হিংসা-বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
হিংসা থেকে বেঁচে থাকতে রাসূল (সা.) মানুষকে সতর্ক করেছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন…
খুব নিন্দনীয় একটি বিষয় হলো হিংসা-বিদ্বেষ। প্রকৃত ঈমানদার কখনও হিংসায় লিপ্ত হতে পারেন না। হিংসা মানুষের অন্তর থেকে ঈমান ও ইখলাস দূর করে দেয়!
হজরত জুবায়ের ইবনে আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের ভেতর পিপীলিকার মতো প্রবেশ করবে বিগত উম্মতদের রোগ। আর তা হচ্ছে হিংসা ও বিদ্বেষ; যা মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যে চুল মুণ্ডন করবে। বরং তা তোমাদের দ্বীনকে মুণ্ডন করবে।’ (তিরমিজি : ২৫১০; মুসনাদে আহমাদ : ১৪১২)। অর্থাৎ ক্ষুর যেমন চুল নির্মূল করে ফেলে, তেমনি হিংসা মানুষের দ্বীন ও ঈমানকেও নির্মূল করে ফেলে। এজন্য হিংসা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা শিখিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। সূরা ফালাকে উল্লেখ রয়েছে, ‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা: ফালাক, আয়াত: ৫)।
হিংসা থেকে বেঁচে থাকতে রাসূল (সা.) মানুষকে সতর্ক করেছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বেঁচে থাকবে, কেননা এমন ধারণা জঘন্য মিথ্যা। আর কখনও কারো দোষ অনুসন্ধান করবে না, কারো গোপন বিষয় অন্বেষণ করবে না, একে অন্যকে ধোঁকা দেবে না, পরস্পর হিংসা করবে না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না, পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, বরং তোমরা সবাই এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (বুখারি: ৬০৭৬; মুসলিম : ৬৬৯০)।
হিংসা-বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি সম্বন্ধে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমল পেশ করা হয় এবং সব মুমিন বান্দার গুনাহখাতা মাফ করে দেওয়া হয়। কিন্তু যাদের পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুশমনি আছে, তাদের ক্ষমা করা হয় না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের ছেড়ে দাও, যেন তারা ফিরে আসে অর্থাৎ মিলে যায়।’ (মুসলিম : ৬৭১১)।
হিংসার কারণে মানুষ জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। পক্ষান্তরে সাধারণ ইবাদত করেও অন্তর হিংসামুক্ত রাখার কারণে বান্দার জান্নাতের সুসংবাদ লাভ হয়। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আমরা একদিন নবীজির (সা.) কাছে বসা ছিলাম। এ সময় তিনি বললেন, ‘এখন তোমাদের নিকট একজন জান্নাতি মানুষের আগমন ঘটবে।’ অতঃপর আনসারদের একজন ব্যক্তি আগমন করল। যার দাড়ি দিয়ে ওজুর পানি ঝরছিল ও বাম হাতে জুতা জোড়া ছিল। দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিন নবীজি (সা.) একই কথা বললেন এবং তখন সেই একই ব্যক্তির আগমন ঘটল। অতঃপর যখন রাসূল (সা.) মজলিস থেকে উঠলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস তার পিছু নিলেন। আনাস (রা.) বলেন, আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন যে, আমি তার বাসায় এক রাত বা তিন রাত কাটাই। কিন্তু তাকে রাতে নামাজের জন্য উঠতে দেখিনি; কেবল ফজরের জন্য ওজু করা ব্যতীত। এভাবে তিন দিন তিন রাত চলে গেলে আমি তার আমলকে সামান্য মনে করতে লাগলাম। অবশেষে ওই ব্যক্তিকে বললাম, আপনার সম্পর্কে রাসূল (সা.) এই এই কথা বলেছেন এবং আমিও আপনাকে গত তিন দিন ধরে দেখছি। কিন্তু আপনাকে বিশেষ কোনো আমল করতে দেখলাম না। তাহলে কোন আমল আপনাকে ওই স্থানে পৌঁছিয়েছে, যার সুসংবাদ আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাদেরকে শুনিয়েছেন? তিনি বললেন, আমি যা করি তা তো আপনি দেখেছেন। অতঃপর যখন আমি চলে আসতে উদ্যত হই, তখন তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘আপনি যা দেখেছেন, তা তো দেখেছেন। তবে আমি আমার অন্তরে কোনো মুসলিমের প্রতি কোনো রকম হিংসা-বিদ্বেষ রাখি না। কারো প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত কোনো কল্যাণের ওপর হিংসা পোষণ করি না।’ এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ বিন আমর বললেন, ‘এটিই আপনাকে উক্ত স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। এটি এমন এক আমল, যা আমরা করতে পারি না। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৩/৭৯; মুসনাদে আহমাদ : ১২৭২০)।
দিনবদলবিডি/আরএজে