শিক্ষা ও চিকিৎসা বঞ্চিতদের পাশে ‘হেল্পিং মাইন্ড’

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ রাত ১১:৩৫, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য পথশিশু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের অধিকাংশই পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত। কারো বাবা মা আছে আবার কারো নেই। তাদের কেউ রাস্তাঘাটে আবার কেউবা ফুটপাতে বসবাস করে। এসব সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা হতে হয় পদে পদে লাঞ্ছিত, শোষিত এবং বঞ্চিত। পেটের দায়ে তাদের করতে হয় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। আর এসব সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছে ছাগলনাইয়ার কিছু তরুণ।

এক যুগ আগে ফেনীর ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের কয়েকজন একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মানছুর আলম, জয়নাল আবেদীন বাপ্পি, হাসান এবং আব্দুল কাইয়ুম এক হয়ে ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর সরকারি কলেজের তৎকালীন ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. মোস্তাক হোসেন সোহেল এবং বাংলা বিভাগের প্রভাষক জাফর ইকবালের পরামর্শক্রমে ‘হেল্পিং মাইন্ড’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।

শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত সুনামের সাথে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন ফেনী সরকারি কলেজ ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোস্তাক হোসেন সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাফর ইকবাল।

নিজেরা তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা সংগ্রহ করে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের বই, খাতা, কলম, পেন্সিল কিনে দিয়ে তারা নিজেরাই শিশুদের পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও শিশুদের খাদ্যের মাধ্যমে পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন টিফিনের ব্যবস্থা করেছে। যাতে করে পথশিশুরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসতে পারে।

সেসময়ে ছাগলনাইয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে কয়েকবছর তাদের একটি শ্রেণীকক্ষে পড়ানো হতো সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত। পরে ওই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকটে পড়ায় সেখান থেকে তাদের স্থানান্তর করে পৌর শহরের সুবেদারি রাস্তার মাথা সংলগ্ন স্থানে একটি ভাড়া বাসায় পথশিশুদের পড়ানো হতো।

এখানে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ইসলাম শিক্ষা, সাধারণ জ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হয়। বর্তমানে হেল্পিং মাইন্ড স্কুলে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়াশোনা করছে। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে প্রতি বছর পথশিশুদের মাঝে শীত বস্ত্র, ঈদের নতুন জামাকাপড়, রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন করেন।

বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি, রক্ত দান এবং চিকিৎসা ক্যাম্প করে থাকেন। প্রতিবছর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এছাড়াও প্রতি বছর পথশিশুদের মধ্যে আনন্দ, বিনোদন উপহার দিতে দিনব্যাপী আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করেন এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে হেল্পিং মাইন্ড'র সদস্য ও পথশিশুদের নিয়ে শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর হেল্পিং মাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী শামিম নামে এক পথশিশু অপহরণের শিকার হলে তাৎক্ষণিক বিষয়টি সংগঠনের সদস্যরা ছাগলনাইয়া থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. রাশেদ খাঁনকে অবহিত করেন। পরে ওসি রাশেদ খাঁনের আন্তরিক সহযোগিতায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশু শামিমকে মুক্তিপণ ছাড়াই ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে উদ্ধার করে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয় এই সংগঠনের সদস্যরা।

২০১৮ সালে দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া আমান উল্লাহ নামে অবুঝ দুই শিশু সন্তানের এক অসুস্থ হতদরিদ্র পিতাকে রক্তদানের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থান থেকে চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তার হাতে তুলে দেন হেল্পিং মাইন্ড'র সদস্যরা। এবছর ছাগলনাইয়ার মহামায়ায় অন্যের ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল জলিলের একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে মজিবুল হক'র পাশে দাঁড়ান তাকে ব্যবসা করার জন্য একটা দোকানের ব্যবস্থা করে দেয় এবং একমাস আগে ছাগলনাইয়া পৌরসভার পশ্চিম ছাগলনাইয়া গ্রামের স্বামী সন্তান হারা অসহায়  ষাটোর্ধ্ব মরু বালা দাস'কে চোখের দৃষ্টি ফিরে পেতে চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগিতা করে এই সংগঠন।

এছাড়াও ২০২০ সালের শেষেরদিকে হেল্পিং মাইন্ড'র সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল'র উদ্যোগে মানিকগঞ্জ জেলায় শীতার্তদের মধ্যে ৫ হাজার শীতের কম্বল, ৩ হাজার সোয়েটার দেওয়া হয়। গত বছরের রমজানের ঈদে ৫শতাধিক রিকশা চালককে ঈদ বস্ত্র দেওয়া হয়। করোনাকালীন সময়ে সংস্থাটির সভাপতির উদ্যোগে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী অসহায় হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করেন। যারা লোকলজ্জার ভয়ে আসতে চায়না তাদেরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন এই সংগঠনের সদস্যরা।

সংগঠনের সভাপতি ও ফেনী সরকারি কলেজ ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোস্তাক হোসেন সোহেল সমাজের বিবেকবান লোকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন তাদের বাড়ির কাজের ছেলে-মেয়ে বা আশপাশের পথশিশুদের পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়ে সুন্দর ও সুশিক্ষিত একটি দেশ গঠনে এগিয়ে আসেন।

দিনবদলবিডি/Rony

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়