নানা নিষেধাজ্ঞা আসছে ঋণখেলাপিদের জন্য

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সকাল ১০:০৮, শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ অধিকতর সংশোধন করতে বিল আনা হয়েছে। এতে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি ব্যাংক পরিচালকও হওয়া যাবে না।

এছাড়া ব্যাংকের পরিচালক বা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে ব্যাংক। এরকম সব বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩ সংসদে তোলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে তোলেন। পরে সাত দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানালে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।

সংসদে উপস্থাপিত বিলে বলা হয়েছে-ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত করা ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি কমিটি গঠন করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ে সময়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়া, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

বিলে বলা হয়-কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দুটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবেন না।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পর্ষদে প্রাকৃতিক ব্যক্তিসত্তাবিশিষ্ট ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত হতে পারবেন না। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তার প্রতিনিধি হিসাবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে এ আইন কার্যকর হওয়ার পর সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে বিমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে প্রণীত বিমা আইন অনুযায়ী কোনো বিমা কোম্পানির পরিচালক ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হতে পারেন না। সংশোধনী খসড়ায় কোনো ব্যাংক পরিচালকের একইসঙ্গে বিমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কিছু বলা নেই। কিন্তু একজন পরিচালক আরও কোনো কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না বলে বিলে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি বা এসব কোম্পানির কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না।

বিদ্যমান আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার মেয়াদকাল এবং বিকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। নতুন আইনে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিচালক নিয়োগের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

আপত্তি তোলার সময় ফখরুল ইমাম অভিযোগ করেন, আইএমএফ’র শর্ত মেনে এ সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছে। সংসদে কোনো কিছু গোপন করা উচিত নয়। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কারও পরামর্শে এ সংশোধনী আনা হচ্ছে না। আধুনিক ও সময়োপযোগী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। পরে কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের আপত্তি নাকচ হলে বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

ফেব্রুয়ারিতে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের সময় সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ খসড়া আইনটিকে সংসদে বিল আকারে উত্থাপনে আইএমএফ শর্ত দেয়। ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।

দিনবদলবিডি/Rakib

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়