সেই ভাইরাল ভিডিও এবং শিশু শেখ রাসেলের ‘অপরাধ’!

সম্পাদকীয় আহ্‌সান কবীর || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সকাল ১১:১৭, মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২, ২ কার্তিক ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিনে তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই আমরা। সমগ্র বাঙালি জাতিকে এবং সমগ্র মানবজাতিকে আহ্বান জানাই…

সামাজিক মাধ্যমে অনেক ভিডিও ক্লিপই ভাইরাল হয়। তেমনি একটি ভাইরাল ভিডিওর কথা মনে হলেই আমার মনে পড়ে নির্মম-নির্দয়তম হত্যাকাণ্ডের শিকার মাত্র ১১ বছরের শিশু শেখ রাসেলের কথা।

উল্লেখিত ভিডিওতে দেখা যায়, গভীর জঙ্গলে একদল বেবুনের ওপর হামলা চালায় ক্ষুধার্ত এক চিতাবাঘ। তাড়া খেয়ে সব বেবুন চোখের পলকে পাশের গাছ-গাছলায় আত্মরক্ষা করে। কিন্তু অন্তঃস্বস্ত্বা একটি বেবুন ঠিকসময় পালাতে পারে না। কিঞ্চিৎ ভাড়ী শরীরের কারণে সে অন্যদের মতো দ্রুতলয়ে লাফিয়ে গাছে উঠতে ব্যর্থ হয়।

ফাইল ফটো

চোখের সামনে মৃত্যুদূত সামনে এসে  গর্ভবতী বেবুনটিকে হত্যা করে। গাছে উঠতে পারদর্শী চিতাবাঘ তার সদ্য শিকার করা মৃত বেবুনটিকে নিয়ে একটি গাছে উঠতে থাকে নিরাপদে বসেেআহার করার জন্য।

এসময় ঘটে এক অচিন্তনীয় অদ্ভূত ঘটনা। ওই পরিস্থিতিতেই মৃত বেবুনটির পেট থেকে প্রসব হয় একটি শিশু। চিতাবাঘের হানার পর কয়েক সেকেন্ডে ঘটে যায় এমন ঘটনা।

ওদিকে ঘটনার স্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তখনো বিস্ফোরক অবস্থায় রয়েছে পরবর্তী অংকের জন্য। মরা বেবুনকে নিয়ে গাছ বাইতে থাকা চিতাটি টের পায় পেছনের নড়াচড়া। অর্থাৎ বাচ্চাটির নড়াচড়া সে খেয়াল করে। শিকার ও শিকার নিয়ে গাছে ওঠার পরিশ্রমে হাঁপাতে থাকা চিতাবাঘের খোলা মুখ থেকে লক লক করছে লালচে গোলাপি জিব আর তার তা থেকে গড়িয়ে পড়ছে লালা।

বিস্ফারিত চোখে হিংস্র চিতা তাকিয়ে দেখে সদ্যপ্রসূত বেবুন শাবকটির দিকে। প্রথমদিকে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাব দেখা যায় তার মাঝে। কিন্তু তারপরই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে- বনচাপরী হিংস্র পশু হলেও তার আচার আচরণে বিষয় সবই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল।

ফাইল ফটো

ততক্ষণে শিশুটি গাছের গোড়ায় গড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে বসে থেকে চরম বিস্ময় নিয়ে সদ্য পাওয়া দৃষ্টিতে দেখছিল আশপাশের দুনিয়া আর ওই চিতাবাঘটিকে। তার মায়ের ঘাতক হিংস্র প্রাণিটি তখন গাছের ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। এরপর বেবুন শাবকটিকে তার শরীর দিয়ে ঘিরে অনেকটা প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করে শুয়ে পড়ে। ভুলে যায় তার সদ্য শিকার করা আহার মৃত বেবুনটির কথা। পাশেই শিকার-চোরা (অন্যের করা শিকার চুরি করে নিয়ে যায় যেসব পশু) হায়েনা উঁকি-ঝুকি মারছিল।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকেরই মনে হচ্ছিল যেকোনো সময় এবার মাত্র কয়েক সেকেন্ড আয়ূর শাবকটিকে হত্যা করতে পারে যমদূত শ্বাপদ। কিন্তু এখানে অপেক্ষা করছিল মানবচক্ষুকে হতবিহ্বল করে দেওয়ার মতো অনন্য অসাধারণ এক ‘মানবিক আচরণ’- যা একটি রক্তলোলূপ ক্ষুধার্ত স্বাপদের পক্ষে ঘটানো প্রায় অচিন্তনীয়।

