ঘর দেওয়ার কথা বলে বাড়ি লিখে নিল মেম্বার

দখলে বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধার চুলের মুঠি ধরে টানাহেঁচড়া!

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:০১, বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২, ৫ শ্রাবণ ১৪২৯
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে বাড়ির জায়গা লিখে নেয় স্থানীয় এক সাবেক মেম্বার। পরে সেই জায়গা দখল করতে গেলে বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধাকে মারধর করে ওই মেম্বার…

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে বাড়ির জায়গা লিখে নেয় স্থানীয় এক সাবেক মেম্বার। পরে সেই জায়গা দখল করতে গেলে বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধাকে মারধর করে ওই মেম্বার। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দেয় বৃদ্ধা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অভিযুক্ত কাইয়ুম ও ফারুক নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামের মৃত কিতাব আলীর স্ত্রী খাইরুন্নেছা (৬০) তার ১০ শতাংশ জায়গায় বসবাস করে আসছেন। এই অবস্থায় খাইরুন্নেছার স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্ট করে সংসার চালিয়ে আসছে। এরই মাঝে তার বাড়ির পাশেই সাবেক মেম্বার সুরুজ মিয়া বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গাটি নেওয়ার বিভিন্ন ফন্দি আঁটতে থাকে। সেই ফন্দির এক পর্যায়ে তাকে সরকারি একটি পাকা ঘর দিবে বলে জানায় মেম্বার সুরুজ মিয়া। আর এই দিকে সরকারি ঘর পাবে বলে খুবই খুশি খাইরুন্নেছা। এই সুযোগে মেম্বার সুরুজ মিয়া তার কাছ থেকে জমিনের কাগজ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি দেওয়ার কথা বলে। সরকারি ঘর পাবে এমন আশায় সুরুজকে জমিনের কাগজ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি দিয়ে দেয়। এমন কাগজ পেয়ে সুরুজ তাকে ঘর দিবে বলে প্রতারণা করে ঈশ্বরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে খাইরুন্নেছার বাড়ির দশ শতাংশ জায়গা লিখে নেয়। লিখে নেওয়ার পর সুরুজ মিয়া খাইরুন্নেছাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ঘর পরে হবে বলে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।  

এ অবস্থায় কিছুদিন যেতেই সুরুজ মিয়া মানুষের কাছে বলাবলি শুরু করতে থাকে খাইরুন্নেছার বাড়ি তিনি ক্রয় করে ফেলেছেন। বিষয়টি খাইরুন্নেছা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা শুনতে পেরে প্রতিবাদ করে এবং জায়গা দখলে বাধা দেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতবররা একটি সালিস দরবার করে। সেই সালিসে সুরুজ মেম্বারকে ২ শতাংশ জায়গা নিতে বলে এবং ৮ শতাংশ জায়গা ফিরিয়ে দিতে বলে। কিন্তু সালিসের এমন সিদ্ধান্ত সুরুজ মিয়া মেনে না নেওয়ায় সালিস পণ্ড হয়ে যায়। আর এই দিকে প্রভাবশালী সুরুজ মেম্বার জায়গা দখল করতে বিভিন্ন পাঁয়তারা শুরু করে।

এরই জের ধরে গত শুক্রবার সকালে সুরুজ মিয়া তার দলবল নিয়ে বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গায় গাছ লাগাতে আসে। এসময় বৃদ্ধা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা গাছ লাগাতে বাধা দিলে তাদেরকে লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে সুরুজ মেম্বার ওই বৃদ্ধাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার মাথার চুলের মুঠোয় ধরে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ভাইয়ের পাঁচ মেয়েকেও মারধর করে মেম্বারের লোকজন। এঅবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী খাইরুন্নেছা বলেন, পাশের বাড়ির সুরুজ মেম্বার আমাকে সরকারি ঘর দিবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমার থাকার বাড়ির ১০ শতাংশ জায়গাটুকু নিয়ে নেয়। যখন আমাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয় তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি এটা কিসের টাকা তখন সে বলে আমি তোমার বাড়ির সব জায়গা লিখে নিয়েছি আর তোমার জন্য সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করতেছি। তখন আমি বুঝতে পারছি সুরুজ মেম্বার আমার সঙ্গে ঘর দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করেছে। তাই আমি আমার জায়গা ছাড়ি নাই। কারণ আমি গরিব মানুষ আমার থাকার একমাত্র সম্বল এই বাড়ির জায়গাটুকু এখানেই আমার মরণ হবে। আর এই জায়গাটা নিয়ে সুরুজ মেম্বার আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং আমাকে ও আমার ভাতিজিদেরকে মারধর করেছে আমি এর বিচার চাই। এদিকে সুরুজ মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা আমাদের ক্রয়কৃত জমিতে গাছ লাগাতে গিয়েছিলাম। আর এমন সময় তারা এসে বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষের মাঝে একটু হাতাহাতি হয়ে যায়।  

ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ পীরজাদা শেখ মোহাম্মদ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে অভিযোগটি এফআইআরভুক্ত হয়।  

দিনবদলবিডি/এইচএআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়