কে হবেন ন্যাটোর পরবর্তী মহাসচিব?

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৩৩, শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩, ২৫ চৈত্র ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো



একজন জার্মান পেশাদার, নাকি একজন ফিনিশ ফ্রিল্যান্সার? অথবা পূর্ব ইউরোপ থেকে কেউ? ন্যাটোর পরবর্তী মহাসচিব কে হবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে পাঁচ হট ফেভারিটের নাম শোনা যাচ্ছে খুব জোরেশোরে।

নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ন্যাটো প্রধান ছিলেন। তিনি তার ম্যান্ডেট মোট তিনবার বাড়িয়েছেন। গত বছর তাকে আরো এক বছরের জন্য ন্যাটোর মহাসচিবের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে রাজি করানো হয়।

ন্যাটো দেশগুলো থেকে তখন কোনো প্রার্থী প্রস্তুত ছিল না। এ ছাড়াও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্যে কেউই নতুন কোনো মহাসচিব নির্বাচন প্রক্রিয়ার কারণে ন্যাটোতে বিভক্ত নেতৃত্বের লড়াই দেখতে চায়নি।


এবার প্রশ্ন হলো, এই বছর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ন্যাটো দেশগুলো সফল হবে কি না! স্টলটেনবার্গের ম্যান্ডেটের মেয়াদ শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর এবং আদর্শভাবে তার উত্তরসূরিকে ১১-১২ জুলাই ভিলনিয়াসে আসন্ন ন্যাটো সম্মেলনের সময় প্রস্তুত করতে হবে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে জল্পনা-কল্পনা চলছে বলে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রচার করছে।

ফিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ন্যাটো প্রধান হতে যোগ্যতার মাপকাঠিতে অনেক শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হন। যদি তিনি হন, তাহলে এই পদে ন্যাটোতে তিনিই প্রথম নারী হবেন, যিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় এবং সরকারপ্রধান হিসেবে তার রয়েছে গভীর অভিজ্ঞতা।

বিশ্বজুড়ে নেতাদের একত্র করার ক্ষেত্রেও রয়েছে তার শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড। গত বুধবার ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার পদত্যাগের ঘোষণার পর ন্যাটোতে সময় দেওয়ার ব্যাপারেও আর কোনো বাধা নেই।

কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী মারিন এখনো আন্তর্জাতিকভাবে তুলনামূলক কিছুটা অনভিজ্ঞ। এ ছাড়াও ফিনল্যান্ড মাত্র কয়েক দিন হলো ন্যাটোর সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্টলটেনবার্গের আগে এই পদে ছিলেন ডেনমার্কের অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন। তাই এই পদে পর পর তৃতীয়বারের মতো কোনো নর্ডিক থাকার সম্ভাবনাও কম বলে ধারণা করছেন অনেকে।

আরেকজন সম্ভব্য প্রার্থী হতে পারেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেন। ইউক্রেনের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন প্রশংসিত হয়েছে। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তার ছয় বছরের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। কিন্তু ভন ডের লেনের ইইউ চাকরির মেয়াদ এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি আছে, যা ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম বলে মনে করেন অনেকে।

এ ছাড়াও জার্মানির পক্ষ থেকে রয়েছেন আরো একজন শক্তিশালি প্রার্থী—পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক।  তবে ইইউ এবং ন্যাটো—উভয় জায়গায়ই জার্মান নেতাদের পদচারণ খুব বেশি হয়ে যাবে কি না, সে ব্যাপারেও অনেকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন।

পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইইউ এবং ন্যাটোতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত বলে মনে করছে। এই বিতর্কের পথ ধরে ন্যাটো প্রধান নির্বাচনের সুরাহাটি রোমানিয়ার দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহানিসের জন্যও একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একইভাবে উঠে আসছে ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেনকোভিচের নামও। বাল্টিক অঞ্চলের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, যেমন এস্তোনিয়ান প্রধানমন্ত্রী কাজা কালাস, যিনি ন্যাটোর দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা প্রমানে মস্কোর বিরুদ্ধে একজন কট্টোর সমালোচক বলে ইতিমধ্যে নিজের অবস্থানকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করা হয়।

কথিত আছে, কোনো ইস্যুতে ইইউর যখন একমত হওয়া কঠিন হয়, তখন বেনেলাক্স দেশগুলো থেকে আপস-মীমাংসার একটা পথ খুঁজে পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের নাম শোনা যায় বেশ জোরেশোরেই। তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার রয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও যথেষ্ট পরিচিত। রুটের নাম প্রায়ই ইইউতে অনেক শীর্ষ পদের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে বারবারই বলা হয়, তিনি নিজ গৃহ ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে অত্যন্ত অনিচ্ছুক। এমনকি যদি তা কেবল ব্রাসেলসের মতো সংক্ষিপ্ত পথেও হয়। তিনি নিজে না হলেও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সুইডিশভাষী কাজসা ওলংগ্রেন একজন উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবেও রয়েছেন আলোচনার টেবিলে।

জল্পনা-কল্পনার মধ্যে রয়েছে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের নামও। তবে উরসুলার মতো তার গ্রহণযোগ্যতায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে জানা যায়। স্পেন ১ জুলাই থেকে ইইউ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং আসছে শরতে জাতীয় নির্বাচনও করবে। অন্যদিকে সানচেজের দল নিজ দেশে জনমতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে রয়েছে বলেও জানা যায়। স্বভাবতই নির্বাচনের জন্য সময়মতো দলে নেতার পরিবর্তন হলে তিনি নিজেও ক্ষমতার বলয় থেকে ছিটকে যেতে পারেন।

প্রেক্ষাপট বিচারে ‘জোকার’ কার্ডটি স্টলটেনবার্গ নিজেই হতে পারেন। যদিও তিনি বারবার বলছেন, তিনি নরওয়েতে বাড়ি ফিরে যেতে চান। তবে আরো একবার সংক্ষিপ্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশ্নটি থেকে যে তিনি রেহাই পাবেন, তা কেউই মনে করছেন না। তাকে আরো কিছুদিন এই দায়িত্বে থেকে যাবার জন্য অনুরোধ করা হতে পারে, বিশেষ করে যদি অন্য কাউকে প্রতিস্থাপনের জন্য খুঁজে পাওয়া না যায়। গত সপ্তাহে ব্রাসেলসে টিটি এবং অন্যান্য নর্ডিক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে স্টলটেনবার্গ বলেছেন, তাকে যখন পদত্যাগ করতে হবে, তখন বুঝতে হবে তাকে অন্য আর কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।

জেনস স্টলটেনবার্গ ২০১৪ সাল থেকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব হিসেবে অধিষ্টিত আছেন এবং তিনি ডেনিশ অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত তার ম্যান্ডেট তিনবার বাড়ানো হয়েছে এবং বর্তমানে এই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ হবে। স্টলটেনবার্গ ইতিমধ্যে তার নেটিভ নরওয়েতে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির হয়ে সে দেশের শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

দিনবদলবিডি/Rabiul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়