জুম লেন্সে ধারণ করা ওই ভিডিওতে এরপর দেখা যায়- চিতাবাঘটির ‘অদ্ভূত’ সেই ‘মানবিক আচরণ’। সে বেবুন শিশুটিকে পরম যত্নে নিজের মুখ ও থাবা দিয়ে টেনে তুলে দিতে থাকে গাছের ওপরের দিকে। কারণ সে জানে, সে সরে যেতেই পাশে থাকা ‘পশুকূলেও ছোটোলোক শ্রেণির’ হায়েনাগুলো এই বেবুন শিশুটিকে রেহাই দিবে না।

ঠিক মায়ের যত্নে চিতাবাঘটি সদ্যপ্রসূত বেবুন শিশুটিকে ঘাড়ে আলগোছে কামড় দিয়ে ধরে গাছের কাণ্ড বেয়ে অনেকটা ওপরে উঠে যেতে থাকে। কখনো নিজের সদ্যোজাত শাবককে যেমন পশুরা জিব দিয়ে লেহন করে পরিষ্কার দেয় পরম যত্মে- চিতাবাঘটি তা-ও করতে থাকে। কখনো কখনো মনে হচ্ছিল বাঘটি আসলে বুঝতে পারছিল না শাবকটিকে নিয়ে আসলে সে কী করবে। তবে প্রতিবারই সে ঠিক গর্ভধারিনী মায়ের যত্নেই শিশুটির প্রতি আচরণ করছিল।

ফাইল ফটো

ওদিকে হায়েনাও অপেক্ষায় সুবর্ণ সুযোগের জন্য। কিন্তু এপর্যায়ে বাঘটি গাছের ওপর থেকে হুঙ্কার দিয়ে শাসানি দেয় হায়েনাকে। চিতাবাঘ শিকার চুরি যাওয়ার ঝুঁকি ভুলে তার হাতে নিহত বেবুনের শাবকটির নিরাপত্তায় মরিয়া হয়ে ওঠে। সে শিশুটিকে নিরাপদ উচ্চতায় তুলে নিয়ে আদর যত্ন করতে থাকে মায়ের মমতায়। ভিডিও সেখানেই শেষ। কিন্তু দর্শকের মনে এ দৃশ্য দেখার অভূতপূর্ব স্বর্গীয় আনন্দ শেষ হয় না। এক দুনিয়াভরপুর আনন্দমাখা মহিমাময় সেই দৃশ্য... প্রায় এক দশক আগে ভিডিওতে দেখা সেই দৃশ্য এখনো স্মৃতিপটে জাগরুক (যারা দেখেননি তাদের জন্য এর ভিডিও লিঙ্ক নিচে দেয়া হলো)।

আপনারা অনেকেই হয়তো এই ভিডিও দেখেছেন পরম বিস্ময় নিয়ে। তবে আমি যখন এই দৃশ্য দেখি তখন চরম বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় ১৫ আগস্টের কালরাতে শহীদ হওয়া মাত্র ১১ বছর বয়সী শিশু রাসেলের কথা। শেখ রাসেল তো তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য করুণ মিনতি করেছিল পাষণ্ড ঘাতক-সীমার দলের কাছে। কিন্তু তাদের মনে তিলমাত্র রহম হয়নি, হয়নি মানবিক করুণার উদ্রেক। জানি না বেবুন শিশুটি কি ক্ষুধার্ত চিতাবাঘটিকে পশুর ভাষায় বলেছিল কি না- আমাকে হত্যা করো না! 

