‘দুই বেলা ভাত জোডে না। আমাগো আবার ঈদ’

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৪৩, শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২, ২৫ আষাঢ় ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কেউ আবার প্রতিবেশীর বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। সামান্য সরকারি চাল, ডাল শেষ হয়ে গেছে। ঘরে খাবার নেই। ঈদ আনন্দের কথা ভাবতেই পারছেন না তারা…

ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহারশি নদী পাড়ের বানভাসি মানুষের ঈদ আনন্দ নেই। বন্যায় এখানকার রামেরকুড়া ও খৈলকুড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বাঁধ ভেঙে ২০-২৫টি বসতঘর ঢলের পানিতে ভেসে গেছে।

অনেকের বসতবাড়ির অস্তিত্ব নেই। মুরগির খামার, পুকুরের মাছ হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক ব্যবসায়ী। ভিটেমাটি ছেড়ে এখনও অনেক মানুষ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছেন। খুঁটি ভেঙে প্রায় এক মাস ধরে এলাকা দুটি বিদ্যুৎবিহীন। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

রবিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। অসহায় মানুষ এবার কীভাবে ঈদ উদযাপন করবেন, সে বিষয়ে গ্রাম দুটিতে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, কয়েকশ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ খোলা জায়গায় বসবাস করছেন।

কেউ আবার প্রতিবেশীর বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। সামান্য সরকারি চাল, ডাল শেষ হয়ে গেছে। ঘরে খাবার নেই। ঈদ আনন্দের কথা ভাবতেই পারছেন না তাঁরা। এসব মানুষের জন্য ঈদে কোনো কিছু করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নিশ্চুপ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাঁদের ভাষ্য, ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আর কিছু করার নেই।

ঢলে ভোসে গেছে খৈলকুড়া গ্রামের স্বামীহারা বাতাসী বেগমের (৪০) বসতঘর। ভাঙা গোয়ালঘরে বাস করছেন তিনি। তাঁর দুই সন্তান পাশের বাড়ি থাকে। ঈদ আনন্দ তাঁর কাছে মূল্যহীন। তিনি বলেন, 'আমার মতো অভাগী এ জগতে আর একটাও নাই। মাটি কাটা কাজ করতাম। অহন কাজ নাই। হাতে একটা ট্যাহা (টাকা) নাই। দুই বেলা ভাত জোডে না। আমগরে আবার ঈদ!'

বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে রামেরকুড়া গ্রামের আব্দুস সুবাহানের (৭৫) বসতঘর। আজ এ বাড়ি তো কাল আরেক বাড়িতে রাত কাটছে তাঁর। ঈদ নিয়ে তাঁর ভাবনা জানতে চাইলে বলেন, 'ঘর নাই। যেখানে মন চায় সেখানেই পড়ে থাকি। ঈদ দিয়া আমি কী করমু। ঈদ বড় লোকের।'

মহারশি নদীর পাড়েই ছিল বৃদ্ধ জামফুল বেওয়ার (৬৫) বসতঘর। ঢলে সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। বাড়িঘর সব নদীতে। প্রতিবেশী রফিকুলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, বাড়িঘর সব ভেসে গেছে। এবার পরিবারে কোনো ঈদের আনন্দ নেই।

বনকালি গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত আমেনা খাতুন। মাটি কাটা কাজ করেন। বানের সময় তাঁর ঘরে কোমরসমান পানি ছিল। ঘর একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো ত্রাণ পাননি। তিনি বলেন, 'সাহায্যের আশা করি না। মাটি কাটার কাজ করে দৈনিক ১৮০ টাকা পাই। ঈদের আগের দিন কাজ হলে ভাত খাব, কাজ না হলে খাব না।'

ঈদ উদযাপনে বানভাসি মানুষের জন্য কিছু করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন বলেন, সরকার থেকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কেউ না পেয়ে থাকলে তাদের ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ জানান, বন্যার সময় সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। ঈদ উপলক্ষেও ১০ কেজি করে চাল সবাইকে দেওয়া হয়েছে। ঈদে তাঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা হবে।

দিনবদলবিডি/Rony

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়