জাপানে জনসংখ্যার খরা: ২৫ বছরে গ্রামে ১ম শিশুর জন্ম

আন্তর্জাতিক সংবাদ || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৩৯, শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩, ৪ চৈত্র ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

প্রায় সাত বছর আগে কেনতারো ইয়োকোবোরি জন্ম গ্রহন করে। এ ছেলেটি ছিল সোগিও জেলার কাইয়াকামি গ্রামে ২৫ বছরের মধ্যে জন্ম নেয়া প্রথম শিশু। তার জন্ম গ্রামবাসীদের জন্য ছিল এক অলৌকিক ঘটনা। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধু ও স্বজনরা তার মা-বাবা মিহো ও হিরোহিতোর বাসায় এসে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা জানান। তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন প্রবীন মানুষ। সিএনএন

স্মৃতিচারণ করে মিহো বলেন, বয়স্ক লোকেরা কেনতারোকে দেখে খুবই খুশি হন। একজন বৃদ্ধা যিনি লাঠি ভর দিয়ে হাটেন। সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠা যার জন্য খুবই কষ্টকর। তিনি আমার কাছে এসে শিশুটিকে কোলে নিলেন। সব বয়স্ক লোক একে একে শিশুটিকে কোলে নেন।

২৫ বছর গ্রামটিতে কোন শিশু জন্ম গ্রহণ না করায় জনসংখ্যা কমে ১,১৫০ জনে দাঁড়ায়। ৪০ বছর আগে যা ছিল প্রায় ৬,০০০। এ সময়ে গ্রামের তরুণরা বুড়ো হয়ে গেছে। আর বুড়োরা মারা গেছেন। অনেক বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে। বহু বাড়ি বন্য প্রাণীর আবাসে পরিণত হয়েছে। জাপানের অসংখ্য গ্রাম ও শহরের উদাহরণ ফুটে উঠেছে কাউয়াকামি গ্রামের মধ্যে। তরুণরা বড় বড় শহরে চলে যাওয়ায় এমন বহু গ্রাম ও শহর বিস্মৃত ও অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে।

জাপানীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি এখন টোকিও, ওসাকা ও কিয়োটোর মতো শহরে বাস করে। জাপানের শিনকানসেন বুলেট ট্রেনের মাধ্যমে এসব শহর পরস্পরের সাথে যুক্ত রয়েছে। পল্লী অঞ্চলগুলো কৃষি, বন, খামার করার মতো শিল্প-কারখানার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। সেখানে শ্রমিকের ভীষন অভাব। লোকজন বৃদ্ধ হয়ে পড়ায় এ সংকট আগামীতে আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। ২০২২ সাল নাগাদ ১০ বছরে কৃষি ও বন বিভাগের শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ২২ লাখ থেকে ১৯ লাখে কমে আসে।

জাপানের সমস্যা হচ্ছে দেশটির শহরের মানুষেরা সন্তানগ্রহন করতে চায় না। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রজননের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।’ তার কথা জাপানের জনগণ শুণছেন বলে মনে হয় না। জনসংখ্যার খারাপ অবস্থার আলোকে তিনি সতর্ক করে দেন যে, দেশ সামাজিক কাজকর্ম ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তা আর চালিয়ে যাওয়া হয়ত সম্ভব হবে না।

২০২২  সালে জাপানে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৮ জন শিশু জন্ম নেয়। ১৯৮২ সালে জন্ম নিয়েছিল ১৫ লাখ শিশু। দেশটির জন্ম হার ১.৩ শতাংশে নেমে গেছে। অথচ জনসংখ্যার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জন্ম হার ২.১ শতাংশ থাকা জরুরী। এক দশকের বেশি সময় ধরে জাপানে জন্মের চেয়ে মৃত্যুর হার বেশি চলে আসছে।

জাপানে অভিবাসী লোকদের পরিমাণ জনসংখ্যার ২.২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা ১৩.৬ শতাংশ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানীরা কাজে ব্যস্ত থাকে দীর্ঘ সময়। পারিবারিক জীবন যাপন ও সন্তান লালনপালনের সময় তাদের কম। তাছাড়া সন্তান লালন তরুণ-তরুনীদের কাছে বেশ ব্যয়বহুল।

দিনবদলবিডি/Jannat

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়