পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীতে হোসেনকে দেখে মনে পড়ে যায় হাসানের কথাও...

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৫৭, সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২, ১৩ আষাঢ় ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছিলেন। সরকার সেতু প্রকল্পের পরামর্শকের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকেও।

সেই সময়ে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের চাপে সেতু বিভাগের সচিবসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন ভূ্ইয়া।

অবশেষে মিথ্যা অভিযোগ আর বহু বাধা পেরিয়ে দেশের টাকায় নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলো। পদ্মা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতাদের অবহেলা উপেক্ষা করে সেতু নির্মাণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শনিবার (২৫ জুন) উদ্বোধন করেন স্বপ্নের এ পদ্মা সেতু।

শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন।

অনেক দিন ধরে সরকারি রাজনৈতিক কিংবা সরকারি অনুষ্ঠানে অনেকটা অনুপস্থিত আবুল হোসেনের আজকের উপস্থিতি চমকই বটে। কিন্তু পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির আলোচনায় সামনের সারির সেই সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে অনুষ্ঠানের কোথাও দেখা যায়নি। অনেকের কৌতূহল তিনি কোথায়? তিনি নেই কেন?

বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে নিয়ে। কিন্তু প্রকল্পে দুর্নীতিকে তিনি বারবার মিথ্যা অভিযোগ বলে দাবি করে এসেছেন। অর্থ ছাড়ের আগে প্রকল্পের দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই বলেও নানাভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন বারবার। এই ঘটনায় রাজনৈতিকভাবেও ব্যাকফুটে চলে যান আবুল হোসেন।

পরে কানাডার আদালতে হওয়া একটি মামলায় প্রমাণিত হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সেতু সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াসহ বাকি অভিযুক্তরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে যে অভিযোগ তোলা হয় সেটিকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দেয় কানাডার আদালত।

দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্ত হলেও তত দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায় আবুল হোসেনসহ অন্যদের। এই ঘটনায় অনেকটাই আড়ালে চলে যান সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু প্রকল্পের পরামর্শক টিমের অন্যতম সদস্য ও লবিস্ট আবুল হাসান চৌধুরী। সক্রিয় এই রাজনীতিবিদ মাঠের রাজনীতিতে হয়ে যান নিষ্ক্রিয়।

এরই মাঝে আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীর পাদপ্রদীপের আলোয় সৈয়দ আবুল হোসেন। কিন্তু কোথাও নেই আবুল হাসান।

কেন নেই তিনি। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে গণমাধ্যম। তার অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ তিনি পেয়েছেন। কিন্তু অন্য কাজে জরুরি ব্যস্ততার জন্য সেখানে যেতে পারেননি।

তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে উচ্ছ্বসিত আবুল হাসান চৌধুরী। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতির জন্য এটা একটা বিরাট দিন। যে প্রজন্ম দুঃখ করেন যে তারা একাত্তর দেখেন নাই এবং বিজয় দিবস দেখেন নাই, তারা অনেকাংশে একটা তৃপ্তি অনুভব করতে পারেন যে তারা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেখেছেন।’

রাজনীতি বা দলীয় নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে কথা বলতে চান না জানিয়ে আবুল হাসান বলেন, ‘আজকে পেছনের দিকে তাকাবার দিন নয়, আজকে সামনের দিকে তাকাতে হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। একাত্তরে যখন যুদ্ধ হচ্ছিল তখন অনেকেই বলেছিল এই দেশ ভায়াভল হবে কি না! নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে কি না?’

পদ্মা সেতু নিয়েও অনেকে এমন বলেছে- উল্লেখ করে আবুল হাসান বলেন, ‘বাংলার নেত্রী তার দৃঢ় প্রত্যয়ে একটি বড় সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাংলাদেশিরা চাইলে পারে। আমি মনে করি একটি দ্বিতীয় যুদ্ধের ভেতর দিয়ে আমরা সেটা প্রমাণ করেছি, আমরা পারি।’

পদ্মা সেতুর কথিত অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে আবুল হাসান বলেন, ‘অন্যায়ভাবে মিথ্যাচারের ওপর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। কানাডার উচ্চ আদালতের রায়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলাকে বলা হয়েছে ‘একটা মিথ্যার ওপর আরেকটা মিথ্যা’ দিয়ে মামলাকে দাঁড় করানো হয়েছে।’

পদ্মা সেতুর পরামর্শক কমিটির সদস্য আবুল হাসান চৌধুরী সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব হারানোর বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘সৈয়দ আবুল হোসেন সাহেবের মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তির ওপর মিথ্যা অপবাদ চাপানো হয়েছে, যিনি নিজের টাকা খরচ করে অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। মশিউর রহমান সাহেবের মতো একজন লোককে ফাঁসানো হলো। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ওপরও অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।’

সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের ও বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করে আবুল হাসান বলেন, ‘বিশ্বের অনেক তথাকথিত জ্ঞানী-গুণী নেতা বলেছেন এমন একটা সেতু বাংলাদেশের পক্ষে করা সম্ভব না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক এই সেতুর বিরোধিতা করেছে। আমি বাংলার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাব, তিনি সংসদে তার বক্তব্যে এই অনিয়ম জুলুমের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।’ কোনো কিছুতেই তার আর আক্ষেপ নেই বলে জানান সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

সূত্র: ঢাকা টাইমস

দিনবদলবিডি/আরএজে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়