ফুটবল না কার্ডের বন্যা! কারা নাচায় ফিফার এইসব ‘রেফারিদের’!

গাজী আতাউর রহমান || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৩৯, শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পরিচালনা করতে নামা ম্যাচ রেফারি মাতেও লাহোজে মাত্র একটি কার্ডেই অনেক খেলা দেখিয়েছেন যেন। এই স্পেনিশ ‘বুলফাইটার রেফারি’ রেকর্ড ১৯ বার হলুদ দেখিয়েছেন…

বাহান্ন কার্ডের তিপ্পান্ন খেলা। তাসের টেবিলে এই কথা হরহামেশা বলে থাকেন তাস-খেলুড়েরা। কিন্তু লাল-কার্ড আর হলুদ কার্ড- মাত্র এই দুটি কার্ড পকেটে করে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পরিচালনা করতে নামা ম্যাচ রেফারি মাতেও লাহোজে মাত্র একটি কার্ডেই অনেক খেলা দেখিয়েছেন যেন। এই স্পেনিশ ‘বুলফাইটার রেফারি’ রেকর্ড ১৯ বার হলুদ দেখিয়েছেন।

এছাড়া তার খেলা পরিচালনার মানও ছিল বাজে ধরনের, পক্ষপাতদুষ্ট এবং প্রায়ই খাপছাড়া। এই অভিযোগ গতকাল আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডও ম্যাচ দেখা প্রত্যেকটি দর্শকের। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল তিনি বুঝি আর্জেন্টিনাকে হারাতে বাজিগরদের অদৃশ্য সুতোয় মাঠে নর্তন-কুর্দন করছেন। কারণ বাজি ও জুয়ার বাজারে ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনার হারও বাজিকরদের ব্যাংক ব্যালেন্সে ডলারের ঢল নামাতে পারে। এই অপ্রিয় কথাগুলো স্পেনিশ রেফারির বিদঘুটে উদ্ভট আচার-আচরণে পূর্ণ খামখেয়ালিপনা খেলার দর্শকরদের। তার নেদারল্যান্ডডেসর দিকে নির্লজ্জ কান্নি খাওয়াটাকে ব্যালেন্স করতে গিয়ে অবশ্য মাঝে মধ্যে তিনি আর্জেন্টির পক্ষেও কিছু অন্যায়ের নমুনা দেখিয়েছেন। তবে তিনি সতর্ক ছিলেন এতে যাতে নেদারল্যান্ডসের কোনো ধরনের বিপদ না হয়। কারণ তাহলে হয়তো ফিফার মুখোশধারী বাজিকরদের কোপে পড়তে হবে তাকে বা তার ভাগের হালুয়া বাদ পড়ে যেতে পারে।

ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েমন (ফিফা)-এর অধীনে চলা প্রতিটি বিশ্বকাপের বেশকিছু খেলার রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এরমধ্যে অন্যতম বা প্রধানতম ছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা-জার্মানির খেলা। ওই ম্যাচে মেক্সিকান দাঁতের ডাক্তার কাম রেফারি কোদেসালের অনাচারপূর্ণ খেলা পরিচালনা দেখেছে পুরো বিশ্ব। সেদিন আর্জেন্টিনার হাতে প্রায় চলে আসা বিশ্বকাপ ছিনিয়ে তিনি যেন ধরিয়ে দিয়েছিলেন জার্মানির হাতে।

