তিন দশক আগে ধর্ষণে জন্ম নেওয়া সন্তানই ধর্ষকদের দাঁড় করাল বিচারের কাঠগড়ায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
তিন দশক আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক নারী। প্রতিবেশী দুই ভাই মিলে তাকে যৌন নির্যাতন করেছিল। দীর্ঘদিন পর তিনি সেই জঘন্য ঘটনার বিচার পাওয়ার আশা করছেন…
তিন দশক আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক নারী। প্রতিবেশী দুই ভাই মিলে তাকে যৌন নির্যাতন করেছিল। দীর্ঘদিন পর তিনি সেই জঘন্য ঘটনার বিচার পাওয়ার আশা করছেন। আর সেই বিচার পাওয়ার লড়াইয়ে তাকে সহায়তা করেছে ধর্ষণে জন্ম নেওয়া সন্তান।
ভারতের উত্তর প্রদেশে ১৯৯৪ সালে এই ঘটনাটি ঘটে। ওই নারীর বয়স তখন ১২, তখন তাকে দুই ভাই ধর্ষণ করে।
ওই ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল। সেই সন্তান ১৩ বছর পর আবার তার মায়ের কাছে ফিরে আসেন। বর্তমান সেই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মাকে উৎসাহিত করেন ছেলে।
দশ দিন আগে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য জনকেও নেওয়া হয়েছে পুলিশ হেফাজতে।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী বলেন, ঘটনাটা বেশ পুরনো কিন্তু সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। সেই ঘটনায় আমার জীবন এখনো স্থির হয়ে আছে এবং বারবার আমার সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে।
উত্তর প্রদেশের ধর্ষণের শিকার ওই নারী জানান, ১৯৯৪ সালে শাহজাহানপুর শহরে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মোহাম্মদ রাজি ও তার ভাই নকি হাসান তারই প্রতিবেশী, দেয়াল টপকে তার বাড়িতে আসেন এবং তাকে নির্যাতন করেন; তখন তিনি একা ছিলেন।
পরে তার বোন বুঝতে পারেন তিনি অন্তঃসত্তা এবং তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তবে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় চিকিৎসকরা তার গর্ভপাত করতে রাজি হননি। ফলে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই তাৎক্ষণিকভাবে তাকে দত্তক দেওয়া হয়।
ওই নারী বলেন, আমি ওই সন্তানের জন্য অনেক ভুগেছি কিন্তু আমি একটিবারের জন্য তার মুখও দেখার সুযোগ পাইনি। যখন আমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি বললেন, তুমি জীবনে আরেকটা সুযোগ পেলে।
ওই সময় অভিযুক্ত ধর্ষকদের ভয়ে তার পরিবার থানায় মামলা করেননি। ধর্ষণের শিকার নারী বলেন, ধর্ষণের কথা কাউকে বললে তারা আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা ও ঘরে আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়। আমার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পুলিশ হব, তবে ওই দুইটা (ধর্ষক) লোকের জন্য আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। আমি স্কুলে যেতে পারিনি, পড়তে পারিনি।
পরে ওই নারীর পরিবার রামপুর জেলায় চলে যায়। ২০০০ সালে তাকে বিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি দ্বিতীয় সন্তানের মা হন। তিনি ভেবেছিলেন অতীত ভুলে এখানে নতুন শুরু করবেন। তবে ছয় বছর পর তার স্বামী ওই ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারে এবং সে জন্য তাকেই দায়ী করে, এর পর তাকে ছেড়ে চলে যান। তিনি বোনের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
তার দত্তক দেওয়া প্রথম সন্তানও নিজের জন্ম পরিচয় নিয়ে নানা বৈষম্যের শিকার হন। তার প্রতিবেশীরা তাকে বলেছে, সে তার বর্তমান বাবা মার সন্তান নন, তাকে তারা দত্তক নিয়েছেন।
১৩ বছর পর বাধ্য হয়ে তাকে দত্তক নেওয়া পিতা-মাতা আসল মায়ের কাছে নিয়ে আসেন। সেখানে এসেও মেলেনি পিতৃ পরিচয়। তার নেই কোনো বংশ পরিচয়। ফলে স্কুলে তাকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
তার পর মায়ের কাছে বারবার তার বাবার নাম জানতে চান ওই ছেলে। আর যদি নাম না বলা হয় তবে আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন। একসময় বাধ্য হয়ে মা আসল ঘটনা সন্তানের কাছে খুলে বলেন।
এরপর ওই সন্তানই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যেতে মাকে উৎসাহিত করেন। সূত্র: বিবিসি
দিনবদলবিডি/Rony