মোহাম্মদ এ আরাফাত
কংগ্রেসম্যানদের চিঠি ভুলে ভরা

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কাছে চিঠি লিখেছেন দেশটির ছয়জন কংগ্রেস সদস্য। চিঠিতে তারিখ হিসেবে ৮ জুনের কথা উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবরটি এসেছে গতকাল সন্ধ্যায়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রাক্কালে একের পর এক চিঠি দুরভিসন্ধিমূলক। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসায় মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার জবাবদিহি চেয়ে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর জন্য দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত ভিন্ন কথা বলছে। সর্বশেষ তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। হত্যাকাণ্ডও সংঘটিত হয়নি। এমন সময়ে এ চিঠি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টা। তবে এতে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতিই হবে না।

চিঠিগুলো অর্থহীন। প্রতিটি চিঠির ভাষা একই। লবি তৈরি করে অর্থ খরচ করার ফলাফল হিসেবে এমন আরও কিছু চিঠি এলেও আমি অবাক হব না। এই চিঠিগুলোর কোনো মূল্য নেই। এটি একটা ন্যারেটিভ ও পারসেপশন তৈরি করে। কিন্তু আমেরিকান প্রশাসনের ওপর এর কোনো প্রভাব নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে এনগেজড। তারা প্রতিটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে। এই বিষয়গুলোর সত্য-মিথ্যা তাদের জানা। এগুলো নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। এর আগে যে চিঠিগুলো এসেছে, সেখানে আমরা প্রত্যেক কংগ্রেসম্যানকে জানিয়েছি যে তাদের চিঠির মধ্যে কতটা ভুলভ্রান্তি রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত চিঠিও ভুলে ভরা।

এ ধরনের চিঠিতে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আমরা কংগ্রেসম্যানদের চিঠির কড়া জবাব দিচ্ছি। এতে করে কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া এর কোনো ইমপ্লিকেশন নেই। ব্যাপারটা এমন নয় যে, এই চিঠি দিল আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন স্যাংশন দিয়ে দেবে। এসবের কোনো সুযোগ নেই। কারণ তারা এসব চিঠির ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। এই চিঠিতে যেটা হচ্ছে এক ভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে। এটাকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। চিঠির সব অভিযোগই মিথ্যা। গেল তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও বড় কোনো গন্ডগোল হয়নি। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে। এমন নির্বাচনমুখী অবস্থার মধ্যে একের পর এক চিঠি প্রদান ও গণমাধ্যমে সেটি ফলাও করে প্রচারের মধ্যে কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে বৈকি। এগুলো অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন। কারও প্ররোচনা ও অর্থের বিনিময়ে তারা চিঠি প্রদান করছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক স্বার্থের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।

সারাক্ষণ বিভিন্ন গোষ্ঠী এমন চিঠি লিখতে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জোসেফ বোরেলকেও এমন চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এসব চিঠির স্ট্রাকচার্ড কিছু উত্তর আছে। বাণিজ্যস্বার্থ বা লবিংয়ের কারণেও এমন চিঠি পাঠানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্বপ্রণোদিত হয়ে ইউএসএর কয়েকজন কংগ্রেসম্যান এ রকম মিথ্যা চিঠি লিখে স্বাক্ষর করছেন বলে মনে হয় না। এর ভেতর অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। চিঠিগুলোতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে তারা তাদের সম্মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আপনি একটা চিঠিতে স্বাক্ষর করলেন, অথচ সেখানে যে কথাগুলো লেখা আছে, সেগুলো মিথ্যা। তাহলে তাদের মান-ইজ্জত থাকবে কোথায়? এই রিস্ক নিয়েই তারা স্বাক্ষর করছেন। তারা কিছু না পেয়েই এমন কাজ করেছেন বলে মনে হয় না। এগুলো যারা বোঝার, তারা ঠিকই বোঝে।

লবিং করে বা কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর সমাধান করতে হবে।

মোহাম্মদ এ আরাফাত : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য ও ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।

সুপ্তমত মুক্তমত বিভাগের সব খবর