বিপদ ও সমস্যা থেকে বাঁচার কার্যকরী ১০ দোয়া
ধর্ম ডেস্ক || দিনবদলবিডি.কম
পবিত্র কোরআন-সুন্নায় বিপদ ও সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে অসংখ্য দোয়া ও আমলের বর্ণনা রয়েছে। যা কার্যকর এবং পরীক্ষিত।
নবী-পয়গাম্বরদের থেকে শুরু করে অসংখ্য নেককার বনি আদমের বাস্তব জীবনেই তা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। তাই বিপদে কিংবা সমস্যায় পড়লে মুমিন মুসলমানের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
আরো পড়ুন >>> রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শাফাআত পাওয়ার উপায়
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার উপর আস্থা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে এসব দোয়ার যথাযথ আমলেই সম্ভব বিপদমুক্ত হওয়া। বিপদ ও সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য মুমিনের বিশেষ কার্যকরী ১০ দোয়া হচ্ছে-
সূরা আল-ফাতেহা:
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
উচ্চারণ:বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমঅর্থ:পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন।অর্থ: সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে।
ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
উচ্চারণ: আর রাহমা-নির রাহীম।অর্থ: অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু।
مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ
উচ্চারণ: মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।অর্থ: প্রতিফল দিবসের মালিক।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
উচ্চারণ: ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতা’ঈন।অর্থ: আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি।
ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
উচ্চারণ: ইহদিনাসসিরা-তাল মুসতাকীম।অর্থ: আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন।
صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
উচ্চারণ: সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম।অর্থ: তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন
غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص
উচ্চারণ: গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন।অর্থ: এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট। (আমিন)
এ সূরাটির বিশেষ একাধিক নাম হলো- আল-কাফিয়া বা যথেষ্টকারী, আশ-শাফিয়া বা আরোগ্যকারী। এটি আল্লাহর গুণ-প্রশংসার সূরা হওয়ায় এ সূরার আমলের দ্বারা ঝাঁড়-ফুক করাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
> اَللهُ... اللهُ رَبِّىْ لَا اُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
উচ্চারণ: ‘আল্লাহু… আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ।’অর্থ: ‘হে আল্লাহ!... আল্লাহ তুমিই আমার প্রভু। আমি তোমার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’ (আবু দাউদ)
> لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি)
প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ কিংবা দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে উত্তীর্ণ হতে তাঁর উম্মতকে এ দোয়া পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন-
> حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْل – نِعْمَ الْمَوْلِى وَ نِعْمَ النَّصِيْر
উচ্চারণ: ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেমাল ওয়াকিল; নেমাল মাওলা ওয়া নেমান নাসির।’অর্থ: আল্লাহ তায়ালাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কাজ সম্পাদনকারী। আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।’
> لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِالله
উচ্চারণ: ‘লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।’অর্থ: ‘আল্লাহর সাহায্য ব্যতিত কোনো উপায় নেই আর কোনো ক্ষমতাও নেই।’ এ দোয়াটি জান্নাতের গোপন ভাণ্ডারসমূহের একটি। বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বহু মানুষ থেকে পরিক্ষীত দোয়াও এটি।
> أَستَغْفِرُ اللهَ- أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লাহ; আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’অর্থ : ‘আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’
> لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ، وَرَبُّ الْأَرْضِ، وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আ’রশিল কারিম।’অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতিত সত্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি অতি মহান, অতি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতিত কোনো সত্য ইলাহ বা উপাস্য নেই, তিনি বিশাল আরশের মালিক। আল্লাহ ব্যতিত সত্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি আসমান-জমিনের এবং মহান আরশের মালিক।’ (বুখারি)
> اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِن ضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজাল।’ (তিরমিজি)অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও মিশকাত)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা চিন্তা, অস্থিরতা তথা হতাশাগ্রস্ত হতেন তখন বলতেন-
> يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ
উচ্চারণ: ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।অর্থ: ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত)
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিপদগ্রস্তের দোয়া হচ্ছে-
> اَللّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَاتَكِلْنِىْ اِلَي نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَ أَصْلِحْ لِيْ شَانِي كُلُّهُ لا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরঝু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি; ত্বারফাতা আইন; ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লুহু; লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা। (আবু দাউদ, মিশকাত)অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দয়া কামনা করি। তুমি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের হাত ছেড়ে দিও না। বরং তুমি স্বয়ং আমার সমস্ত ব্যাপার ঠিক করে দাও। তুমি ব্যতীত কোনো মাবুদ নাই।
ইয়া আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে সব সময় উল্লেখিত দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দিনবদলবিডি/জিএ