সরেজমিন ছাতক
‘ত্রাণ ভাসিয়ে দেয় নাকি ডুবিয়ে দেয়, আমরা তো পাই না’
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
‘শুনি সরকার ত্রাণ দিচ্ছে। আমরা তো পাই না। ত্রাণগুলো ভাসিয়ে দেয়, নাকি ডুবিয়ে দেয়! সরকারি ত্রাণ কই যায়, আমরা তো পাই না। ’ কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুখা ইউনিয়নের করছা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান (৬৫)।
বাড়িতে পানিবন্দি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় বুক সমান পানি ঠেলে স্থানীয় বাজারে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। শুধু করছা গ্রাম নয়, দুর্গম এই এলাকায় আশপাশের আরো কয়েকটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে কোথাও কোমর সমান, কোথাও বুক সমান পানি ছিল গতকালও।
আব্দুল মান্নানের দাবি, বন্যার প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও তিনি ও তার পরিবার কোনো ত্রাণ পায়নি। তার পরিবারের সদস্য ১৯ জন। তার বাড়ি দ্বিতল ভবন হওয়ায় পরিবারসহ আশ্রয় নেন বাড়ির ছাদে। বাড়িতে এখনো পানি কোমর সমান।
গত বৃহস্পতিবার পাহাড়ি ঢলে বন্যাকবলিত হয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উপজেলার মধ্যে একটি এই ছাতক উপজেলা। এলাকাবাসী বলছে, দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে ত্রাণ দিতে কেউ ঠিকমতো আসতে পারে না।
শুধু আব্দুল মান্নান নন, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষের। এলাকার অন্তত ৩০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ত্রাণ না পাওয়ায় তাদের ক্ষোভের কথা। সরকারের কাছে দ্রুত ত্রাণ দেওয়ার দাবি জানায় তারা।
করছা গ্রামের পাশে তাজপুর গ্রাম। হাঁটা পথে ২০ মিনিট। পানি তীব্র স্রোত থাকায় নৌকায় সেই গ্রামে যেতে সময় লেগেছে ৪০ মিনিট। পথে কোমরপানি ভেঙে বাজারে মোবাইল ফোন চার্জ দিতে যাচ্ছিলেন এখলাছ আলী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দিকে পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো পানি বুক পর্যন্ত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এদিকে ত্রাণ দিতে কেউ আসে না। আমরা কোনো ত্রাণও পাইনি। ঘরে যা ছিল তা দিয়ে চলছিলাম এত দিন। এখনো বাজারে যাচ্ছি কিছু চিড়া-মুড়ি কেনার জন্য। না খেলে বাঁচব কেমনে।’
তাজপুর গ্রামের বেশির ভাগ এলাকার বাড়িতে এখনো কোমর সমান পানি। যাদের সঙ্গে কথা হলো, প্রায় সবাই খাবার ও খাবার পানির সংকটের কথা জানাল।
পাশের আরেকটি গ্রাম নিকলি। এই গ্রামের বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন তার পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে ছয় দিন ধরে পানিবন্দি। জুবায়ের বলেন, ‘ছয় দিন পার করছি চিড়া-মুড়ি খেয়ে। বন্যার পানির চাপ আজ (গতকাল) কম। এই ছয় দিনে কোনো ত্রাণ পাইনি।’
ছাতক শহরের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক
পানি কমে যাওয়ায় ছাতক পৌর শহরের দোকানগুলো খুলতে শুরু করেছে। অনেকেই দোকান ধোয়ামোছার কাজ করছে। যদিও বাজারের কিছু অংশ এখনো হাঁটুপানির নিচে। কথা হয় ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অখন আমরার বাজারর বেশির ভাগ দোকানউ খুলিয়ার। এর বাদেও বহুত দোকানও এবোথুরি হাঁটুফানি। আশা খরিয়ার দুই-এখর মাঝে ইতা ঠিক অই যাইব।’
দিনবদলবিডি/এইচএআর