৪৮ ঘণ্টায় ধসে পড়ল মার্কিন ২য় বৃহত্তম ব্যাংক

আন্তর্জাতিক সংবাদ || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৫০, শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩, ২৬ ফাল্গুন ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র শক্তিশালী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)  ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার বিক্রি করবে।  স্টার্টআপের জন্য ঋণ দেওয়া তারা গত বুধবার এক ঘোষণা দেয়। কিন্তু এই এক ঘোষণাই তার জন্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

কারণ, এ ঘোষণায় ব্যাংকের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরদিন ব্যাংকটির শেয়ারের দর ৬০ শতাংশ কমে যায়। গত বৃহস্পতিবার আমানতকারীরা তুলে নেন ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বিনিয়োগকারীরা ভাবেন, এ ঘোষণায় ব্যাংকটি থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে  শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। ব্যাংকের সব আমানতের দায় এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে।

রয়টার্সসহ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এই প্রথম কোনো পশ্চিমা ব্যাংক এভাবে বন্ধ হয়ে গেল। শুধু তা–ই নয়, এটা নাকি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ধস। এর কারণ অন্য কিছু নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি। এত দিন মূলত মূল্যস্ফীতির মধ্যেই এর প্রভাব সীমিত ছিল। 

বিষয়টি হচ্ছে, গত বছরের শুরুতেই ফেডের নীতি সুদহার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনজনিত মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলায় গত এক বছরে ফেড আটবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সে দেশের বন্ডের সুদহার বেড়েছে। ঋণ ও বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ার সম্মিলিত ফল হলো, বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় বিনিয়োগ করার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে, বরং বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, আরামে সুদ খাওয়া যাবে। 

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীরা স্টার্টআপে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ায় সিলিকন ভ্যালির এ স্টার্টআপগুলো সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে রক্ষিত আমানত ভেঙে খেতে শুরু করে। তাতে সিলিকন ভ্যালির ব্যাংকের আমানতে টান পড়ে। 

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট নিয়ে গবেষণা করে গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেন এস বার্নানকে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিলিপ এইচ ডিবভিগ।

আধুনিক কালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ছিল ১৯৩০-এর দশকের সংকট। ২০২২ সালের নোবেল বিজয়ী বেন বার্নানক সেই সংকট নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, বিপুলসংখ্যক আমানতকারী একসঙ্গে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়ায় (ব্যাংক রান) ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকট গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।

বার্নানকে বলেছেন, স্রেফ গুজবের কারণে যে ব্যাংক ধসে পড়তে পারে, তার বড় নজির এসভিবি। বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী যখন একসঙ্গে সঞ্চয় ভাঙার জন্য ব্যাংকে যান, তখন গুজব কার্যত বাস্তব রূপ লাভের কাছাকাছি চলে যায়। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সরকার উদ্ধারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। সেটা হলো সরকার আমানতের বিমা দিয়ে ব্যাংকের জন্য আপৎকালীন ব্যাংকার হিসেবে আবির্ভূত হওয়া।

দিনবদলবিডি/Jannat

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়