এজেন্সির ভুয়া টিকিটে বিদেশে যাওয়া হলো না ১৮ যাত্রীর

দিনবদলবিডি ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:০৯, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

প্রথমে যাত্রীদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে বিমানবন্দরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয় গালফ এয়ার। পরবর্তী সময়ে…

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিদেশগামী ১৮ জন এসেছিলেন। তবে ঠিক সময়ে আসলেও তাদের বিদেশে যাওয়া আর হয়নি।

কারণ হিসেবে জানা যায়, শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে গালফ এয়ারের ফ্লাইট ছেড়ে গেছে তাদের না নিয়েই। গালফ এয়ারের বোর্ডিং কার্ড নিতে গিয়ে ওই ১৮ জন জানতে পারেন, এজেন্সি তাদের যে টিকিট দিয়েছিল তা ভুয়া।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গালফ এয়ারের (জিএফ-২৫১) ফ্লাইটের বিদেশ যেতে বিমানবন্দরে আসলে ১৮ জন বিদেশগামী যাত্রীর কাছে জাল টিকিট পাওয়া যায়। বহির্গমন এলাকার রো-এ তে গালফ এয়ারলাইনসের চেকিং কাউন্টার থেকে বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ করতে গেলে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ তাদের টিকেটগুলো জাল হিসেবে শনাক্ত করে। যাত্রীরা এয়ারলাইনকে জানায়, বিভিন্ন দালাল ও এজেন্সির মাধ্যমে তারা টিকিট পেয়েছেন।

প্রথমে যাত্রীদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে বিমানবন্দরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয় গালফ এয়ার। পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে যাত্রীরা দালাল ও ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয় উঠে আসলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিদেশগামী যাত্রী মোসাম্মাৎ রিক্তা খানম, মোসাম্মাৎ শিউলি আক্তার, মোসাম্মাৎ সুমি বেগম ও রহিমা বেগম বিদেশ যাচ্ছিলেন দালাল শফিকুর রহমান সবুজের মাধ্যমে। সোনার বাংলা কৃষি খামার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে সে। প্রতিষ্ঠানটির অফিস রাজধানীর নয়া পল্টনে।

বিদেশগামী যাত্রী মোসাম্মাৎ সুমি বেগম বলেন, ‘দালাল শফিকুর রহমান সবুজের মাধ্যমে সৌদি আরবে যেতে ভিসা ও টিকিট করেছি। বিমানবন্দরে এসে জানতে পারলাম আমাদের টিকিট নাকি ভুয়া। বিমানবন্দর থেকে দালালকে ফোন দিলাম, সে কোনো সমাধান করতে পারলো না।’

এছাড়াও যাত্রী মো. আকাশ হোসেন, মো. সোলেমান ভূইয়া, মো. শাফিউল ইসলাম টিকিট নিয়েছিলেন দালাল ইলিয়াসের মাধ্যমে। যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানা এলাকায় পশ্চিমা গ্রামে তার বাড়ি। দালাল ইলিয়াস বনানী এলাকার রহমান ওভারসিজের হয়ে কাজ করতো।

গাইবান্ধার শাফিউল আলম গণমাধ্যমকে জানান, তিনি প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘৪ লাখ টাকা দিয়েছি সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য। শুক্রবার ভোরে বিমানবন্দরে এসেছি, কিন্তু এসে জানতে পারি যে, আমাদের যে টিকিট দেওয়া হয়েছে তা নাকি ভুয়া।’

তবে দালাল ইলিয়াস দুষছেন ট্রাভেল এজেন্সি রহমান ওভারসিজকে। তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমি রহমান ওভারসিজকে দিয়েছি। আমি নিজে তো টিকিট কাটিনি। এখন কেন সমস্যা হলো, তা আমি জানি না।’

যাত্রী আব্দুস ছামাদ ও সাইফ হোসাইন বিদেশ যাত্রার যাবতীয় কাজ করেছেন দালাল শেখ বজলু হকের মাধ্যমে। সে ইউসিকেএসইএল প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সির হয়ে কাজ করতো।

যাত্রী খাদিজা আক্তার সালমা, আয়েশা খাতুন ও সেলিনা বিদেশ যাত্রার যাবতীয় কাজ করেছেন দালাল মো. তারেক হায়দার সাইফুলের মাধ্যমে। এই দালাল নয়া পল্টনের রফিক অ্যান্ড সন্স ইন্টারন্যাশনাল নামের ট্রাভেল এজেন্সির হয়ে কাজ করে।

আর যাত্রী মো. আশরাফুল হক ও হাবিবুর রহমান বিদেশ যাচ্ছেন দালাল আল মামুনের মাধ্যমে। সে সাজেদুল ইন্টারন্যাশনাল নামের ট্রাভেল এজেন্সির হয়ে কাজ করে। বিদেশগামী যাত্রী মো. দেলোয়ার হোসেন ও শাকিল যাচ্ছিলেন দালাল ননী গোপালের মাধ্যমে। এই দালাল দিগন্ত ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের হয়ে কাজ করে।

এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে প্রতারিত যাত্রীদের আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো যাত্রী থানায় অভিযোগ দেননি বলে জানান পুলিশের বিমানবন্দর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তাপস কুমার দাস।

এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি গালফ এয়ার। তবে এয়ারলাইনটির এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমেরিকা থেকে অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এই ১৮ জন যাত্রীর টিকিট বুক করা হয়, কিন্তু কোনো পেমেন্ট করা হয়নি। এক প্রকার জালিয়াতির মাধ্যমে এয়ারলাইনকে ধোকা দিয়ে যাত্রীদের ফ্লাইটে পাঠানোর অপতৎপরতা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সিস্টেমে এই যাত্রীদের টিকিট কনফার্ম না হওয়ায় তাদের ফ্লাইটে নেওয়া যায়নি।’

দিনবদলবিডি/আরএজে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়