ভারতের হিজাব আন্দোলনের সেই তাবাসসুম দ্বাদশের পরীক্ষায় কর্ণাটকে প্রথম

আন্তর্জাতিক সংবাদ || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৩৩, বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

তাবাসসুমের ইচ্ছা ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’ নিয়ে বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। গত বছরের জানুয়ারিতে কর্ণাটকের উদিপি জেলায় এক স্কুলে হঠাৎ হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। কর্তৃপক্ষ ফরমান জারি করে, হিজাব বা ওই ধরনের কোনো ধর্মীয় পোশাক পরে ক্লাস করা যাবে না। বোরকা বা হিজাব পরে প্রতিষ্ঠানে এলেও শ্রেণিকক্ষে তা খুলে ফেলতে হবে। সেখানে স্কুল ইউনিফর্মই একমাত্র পোশাক। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিজাব বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন তাবাসসুম ও তার অন্য পাঁচ বান্ধবী বেঙ্গালুরুর স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অনেক দিন বাড়ি বসে ছিলেন। এরপর একদিন মন বদলান। পিটিআই/ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সংবাদ মাধ্যমকে তাবাসসুম বলেন, ‘বাবার কথায় আমি মন বদলাই। হিজাবের চেয়ে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিই। বাবা বলেছিলেন, দেশের আইন মানা জরুরি। তেমনই জরুরি নারীর শিক্ষালাভ।’ তাবাসসুমের প্রকৌশলী বাবা আবদুল খায়ুম শাইকের বলা ওই কথা তাবাসসুমের জীবন আমূল বদলে দেয়। হিজাব পরে শিক্ষালয়ে গেলেও হিজাব ছেড়ে ক্লাস করা জরুরি বলে মনে করেন।তাবাসসুম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের পরামর্শে স্কুলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। পাঁচ বছর বয়স থেকে হিজাব পরে আসছি। হিজাব পরতে আমার ভালোও লাগে। পোশাকটির প্রতি একটা অধিকারবোধ জন্মে গিয়েছিল। হিজাব ছাড়া ক্লাস করতে প্রথম প্রথম খারাপ লাগত। কিন্তু শিক্ষার স্বার্থে ওটুকু মেনে নিয়েছি।’ 

এর ফলও হাতেনাতে পেয়েছেন তাবাসসুম। তাবাসসুম সাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হয়েছেন। মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৭ বছরের এই কিশোরী ৫৯৩ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। হিন্দি, সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে তিনি ১০০তে ১০০ পেয়েছেন। তাবাসসুম বলেন, ‘কোনো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পোশাকের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়। শিক্ষা গ্রহণ ও ধর্মাচরণ দুটিই আমার অধিকার। তবু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত আমি হিজাবের চেয়ে শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার মনস্থির করি।’

তাবাসসুমকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। লিখেছেন, ‘সাফল্যই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ। শাবাশ তাবাসসুম।’

উদিপি স্কুলের ওই ফরমান ক্রমেই রাজ্যের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উত্তেজনা দেখা দেয়। রাজধানী বেঙ্গালুরুতেও সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে। দুই ধর্মের উগ্রপন্থীদের আচরণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। মুসলিম ছাত্রীরা ওই ফরমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু কর্ণাটক হাইকোর্ট জানিয়ে দেন, হিজাব ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ নয়। স্কুলের ইউনিফর্মই শেষ কথা। সেই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন।

তাবাসসুমের বাবা ছেলেমেয়ের শিক্ষায় কখনো কার্পণ্য করেননি। বড় ভাই আবদুল কালাম যন্ত্র প্রকৌশলে পড়ছেন। মা পারভীন গৃহবধু। 

দিনবদলবিডি/Jannat

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়