কম্পিউটার-এইডেড ড্রাগ-ডিজাইন অ্যান্ড ডিসকভারি কর্মশালা

দিনবদলবিডি ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:৫৫, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অংশগ্রহণকারীগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যথেষ্ট আগ্রহ ও কৌতুহলী হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন এবং ওয়ার্কশপ সম্পর্কে তাদের…

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ৭ দিন ব্যাপি কম্পিউটার-এইডেড ড্রাগ-ডিজাইন অ্যান্ড ডিসকভারি বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা। বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত যুগোপযোগী আন্তর্জাতিক গবেষণা কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটির আয়োজন করে হেলথ মেড সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্ক।

‘মলিকুলার ডকিং,  ডাইনামিক্স, কম্পিউটার এইডেড ড্রাগ ডিজাইন অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিক্স’ শিরোনামে ৭ দিন ব্যাপি কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণটি ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু করে ২৪ নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত অনলাইন জুম প্ল্যাটফর্ম এবং  হ্যান্ডস-অন-ট্রেনিং সেশন উভয় মাধ্যমে  পরিচালিত হয়।

গত ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, লালমাটিয়া, ঢাকা -এর সেমিনার হলে দিনব্যাপী হ্যান্ডস-অন-প্রশিক্ষণ সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

কম্পিউটার-এইডেড ড্রাগ ডিজাইন, কম্পিউটেশনাল কেমিষ্ট্রি ও বায়োইনফরমেটিক্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তিনজন বিজ্ঞানী ও প্রশিক্ষক  অজয় কুমার (সিনিয়র লেকচারার, রসায়ন বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ), ড. শাবানা বিবি (সহকারী অধ্যাপক, বায়োসায়েন্সেস বিভাগ, শিফা তামির-ই-মিল্লাত বিশ্ববিদ্যালয়, পাকিস্তান) এবং আব্দুস সামাদ (প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র গবেষক, কম্পিউটেশনাল বায়োলজি ল্যাবরেটরি, বায়োসোল সেন্টার, বাংলাদেশ) কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

কর্মশালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ড্রাগ ডিজাইনের বেসিক লেভেল থেকে শুরু করে এডভান্সড লেভেল পর্যন্ত শিক্ষাদান এবং হ্যান্ডস অন ট্রেনিং- যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কম্পিউটারের বায়োলজিক্যাল ডাটাবেইজ ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে কীভাবে একটি নতুন ওষুধের অণু বাছাই করা  যায়, কীভাবে  এই অণুটিকে সম্ভাব্য ওষুধ হিসেবে ডিজাইন করা যায়, শরীরের ভেতরে ওষুধটির সম্ভাব্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া,  প্রোটিন তথা রিসিপটরের সাথে নতুন ড্রাগটির সম্ভাব্য বাইন্ডিং এফিনিটি, শরীরের ভেতরে তার স্থায়ীত্ব, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া, শরীরের ভেতর থেকে কতক্ষণ বা কতদিন পর ওষুধটি সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে যাবে, এবং নতুন ওষুধ হিসেবে তার কার্যকারিতার মাত্রা- ইত্যাদি নানান বিষয়ে তাত্ত্বিক  জ্ঞ্যান ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি, খুলনা ইউনিভার্সিটি, যশোর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ ব্যাবিলন (ইরাক), এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (পাকিস্তান) এর বেশ কয়েকজন গবেষক, ফ্যাকাল্টি মেম্বার এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যেকটি অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিগত একটি করে ল্যাপটপ ব্যাবহার করে প্রশিক্ষকের সাথে অনুশীলন করেন।

অংশগ্রহণকারীগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যথেষ্ট আগ্রহ ও কৌতুহলী হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন এবং ওয়ার্কশপ সম্পর্কে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অফ ব্যাবিলন (ইরাক) এর প্রফেসর.  ড. হোসাইন বলেন, ‘মূল্যবান তথ্য ও নিরন্তর সহযোগিতার জন্য আমি কর্মশালার আয়োজক হেলথ মেড সাইন্স রিসার্চ নেটওয়ার্ক এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মোকলেছুর রহমান সরকার এবং কর্মশালার প্রশিক্ষক অজয় কুমার, ড. শাবানা বিবি, জনাব আব্দুস সামাদ এবং স্বপ্নিল আকাশকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আমি এই কর্মশালা থেকে যথেষ্ট উপকৃত হয়েছি এবং অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’

সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. জাকেরুল আবেদীন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শাহ আমরান।

ড. জাকেরুল আবেদীন এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজনের জন্য হেলথ মেড সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আরো উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকার গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে সবসময়  উৎসাহিত করে। অধ্যাপক ড. শাহ আমরান তার বক্তৃতায় অংশগ্রহণকারীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জনের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টার জন্য অনুপ্রাণিত করেন ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি হেলথ মেড সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর  ড. মোকলেছুর রহমান সরকার বলেন, ভারত, চীন, হংকং, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে গবেষণালব্ধ পরিপূরক ও বিকল্প ওষুধ যেমন নিউট্রাসিউটিক্যালস এবং হার্বাল ওষুধের অনুমোদনের নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং সুবিধাজনক। কিন্তু বাংলাদেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এর রেগুলেটরি প্রক্রিয়া নতুন গবেষণা পণ্য (নিউট্রাসিউটিক্যালস বা হার্বাল  ফর্মুলেশন) অনুমোদনের অনুমতি দেয় না, যদি না সেগুলো আমেরিকা, ইউরোপসহ উন্নত দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ভারত ও চীন কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য গবেষণার ভিত্তিতে শত শত প্রাকৃতিক ওষুধ পেটেণ্ট করেছে এবং অনুমোদন দিয়েছে এবং সেগুলো জনগণ ব্যবহার করছে কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের চিকিৎসার জন্য একটিও পণ্য অনুমোদন করা হয়নি বা অনুমোদনের রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এটা গবেষকদের জন্য এবং জাতির জন্যও খুবই হতাশাজনক।

তিনি আরো বলেন, ভারত ও চীনের নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশেও গবেষনালব্ধ নতুন বিকল্প ওষুধের অনুমোদনের নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করে গবেষণা লব্ধ গুরুত্বপূর্ণ হারবাল ওষুধের নতুন ফর্মুলা অনুমোদন দিলে দেশ উপকৃত হবে, গবেষকরা উৎসাহিত হবে।

দিনবদলবিডি/আরএজে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়