চরম হিংস্র স্বভাবের স্বাপদ চিতাবাঘটি কিন্তু বেবুন শিশুটির না বলা কথার বাস্তবায়ন করেছিল পরম বিশ্বস্ততার সঙ্গে। এই দায়িত্ব যেন সমস্ত সৃষ্টিজগতের পক্ষে সে পালন করেছিল।

এর বিপরীতে রাতের গভীরে বিভীষিকাময় গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে ইতিহাসের ভয়াবহতম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে দেখা শিশু রাসেলকে যখন ঘাতকদল পাকড়াও করে তখন সে ক্রন্দরত অবস্থায় মমতাময়ী মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল। আকস্মিক গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যাওয়া বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চরম আতঙ্ক আর বিস্ময় নিয়ে দেখেন নিজেদের বাড়ির ভেতরে নড়ক থেকে আসা পিশাচদলের তাণ্ডব।

তিনি মুহূর্তেই যা বোঝার বুঝে নেন। অন্তত আদরের দুলাল ছোট্ট রাসেলকে রক্ষা করতে হবে! তাই বাড়ির একজন কাজের লোকের সঙ্গে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে তাকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু গেট দিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা ঘাতক দলের খপ্পরে ঠিকই পড়ে যায় পিতার ন্যায় সাধারণ মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারী শিশু রাসেল।

এসময় বাড়ির ভেতরে মুহুর্মুহু বুলেটের শব্দ আর স্বজনদের আর্তচিত্কার শুনে অবুঝ শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘাতকদের বলেছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাব।’ ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম নেওয়া এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাসেলকে তখন ঘাতকরা ওপরে নিয়ে বুলেটে বিদীর্ণ বাবা-মা-ভাই ও ভাবীদের রক্তাক্ত লাশ দেখিয়ে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে।

মাত্র কয়েক মিনিটের ওই পাথর সময়ে চোখের সামনে মমতাময়ী মা, বাবা ও ভাই-ভাবীদের ক্ষতবিক্ষত রক্তাত্ত মরদেহ দেখে মায়াভরা চোখের শিশুটি এবার কাতর কণ্ঠে বলে- আমাকে আমার হাসু আপার (ওই সময়ে জার্মানিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন।

কিন্তু জীবজগতের সমস্ত ইতর ও হিংস্র প্রাণিকে লজ্জায় ডুবানো বিপথগামী ঘাতকদল সৃষ্টির সেরা মানবজাতির মুখে যেন অমোচনীয় কলঙ্কতিলক এঁকে দেয় এবারো। সেই প্রকৃতিগতভাবে হিংস্র, অভুক্ত আর রক্তলোলুপ চিতাবাঘটি এদের আচরণ দেখলে লজ্জায় অধোবদন হতো নিশ্চিত। ‘প্রভূভক্ত সারমেয়কূল’ এবার অয়্যারলেসে যোগাযোগ করে তাদের নির্দেশদাতা বসদের সঙ্গে এবং সেখান থেকে পাওয়া হুকুম মোতাবেক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বার্স্ট ফায়ারে হত্যা করে ‘যে কেউ দেখলেই কোলে তুলে নেওয়ার মতো মায়াভরা চোখমুখের’ শিশু রাসেলকে।

অমন কচি শিশুটির শরীরকেও তারা ছিন্নভিন্ন করে দেয় নির্দয় বুলেটে- নিথর পড়ে থাকে সদা হাসিখুশি, উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত শিশু রাসেল যার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সেনা কর্মকর্তা হয়ে দেশকে সেবা করার।

বেঁচে থাকলে শেখ রাসেল আজ তার ৫৯তম জন্মদিন উদযাপন করতেন। তার বড় বোন, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে বলেছেন, রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে তা হলো- হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্ত মুখ। যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথাভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব, যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা। এই কোমলমতি শিশু রাসেলকে আমরা হারিয়েছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ইতিহাসের এক নির্মম, জঘন্য ও বিভীষিকাময় রাতে। সেই রাতের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত এখনো গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করি। রাসেল যদি বেঁচে থাকত, তাহলে আজ হয়তো মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ এক নেতা আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত।

