শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি ও বড়দের দায়িত্বশীলতা

দিনবদলবিডি ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:৩০, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

নিজের সন্তানের মোবাইল ফোনে আসক্তি নিয়ে অভিযোগ প্রায় প্রতিটি মা-বাবাই করে থাকেন। কিন্তু আমরা প্রত্যেক মা-বাবা…

নিঃসন্দেহে ডিজিটাল প্রযুক্তি তথা মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ- এসব ডিভাইস সৃজনশীল এবং সুবিধাজনক। কিন্তু শিশুদের জন্য এটি বেশ বিপদজনক। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অর্থাৎ অত্যধিক স্ক্রিন টাইম শৈশবের সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের ওপর ভীষণ রকম ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব ফেলে।

উরোপক্ত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে আমরা প্রায়ই কথা বলি। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা কিংবা টিভি চ্যানেলে চোখ রাখলে দেখতে পাই, শিশুদের ফোনে আসক্তি দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। সব সময় আমরা শিশু আর ছোটদের নিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত, কিন্তু আমরা কি কখনো লক্ষ করেছি বড়দের কী অবস্থা?

আমি ছোট বেলায় দেখতাম মা-বাবা, দাদা-দাদি কিংবা আত্মীয়স্বজন এক জায়গায় বসে গল্প আর আনন্দে মেতে উঠতেন। কিন্তু এই ব্যাপারগুলো এখন বর্তমান সময়ে আমাদের কাছে রূপকথার গল্পের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবতা হলো, পরিবারের গুটি কয়েক জন এখনো একই রুমে বসে আছে সবাই, কিন্তু সবার হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। কেউ মোবাইল ফোনের সোশ্যাল সাইটে ব্যস্ত, কেউ নানা রকমের গেমে আসক্ত। আবার কেউ গান শুনছে, নাটক, মুভি দেখছে ইউটিউবে। তাহলে পরিবারের বড়দের মোবাইল ফোনে এমন আসক্তি দেখে ছোটদের আকর্ষণ জন্মানোটা কি স্বাভাবিক নয়?

আমরা প্রায়ই একটা কথা বলে থাকি, এক জন শিশুর প্রাথমিক শিক্ষক হলেন তার বাবা-মা। তাহলে আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা যদি মোবাইল ফোনের প্রতি এমন আসক্ত থাকেন, সন্তানেরা তো তা-ই শিখবে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, শিশুদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি জন্মানোর প্রথম ধাপই হলো তাদের কাছের মানুষ।

২০১৯ সালের মে মাসে ‘আর ইওর প্যারেন্টস অ্যাডিক্টেড টু ফোনস’ শিরোনামে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক একটি সংস্থা ১ হাজার মা-বাবা ও তাদের সন্তানের ওপর একটি গবেষণা চালান। এতে উল্লেখ করা হয়, যেখানে প্রতি ১০ জন মা-বাবার মধ্যে ছয় জনই মনে করেন, তাদের সন্তান মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত, সেখানে প্রতি ১০ জন সন্তানের মধ্যে চার জন মনে করে যে, তাদের মা-বাবা মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত। তাছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৩৮ শতাংশ কিশোর মনে করে, তাদের মা-বাবা মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত।

পরিবারের শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের আসক্তি নিয়ে সোচ্চার পরিবারের বড়রা। পরিবারের শিশুদের মোবাইল ফোনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি নিয়ে আলোচনা হয় বিস্তর। নিজের সন্তানের মোবাইল ফোনে আসক্তি নিয়ে অভিযোগ প্রায় প্রতিটি মা-বাবাই করে থাকেন। কিন্তু আমরা প্রত্যেক মা-বাবা ভুলতে বসেছি, কল্পনার জগৎ থেকে নেমে আসতে হবে আমাদের বাস্তবের ধুলো-কাদার পৃথিবীতে। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে নয়, হাতে ছুঁয়ে স্পর্শ করতে হবে পাপড়ি মেলে ধরা সত্যিকারের ফুল। ভবিষ্যৎ বেড়ে ওঠা প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে আমরা কী নির্দয়ভাবে নিজেদের সঁপে দিয়েছি মোবাইল ফোনের হাতে। কিন্তু এই পরিণতির জন্য দায়ী প্রজন্মটি নিয়ে কেউ কথা বলি না! অথচ পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ এই সময়ে খুবই জরুরি।

আসুন, আমরা বড়রা নিজেরা আগে নিজেদের সু-অভ্যাসগুলোর দিকে ফিরে তাকাই। নিজেরা দায়িত্বশীল বা পরিবর্তন হলেই না জন্ম নেবে দায়িত্বশীলতার বার্তা ছড়ানোর অধিকার। আমরা সচেতন হই।

দিনবদলবিডি/আরএজে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়