অভিনেত্রীর সিগারেটের আগুনে শুটিং হাউজে বিস্ফোরণ?

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৩৪, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১৮ মাঘ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

অভিনেত্রী আঁখির স্বামী রাহাত কবির টেলিফোনে  জানান, আঁখি তাকে জানিয়েছেন যে চুল আয়রন করার জন্য সকেটে হেয়ার স্ট্রেইটনার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে বৈদ্যুত্যিক গোলযোগের আলামত মেলেনি। সেখানে হেয়ার স্ট্রেইটনারও পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর পল্লবীতে শনিবার দুপুরে একটি শুটিং হাউজে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি দগ্ধ হন। এতে অভিনেত্রীর শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পর অভিনেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শুটিং হাউজের ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুত্যিক সংযোগের শর্ট সার্কিট থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ জানিয়েছে, বাথরুমে জমে থাকা কোনো ধরনের গ্যাসের সংস্পর্শে সিগারেটের আগুন থেকে এই বিষ্ফোরণ। ঘটনাস্থলে কোনো বৈদ্যুত্যিক শর্ট সার্কিটের আলামত পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন, একাধিক ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং নানা আলামত বিশ্লেষণ করা হয়। তাতে পুলিশের ধারণার যথার্থতার প্রমাণ মিলেছে।

মিরপুরের পল্লবী এলাকার শুটিং হাউজটির তৃতীয় তলার ভাড়া করা ফ্লোরে চলছিল একটি টেলিফিল্মের শুটিং। প্রথম দিনের শুটিংয়ের এক ফাঁকে বেলা পৌনে ২টার দিকে অভিনেত্রী শারমিন আখিঁ মেকআপ রুমে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এমন সময় বিকট শব্দে বিষ্ফোরণ হয়। দগ্ধ অবস্থায় মেকআপ রুম থেকে আর্তনাদ করতে করতে বেরিয়ে আসেন অভিনেত্রী। ঘটনার আকষ্মিকতায় উপস্থিত হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। দ্রুতই অভিনেত্রীকে হাসপাতালে পাঠান তার হাউজ মালিক ও সহকর্মীরা।

কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি হাউজ ও শুটিং-সংশ্লিষ্ট কেউই।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে অভিনেত্রী শারমিন আঁখি মেকআপ রুমে মেকআপ নেয়া শেষ করেন। তখন তার পোশাক পাল্টানোর কথা ছিল বলে সঙ্গে থাকা মেকআপ আর্টিস্ট রুম থেকে বেরিয়ে যান। ফলে ওই সময় অভিনেত্রী ছাড়া মেকআপ রুমে আর কেউ ছিলেন না। এর কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের শব্দ হয় এবং দগ্ধ অবস্থায় মেকআপ রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন আঁখি।

রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, তৃতীয় তলার মেকআপ রুমের সঙ্গে একটি বাথরুম ও পোশাক পাল্টানোর জন্য পৃথক আরেকটি কক্ষ রয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাথরুমের দরজা ভেঙে মেকআপ রুমের ভেতরে এসে পড়ে। আর বাথরুমের এক্সজস্ট ফ্যান ভেঙে ভবনের বাইরে গিয়ে পড়ে।

এতে স্পষ্ট যে বিস্ফোরণের কেন্দ্র ছিল বাথরুম। তবে অক্ষত ছিল বাথরুমের আয়না, বেসিন। ওই বাথরুমে কোনো বৈদুত্যিক সকেট লাগানো নেই, যার সাহায্যে কোনো বৈদ্যুত্যিক সরঞ্জাম চালানো সম্ভব। অন্যদিকে অক্ষত আছে বাথরুমের একমাত্র বৈদ্যুত্যিক বাতিটিও। পুরনো ভবন হওয়ায় বাথরুমের দেয়ালের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে মোজাইক। তাছাড়া ওই বাথরুম বা মেকআপ রুমের আশপাশে কোনো রান্নাঘর বা গ্যাসের সংযোগও নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুটিং-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, বিস্ফোরণের সময় ভবনে কোনো বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়নি। বরং ঘটনার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা ছুটে গিয়ে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেন।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে টেলিফোনে কথা হয় হাউজ মালিক ইরফান হাইউমের সঙ্গে। তিনি জানান, তিন মাস আগে ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ভাড়া নিয়ে শুটিং হাউজ নির্মাণ করেন। এই টেলিফিল্ম শুটিয়ের প্রথম দিনেই এমন ঘটনা ঘটলেও আরও আগে থেকেই নিয়মিত শুটিংয়ের কাজ চলছে তার হাউজে। কখনও এমন দুর্ঘটনা ঘটেনি।

কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ধারণাই নেই। আমি এখনও শকের মধ্যেই আছি। ঘটনার সময় আমি পাশের রুমেই ছিলাম। হঠাৎ মেকআপ রুমে বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম। ছুটে গিয়ে দেখি অভিনেত্রী চিৎকার করে মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে আসছেন। আমরা তাকে বাথরুমে নিয়ে গায়ে পানি ঢেলে গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠাই।

‘ভবনে যেন আগুন না লাগে সেজন্য মেইন সুইচ বন্ধ করে দিই। ফোন করে পুলিশকে জানাই। এখন কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো তা আমার জানা নেই। পুলিশ তদন্ত করছে, তারাই বের করবে কী ঘটেছিল।’

বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পল্লবী থানা পুলিশ। সে সময় মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ এখন হাতে। তাতে দেখা যায়, বাথরুমের মেঝেতে একটি অক্ষত লাইটার ও সিগারেটের টুকরো পড়ে আছে। বেসিনের ওপর রাখা আছে একটি সিগারেটের প্যাকেট। এতে বুঝা যায় ঘটনার আগে কেউ বাথরুমে সিগারেট জ্বালিয়েছিলেন। আর সে সময় মেকআপ রুম ভেতর থেকে বন্ধ করে অভিনেত্রী পোশাক পাল্টান। পুলিশের ধারণা অভিনেত্রী নিজেই সিগারেট জ্বালিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে অভিনেত্রীর স্বামী রাহাত কবির টেলিফোনে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমিও ওই ফ্লোরে ছিলাম। ঘটনার সময় আমি পাশের রুমে ছিলাম। আমার স্ত্রী আমাকে জানায় সে পোশাক পরিবর্তনের আগে চুল আয়রন করার জন্য সকেটে হেয়ার স্ট্রেইটনার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে এই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে আমার স্ত্রী বাথরুমে নাকি মেকআপ রুমে স্ট্রেইটনার কানেক্ট করেছিলেন, তা তার ঠিক মনে নেই।

‘তবে সে এটুকু নিশ্চিত করে বলেছে যে, স্ট্রেইটনার কানেক্ট করার সঙ্গে সঙ্গে রুমের বাতি স্পার্ক করে। এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। আমার ধারণা শুটিং হাউজটি যেহেতু নতুন রং করা, তাই রংয়ের গ্যাস জমা ছিল। সেখানে স্ট্রেইটনারের কানেকশন দেয়ার পরই স্পার্ক থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ স্ত্রী ধূমপায়ী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার স্ত্রী ধূমপায়ী। কিন্তু তার বাথরুমে বসে ধূমপান করার কোনো কারণ নেই। একই সঙ্গে বাথরুমে যে ব্র্যান্ডের সিগারেট মিলেছে সে ওই ব্র্যান্ডের সিগারেট খায় না।’

তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে কোনো বৈদ্যুত্যিক গোলযোগের আলামত পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে অভিনেত্রী যে হেয়ার স্ট্রেইটনারের কথা বলছেন সেটিও ঘটনাস্থলে মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে হাউজ মালিক ফোন করে জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ছুটে যাই। এ বিষয়ে অভিনেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করা হলেও আমরা অভিনেত্রী ও তার স্বামীর বক্তব্য নিয়েছি। তাদের বিবরণ অনুযায়ী বিস্ফোরণের স্থানটিতে শর্ট সার্কিটের আলামত মেলেনি।

‘আমরা যা পেয়েছি তা হল, বাথরুমে কোনো গ্যাস জমে ছিল। পরে সেখানে কেউ সিগারেট ধরাতে লাইটার জ্বালালে এই বিস্ফোরণ ঘটে।’

বাথরুমে গ্যাস কোথা থেকে জমা হল এবং কে সিগারেট ধরিয়েছিল তা জানতে চাইলে পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘এটি তদন্ত শেষ না হলে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’

থানা-সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, অভিনেত্রী আঁখি সম্ভবত বাথরুম ব্যবহারের আগে সেখানে কোনো সুগন্ধি স্প্রে করেছিলেন। পরে হাই কমোডে বসেই সিগারেট ধরাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আর সে কারণে অভিনেত্রীর দুই উরু, দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ও মুখমণ্ডলের কিছু অংশ দগ্ধ হয়েছে।

তাছাড়া বাথরুমে অন্য কোনো গ্যাস জমা থাকার বিষয়টি পুলিশের ধারণায় থাকলেও এর সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলে মনে করছে ওই সূত্র। তাদের যুক্তি, এদিন সকাল থেকে অনেকেই সেই বাথরুম ব্যবহার করেছেন এবং এগজস্ট ফ্যান থাকায় লম্বা সময় ওই বাথরুমে গ্যাস জমা থাকা সম্ভবও নয়।

দিনবদলবিডি/Anamul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়