ফাইল ফটো

শেখ রাসেল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনুমান নিছক অতিশয়োক্তি নয়। তার কথার প্রমাণ আমরা পাবো একটি ঘটনায়।

তখন শীতের মৌসুম চলছিল। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশের বাড়িতেও রাসেল নামে আর একটি শিশু থাকতো। শেখ রাসেলের খেলার সঙ্গী ছিল প্রতিবেশী শিশুটি। একদিন এক বৃদ্ধা ভিখারি প্রতিবেশী রাসেলদের দূয়ারে কড়া নাড়ে ভিক্ষার জন্য। এসময় ভেতর থেকে বলা হয়, ভিক্ষা নয়, বাড়ির কাজ করে দিলে তাকে এক টাকা দেয়া হবে। দশ-বিশ পয়সা ভিক্ষা নয়, রীতিমতো নগদ এক টাকা! বুড়িটি রাজি হন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর তাকে মাত্র একটি সিকি (২৫ পয়সা) প্রদান করা হয়। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ বৃদ্ধা কান্নাকাটি করতে করতে ওই বাড়িটি থেকে বের হয়ে আসেন।

ঘটনাটি বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ রাসেলকে গভীরভাবে আবেগতাড়িত করে। মনে জেগে ওঠা কষ্ট চেপে রাসেল সেই বুড়িমাকে ডেকে এনে নিজেদের বাড়ির গেটের সামনে বসিয়ে রাখে। বৃদ্ধা ভিখারিকে রাসেল এই বলে আশ্বাস দেয় যে তার আব্বা (বঙ্গবন্ধু) বাড়ি ফিরলে তাঁর সঙ্গে বুড়িমার কথা বলিয়ে দিবেন। তিনি বিচার করে দেবেন।

এদিকে, দুপুর হয়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে বৃদ্ধাকে খাবার দেয়া হয়। সময় গড়াতে থাকে দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে, বাড়তে থাকে শীত। বুড়িমার তখন জুবুথুবু অবস্থা। তাকে তাড়াতাড়ি বিদেয় করা দরকার। কিন্তু শেখ রাসেলের এক কথা- ‘আব্বা আসলে বিচার হবে। তারপর বুড়িমা যাবেন।’

বুড়িমার জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিতে জেদ ধরে থাকা রাসেলকে তখন প্রস্তাব দেয়া হয়, ওই নারীকে যদি রাতের খাবার এবং আরো বেশি কিছু টাকা দেয়া হয়, তাহলে তখনকার মতো ছেড়ে দেয়া যাবে কিনা!

এবার শেখ সাহেবের শিশুপুত্র কিছুটা নমনীয় হয়। ‘বেশি টাকা দেয়া হবে’ এবং এতে বুড়িমার উপকার হবে এমন বিবেচনায় প্রস্তাবে রাজি হয় সে বুড়িকে ছেড়ে দিতে। তবে, আব্বা আসলে বুড়ি ভিখারিনির বিরুদ্ধে অমন অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে বিচার চাওয়া হবে বলেও জানান দিয়ে রাখে সে।

(জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠসন্তান শেখ রাসেল সম্পর্কিত উল্লেখিত ঘটনার বয়ান দিয়েছেন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাসরত রাসেলের সাবেক গৃহশিক্ষক গীতালি চক্রবর্ত্তী (দাসগুপ্তা)। ১৯৭২-এর আগস্ট থেকে ১৯৭৫এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত রাসেলের গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনি)।

প্রসঙ্গত, যারা নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে তারা তখন আর মানুষ থাকে না। হয়ে যায় বিবেকহীন পশু, অসভ্য জংলি জানোয়ার। তাবৎ পৃথিবীর মানুষ তাদেরকে ধিক্কার জানায়। পৃথিবীর কোনো ধর্মে বা সমাজে নিরপরাধ মানুষ হত্যার কোনো বিধান বা অনুমোদন নেই। এক্ষেত্রে ইসলামে সবচে কঠিন ঘোষণা হচ্ছে-

أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعً

অর্থাৎ: ‘যে (একজন) নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করল সে যেন পুরো পৃথিবীকে হত্যা করল, আর যে একজন (নিরাপরাধ) মানুষকে বাঁচিয়ে দিল সে যেন পুরো পৃথিবীকে হত্যার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত নম্বর ৩২)

আর হাদিসে এসেছে-

أن النبي صلى الله عليه و سلم قال لزوال الدنيا أهون على الله من قتل رجل مسلم

অর্থাৎ: ‘আল্লাহ দুনিয়া ধ্বংস হওয়া সয়ে যাবেন, তবে একজন নিরাপরাধ মুসলমান হত্যা সহ্য করবেন না।’ (তিরমিযি হাদিস নম্বর ১৩৯৫)

এখন চিন্তা করে দেখুন, সেই নিরপরাধ মানুষটি যদি হয় একটি শিশু? আমরা নিশ্চিত, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এবং পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ানো কুশিলবদের কেউ-ই আসলে শান্তিতে ছিল না, থাকেনি এবং ভবিষ্যতেও (মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তীতে) শান্তিতে থাকতে পারে না। কারণ, পবিত্র কোরানের ঘোষণা সেই ইঙ্গিতই দেয়। কিছু কুলাঙ্গার ব্যতীত সমগ্র বাঙালি জাতি, সমগ্র মানবজাতি, সমগ্র সৃষ্টি জগৎ তাদের অভিসম্পাত করবে যারা বঙ্গবন্ধুর মতো ইতিহাস শ্রেষ্ঠ বাঙালিকেই শুধু নয়, তার পরিবারের প্রায় সবাইকে এমনকি নিষ্পাপতুল্য নিরপরাধ শিশু রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছে। দুনিয়ার সকল ঘাতকদের আত্মা অনন্ত নরকের বাসিন্দা হোক।

ফাইল ফটো

আসুন, যার ঘরে রাসেলের মতো শিশু সন্তান রয়েছে, রয়েছে ছোট ভাই, ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগিনা-ভাগিনী তারা সবাই অভিসম্পাত দেই ঘৃণ্য সেই ঘাতকদের যারা হত্যা করে নিরপরাধ মানুষকে, নিষ্পাপ শিশুদেরকে। সপ্ত নরক হোক তাদের স্থায়ী আবাস। তিরমিযির বর্ণনা মোতাবেক- দুনিয়া ধ্বংস করার চেয়েও বড় অপরাধের অপরাধী (নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা) ওইসব নরপশুকে যেন সৃষ্টিকর্তা কখনোই ক্ষমা না করেন। কারণ, পরম করুণার আধার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কিন্তু নিরীহ মানুষদের হত্যাকারী ঘাতকদের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ গ্রহণকারীও (কাহ্হার)।

শেখ রাসেলের ৫৯ তম জন্মদিনে তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই আমরা। সমগ্র বাঙালি জাতিকে এবং সমগ্র মানবজাতিকে আহ্বান জানাই শিশুর প্রতি আরো যত্নশীল হতে, আরো সদয় হতে। যুদ্ধ আর অশান্তির তাপে তাপিত আজকের এই বসুন্ধরায় কোনো শিশুকেই যেন শেখ রাসেলের মতো ভয়াবহ জিঘাংসাধারী শত্রুর মুখে পড়তে না হয় আর। রক্ত আর হত্যার নেশায় বুঁদ কোনো পিশাচের হাত যেন আর ছুঁতে না পারে কোনো নিষ্পাপ-নিরপরাধ শিশুকে। শিশু শেখ রাসেলের (যার ‘অপরাধ’ ছিল শুধুমাত্র হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির সন্তান হওয়া) আত্মা পরম শান্তির জগতে অবগাহন করুক।

দেখুন >>> ভিডিও

দিনবদলবিডি/আরএজে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়