শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: ৪ জনের যাবজ্জীবন, ৪৪ জনের ৭ বছর করে কারাদণ্ড

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:০৩, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন এবং ৪৪ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল এ রায় ঘোষণা করেন। 

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী গ্রামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষণের শিকার স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলামের হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপর দাঁড়
করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমানকে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে মারপিট করা হয়। তার কাছে থাকা সাড়ে ১১হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়। 

মারপিট করে জখম করা হয় নেত্রীর গাড়ি বহরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল হক রাসেল, রমনা এলাকার যুব মহিলা লীগের নেত্রী ফতেমা জামান সাথী, আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুল মতিনসহ কয়েকজনকে। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভেতরে আশ্রয় নিলেও
তাদেরকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। ভেঙে দেয়া হয় তাদের ক্যামেরা। ছিনিয়ে নেয়া হয় মোবাইল, ঘড়ি ও টাকা।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের ঢাকা মেট্রো-গ-১২-৫৩৪২ পাজারু গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় কলারোয়া থানা মামলা না নেয়ায় ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া উপজেলা (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা (সিআরপি-১১৭১/০২) দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্তকালে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়া ৩৫ জনের ১৬১ ধারায় সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন মর্মে আদালতকে অবহিত করেন। বাদী মোসলেম উদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে নারাজির আবেদন জানালে শুনানি শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। এ খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদী ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা (১৭/০৪) দায়ের করেন। ২২ এপ্রিল শুনানি শেষে বিচারক একেএম জহিরউদ্দিন এ রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। নিরুপায় হয়ে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট বাদী এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক এম এনায়েতুর রহিম ও আকরাম হুসাইন চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ
দেন। আদেশের কপি দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ফাইলবন্দি থাকার পর ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়।

১৭ সেপ্টেম্বর বাদীর উপস্থিতিতে নারাজির শুনানি করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ১৫ অক্টোবর ২০১৪ দিন ধার্য করেন। ওই দিন বিচারক শুনানি শেষ অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওই দিনই মামলাটি থানায় রেকর্ড হওয়ার পর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাড়ে ছয় মাস পর ২০১৬ সালের ৪ মে তিনি আদালতে ৫০ জনের নামে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ৭ মে আদালতে অভিযোগপত্রটি গৃহীত হয়। ২০১৬ সালের ৭ জুন অভিযোগপত্রে উল্লেখিত সকল আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৭, ১৪৮, ৩২৩, ৩০৭, ৩৫৪, ৩৭৯, ৪০৯, ৪২৭, ৫০০ ও ৫০৬(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগপত্রে নাবালক রকীবের নাম রাখায় আসামিপক্ষ মহামান্য হাইকোর্টে যেয়ে কার্যক্রম স্থগিত করেন।

২০১৯ সালে মামলাটি নতুন করে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এলে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ৫০ জন আসামিকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। অপরদিকে মামলার অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের এসটিসি ২০৭/১৫, ২০৮/১৫ এ দু’টি মামলায় ১৫ জন সাক্ষী দেন। সাক্ষী চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষে অবস্থানকারী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম
মুনিরকে হুমকি দেয়ার ঘটনায় জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফের সদর থানার সাধারণ ডায়েরির তদন্তে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে নন জিআর মামলা দায়ের করা হয়। যা আজও চলমান। যুক্তিতর্ক শেষে আজ মঙ্গলবার সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেভাবে মামলা পরিচালনা করা হয়েছে তাতে কারাগারে থাকা ৩৭ জন, জামিনে থাকা দুজন ও পলাতক নয়জন আসামির সাজা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

দিনবদলবিডি/Jannat

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়