধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিয়েছেন। গোটাবিশ্ব তেমন একটি নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এ্যান্তনী ব্লিংকেন। একইসাথে সেই নির্বাচনে যারা মাস্তানী-গুন্ডামি করবে কিংবা ভোট চুরি/কারচুপিতে লিপ্ত হবে অথবা যারা নির্বাচন বর্জনের হুমকিতে নাশকতা চালাবে-তাদেরকে পরিবারশুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হবে মার্কিন ভিসার ক্ষেত্রে। সবকিছু ঠিকঠাকমতই এগুনোর মধ্যে রিপাবলিকান ৫ কংগ্রেসম্যানের এ চিঠি সচেতন প্রবাসীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছে।

দিনবদলবিডি/Rony

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়