সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যুতে পরিবারে মাতম

‘ওরে কোথায় নিয়ে যাও, একা থাকতে পারবে না!’

গাজীপুর সংবাদদাতা || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:২৮, শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২, ৮ শ্রাবণ ১৪২৯
সড়কে নিহত ছয় পর্যটকের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত

সড়কে নিহত ছয় পর্যটকের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত

তাঁদের কেউ স্বামী, কেউ ছেলে, কেউ বাবা, কেউ ভাই হারিয়েছেন। দুর্ঘটনার এক দিন পরও স্বজনদের বুকফাটা কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। 

তাঁদের কেউ স্বামী, কেউ ছেলে, কেউ বাবা, কেউ ভাই হারিয়েছেন। দুর্ঘটনার এক দিন পরও স্বজনদের বুকফাটা কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। এই দৃশ্য দেখে গ্রামবাসীর অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। গ্রামবাসীও এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এত মৃত্যু দেখেনি।

গত বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু দেখে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়ে বরিশালের উজিরপুরে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে গাজীপুরের দুই এলাকার ছয়জন নিহত এবং চারজন আহত হন। গতকাল শুক্রবার সকালে নিহতদের একসঙ্গে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানার জয়েরটেক গ্রামের মাঠে জানাজা শেষে প্রত্যেককে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় মানুষের ঢল নামে।

জানাজায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবীর, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি জয়েরটেকে এবং অন্যজনের বাড়ি আহাকি গ্রামে। নিহতরা হলেন জয়েরটেকের উজিরুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমিন (৪০), হাসেন আলীর ছেলে আবদুর রহমান (৪৫), জবর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০), রকমান আলীর ছেলে হারুন অর রশিদ (৪৫), রহা মিয়ার ছেলে নূরুল ইসলাম ওরফে ঠাণ্ডু (৪৮) এবং আহাকির নদীরপার এলাকার তমিজ উদ্দিনের ছেলে হাসান আলী (৩৮)। আহতরা হলেন আছর উদ্দিন, মোকছেদ আলী, লিটন মিয়া ও রফিকুল ইসলাম।

নিহত হারুন গাজীপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার অফিসের একজন দলিল লেখক (ভেন্ডার)। তিনি সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে স্ত্রী শান্তা আক্তার (৩০) অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বৃদ্ধা মা হাসনা বেগম (৭০) বুক চাপড়ে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার একমাত্র বুকের ধন হারুনরে আমার বুকে আইনা দে। আমার হারুন কই রে। ’ শান্তা আক্তার স্বজনদের দেখেই বারবার বলছিলেন, দুই সন্তান ফাহিম হোসেন (১০) আর মাহিম হোসেনের (৭) ভবিষ্যৎ কী হবে?

জয়েরটেক দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়েছে শহিদুল ইসলামকে। লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ফুফু ফুলজান (৭৫) চিৎকার করে বলছিলেন, ‘শহিদুলকে কোথায় নিয়ে যাও! ওই একা থাকতে পারবে না!’ স্ত্রী রুবি বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “যাওয়ার সময় আমাকে কিছু বলে যায়নি। শুধু বলেছে, ‘গেট আর দরজা বন্ধ করে দাও। ’ আমি তার পিছু পিছু গেলাম। সে তাকাল না, একটি কথাও বলল না। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে কী করব?”

নিহত রুহুল আমিনের বাড়িতে মা রেজিয়া বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্ত্রী তাঁর দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে এখন কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে পরিবার।

নিহত অন্য সন্তানের মায়েরাও আহাজারি করছিলেন। নিহত সবার বাড়িতেই চলছে মাতম। গ্রামে প্রতিটি বাড়িতেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ঘটনাটি আশপাশের গ্রামের মানুষকেও ছুঁয়ে গেছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের গ্রামে একসঙ্গে এতগুলো প্রাণ হারানোর ঘটনা আগে ঘটেনি। তাদের মৃত্যুতে শুধু তাদের পরিবার নয়, পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ’

গত বৃহস্পতিবার জয়েরটেক ও আহাকি গ্রামের ১০ জন মিলে একটি মাইক্রোবাসযোগে পদ্মা সেতু ও কুয়াকাটায় বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পথে দুপুরে বরিশালের উজিরপুরে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে তাঁদের মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

দিনবদলবিডি/এইচএআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়