মাত্র আগের বিশ্বকাপ (১৯৮৬) জয় করা ম্যারাডোনার নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা তখন তুমুল ফর্মে। ওই সময়কার বিশ্ব ফুটবলে খেলার গতিধারা, পারফর্মেরন্স, সমর্থণ ও অন্যান্য বিবেচনায় বোঝা কষ্টকর ছিল না যে ম্যারাডোনার মতো ক্ষণজন্মা যাদুকরি প্রতিভার কারিশমায় ৮৬ এর পর ৯০ এবং এমনকি ৯০ এর পর ৯৪ বিশ্বকাপও আর্জেন্টিানারই ঘরে থাকবে। কিন্তু রেফারিদের মাঝে সদাচার, নিরপেক্ষতা ও পেশাদরিত্ব গড়ায় চরমভাবে ব্যর্থ এবং অনেক ক্ষেত্রেই অথর্ব ফিফা ছোটখাটো টুংটাং পদক্ষেপ ছাড়া হরদম থেকেছে উদাস। আর তাই অনাচার জারিই রয়েছে।

অনেকেরই মতে ৯০ এর বিশ্বকাপে রেফারিং এবং বিশ্ব ফুটবলের হর্তকর্তাদের চরম অনৈতিকতা ও অনাচারের প্রতি নীরব সমর্থনই ম্যারাডোনার মতো কালজয়ী প্রতিভাকে হতাশা আর অভিমানে মাদকমুখী করে তুলেছিল। যার অবশম্ভাবী পরিণতি ছিল ৯৪ বিশ্বকাপে মাদককাণ্ডে ম্যারাডোনা-ক্যনিজিয়ার মুখ কালো হওয়ার ঘটনা এবং কোয়ার্টার থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়। কিন্তু কেন ফিফার এমন প্রতিকারহীন উদাসীনতা। নির্দোষ খেলাধূলার আবরণে চার বছর পর পর এই পৃথিবীর সবুজ গালিচায় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ আয়োজনকারী ফিফার এমন উদাসীনতার পেছনে রয়েছে মহশক্তিধর বাজিকরচক্র যাদের ইশারা-ইঙ্গিতে ফিফার অনেক কর্মকর্তা নাচেন-কুঁদেন- এই অভিযোগ আপমর সাধারণ ফুটচবলপ্রেমি দর্শকের।      

আসুন এবার গতকালের খেলার কিছু মুহূর্ত বিশ্লেষণ করা যাক- 

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিনগত গভীর রাতে (শনিবার) কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল চলছিল। তবে ম্যাচ রেফারি মাতেও লাহোজের কার্ড দেখানোর সংখ্যা আর ধরন ধীরে ধীরে পাগলামির পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে থাকে। অনেকেরই মনে হচ্ছিল যেন মাঠে আসলেই কি ফুটবল খেলা চলছে নাকি অন্যকিছু। কোনো মস্তিষ্ক বিকৃত পাপেট মাস্টার বাইশজন খেলোয়াড় এবং মাঠের পাশে থাকা সাইডলাইনের কিছু খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাকে নিয়ে জাগলিং করছেন। অথচ নিয়ম এবং বিধির নিগড়ে জড়ানো ব্যবস্থার কারণে তাকে থামানো বা দমানোর কোনো সুযোগই কারো হাতে নেই। এমনকি খেলা চলাকালে তার সঙ্গে দরকারি কথা বলতে গিয়েও (তার অমন খামখেয়ালিপূর্ণ খেলা পরিচালনা বিষয়ে সম্ভবত) হলুদ কার্ড দেখতে হয়েছে বিনয়ী এবং শান্ত স্বভাবের জন্য খ্যাত বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মেধাবী খেলোয়াড় আর্জেন্টাইন ক্যাপ্টেন লিওনেল মেসিকে।

এদিন রাতে স্প্যানিশ রেফারি লাহোজ যে হারে মুড়ি-মুড়কির মতো কার্ড দেখাচ্ছিলেন তাতে যেন মনে হচ্ছিলো মাঠে ফুটবল বাদে অন্যকিছু চলছিলো। কমেন্টেটররাও অবাক মানছিলেন। কিন্তু ফিফার এই ক্ষেত্রে কিছু করার আছে কি না বা ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতেও এমন চলতে থাকলে এর বিহিত কিছু করা যায় বা যাবে কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্তের সময় এখন উপনীত বলে মনে হচ্ছে।