পদ্মা সেতু বদলে দিয়েছে পর্যটন শিল্পের হিসাব

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ রাত ০৯:৪০, বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২, ২৯ আষাঢ় ১৪২৯
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে, যার প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পেও। এই সেতুর ফলে এবার ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটকদের জোয়ার দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভাটা পড়েছে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে, বন্যার কারণে সিলেটের এই শিল্পে ধস নেমেছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে, যার প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পেও। এই সেতুর ফলে এবার ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটকদের জোয়ার দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভাটা পড়েছে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে, বন্যার কারণে সিলেটের এই শিল্পে ধস নেমেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বিশেষ দিবস কেন্দ্রিক টানা ছুটিসহ বছরের অন্যান্য সময়েও ঘুরতে যাওয়া যাওয়া পর্যটকদের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যেতেন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে।

এবার যেন এই পর্যটনের এই হিসাব-নিকাশ অনেকটাই বদলে দিয়েছে সদ্য উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু। ফেরি পারাপারের জন্য আগে অপেক্ষমাণ গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যেতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস বসে থাকতে হতো যাত্রীদেরও। ফলে এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যেতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো।

গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার পর যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে ওই অঞ্চলে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যায়। এর সুফল মিলেছে পর্যটনের ক্ষেত্রেও।

পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর কারণে ঈদের ছুটিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কুয়াকাটার সৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। হোটেল-রিসোর্ট ও সাময়িক থাকার জন্য ভাড়ার বাড়িগুলোতে জায়গা মিলছে না। রেস্তোরাঁগুলোও হিমশিম খাচ্ছে সেবা দিতে, চাপ বেড়েছে পরিবহনেও। সব মিলিয়ে জমজমাট ব্যবসা হচ্ছে।

হোটেল গ্রেভার ইন্টারন্যাশনালের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যকে জানান, তাদের হোটেলে ২৮টি থাকার কক্ষ রয়েছে। সেগুলো ৮-১৫ জুলাই পর্যন্ত বুকিং হয়ে আছে। যে পরিমাণ পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা করা গেছে, তার চেয়ে চারগুণ ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আগের এমন চাপ দেখা যায়নি।

প্রায় একই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা, কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড সি রিসোর্ট, হোটেল কুয়াকাটা ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি রিসোর্টের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, হোটেলে জায়গা না পেয়ে অনেক পর্যটক আশপাশের সাময়িক থাকার জন্য ভাড়া দেওয়া বাড়িগুলোতে উঠেছেন। অনেকে আবার সারা দিন ভ্রমণ শেষে চলে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, প্রতি কোরবানির ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট থাকা কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতা থাকলেও অনেক হোটেল-রিসোর্ট পর্যটক সংকটে ভুগছে। 
রেস্তোরাঁগুলোতেও আগের মতো ভিড় নেই। ফলে ব্যবসায় মন্দার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁর কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম সারির একটি হোটেলের ম্যানেজার বলেন, প্রতি কোরবানির ছুটিতে তাদের থাকার কক্ষগুলো বুকিং থাকে। এবার অর্ধেকই ফাঁকা পড়ে আছে। অন্যান্য হোটেলেরও একই অবস্থা।

এদিকে, গত জুলাই মাসের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এই ঈদে সেটি পুষিয়ে ওঠার আশা করলেও হতাশ হতে হয়েছে এই তিন জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীদের। চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণে সারা বছর মানুষের যাতায়াত দেখা গেলেও এখন ফাঁকা দেখা গেছে।

সেখানকার একাধিক হোটেলের কর্মকর্তারা জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে সবসময় মানুষ বেড়াতে আসেন। কিন্তু এবার বন্যার কারণে তেমন কোনও পর্যটক আসেননি। অল্প সংখ্যক যারা এসেছেন, তারা অনেকেই ত্রাণ তৎপরতায় অংশগ্রহণ শেষে একটু ঘুরে যাচ্ছেন। ফলে ব্যবসায় ধস নেমেছে।

টুরিস্ট ক্লাব বাংলাদেশের চেয়ারপারসন আঁখি সিদ্দিকা জানান, প্রতি কোরবানির সময় সিলেটে একাধিক টিম যায় তাদের। এবার মাত্র ১২ জনের টিনেজার একটি টিম গেছে। তারা ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি বেড়িয়ে আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্রিয়াব) প্রেসিডেন্ট খবির উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় এবার কোরবানির ছুটিতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড় অনেকটাই বেড়েছে। বরিশাল ও খুলনার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রেও মানুষের উপস্থিতি বেশি। এর বিপরীতে কক্সবাজারে পর্যটক সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেট, পাহাড় ও হাওরেও পর্যটক কমেছে।

দিনবদলবিডি/এইচএআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়