নির্বাচনে জাপার ভরাডুবির জন্য জিএম কাদেরকে দায়ী করছেন নেতারা

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৫৪, সোমবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৪, ২৪ পৌষ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

২০১৪ সালে নানা নাটকীয়তায় পর রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে ৪২টি আসনে ছাড় পায়। সেই নির্বাচনে ৩৪টি আসনে জয়ী হয় দলটি। ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা হওয়ার পর ২২টিতে জয়ী হয়। 

নানা নাটকীয়তার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। সমঝোতার ২৫টিসহ ২৮৭টি আসনে প্রার্থী দেয় দলটি। পরে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিসহ আর্থিক সংকট নিয়ে প্রার্থীরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ৩৩ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

প্রত্যাহার করা দলীয় প্রার্থীরা দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন প্রকাশ্যে। এছাড়া দলীয় প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে নেতাদের বিভ্রান্তিতে রাখায় তারা ভোটের মাঠ গোছাতে সময় পাননি।

দলটির অতীত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পদত্যাগের পর ’৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৩৫টি আসনে জয় লাভ করে জাতীয় পার্টি। এরপর ’৯৬ সালে ৩৩টি আসনে জয়লাভ করে। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সঙ্গে আন্দোলন ছেড়ে হঠাৎ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। জোট ছাড়ার ঘোষণায় দলটির তৎকালীন মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে একটি অংশ চারদলীয় জোটে থেকে যায়। সেসময় জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। আর নাজিউরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চারটি আসন পেয়ে ক্ষমতাসীন বিএনপি জোটের সঙ্গে থেকে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠন করলে সেসময় সমঝোতার ভিত্তিতে ২৯টি আসনে ছাড় পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২৭টিতে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি।

২০১৪ সালে নানা নাটকীয়তায় পর রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে ৪২টি আসনে ছাড় পায়। সেই নির্বাচনে ৩৪টি আসনে জয়ী হয় দলটি। ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা হওয়ার পর ২২টিতে জয়ী হয়। এবার নৌকার সঙ্গে ২৫টি আসনে সমঝোতা হলেও অর্ধেকের বেশি আসনে পরাজিত হন জাপার প্রার্থীরা। জয় পান ১১ আসনে।

দলটির সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, জিএম কাদের নিজের স্ত্রীকে এমপি বানানোর জন্য দলটির অনেক সিনিয়র নেতাকে রাজনৈতিক বলি দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, লিয়াকত হোসেন খোকার মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেয় জাতীয় পার্টি। পরে সে তালিকায় জিএম কাদের তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। ২৯ নভেম্বর শেরিফা কাদেরের নাম নিশ্চিত হলে কারো সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন জিএম কাদের। নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে নৌকা না থাকলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে জামানত হারান শেরিফা কাদের।

পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত দলটির এক সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ঢাকা টাইমসকে আক্ষেপ করে বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে মঞ্জু হত্যাসহ বেশ কয়েকটি সেনসেটিভ মামলা থাকায় অনেক সময় নিজ কথায় স্থির থাকতে পারেননি। কিন্তু জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে তেমন কোনো মামলাও ছিল না। তিনি অন্তত দলের লাখো নেতাকর্মীর দিকে তাকিয়ে হলেও আপসহীন থাকতে পারতেন। আসলে তার দ্বিমুখী আচরণে আমি মর্মাহত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে কাউকে ছাড় দিতাম না। এখন রাজনৈতিক কোনো নেতার প্রতিই আমার আর কোনো আস্থা নেই।’

জাপা সূত্র জানায়, পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী এবং একাদশ সংসদের নির্বাচিত এমপিদের বাদ দিয়ে নিজ স্ত্রীর মনোনয়ন নিশ্চিত করায় নির্বাচনের শুরু থেকেই জিএম কাদেরের প্রতি বিক্ষুব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সৎ ও সত্যবাদী বলে দাবিদার জিএম কাদের নিজেকে এবং স্ত্রীকে এমপি বানানোর লোভে সততা ও নীতি বিসর্জন দিয়েছেন। আজকে কাজী ফিরোজ, সালমা বা বাবলার মতো সিনিয়র নেতারা সংসদে থাকলে পক্ষান্তরে দলই শক্তিশালী হতো।’

সাবেক ছাত্রনেতা ও জাতীয় পার্টির এক সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পার্টির তৃণমূলে জিএম কাদেরের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যতে নেমে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘এতদিন মনে করেছিলাম রওশন এরশাদ একজন খারাপ মানুষ। এখন বাস্তবতায় মনে হচ্ছে, রওশন এরশাদের যে রাজনৈতিক চরিত্র আছে তা জিএম কাদেরের নেই। তিনি তো (রওশন) একটি ধারায় (সরকারের সঙ্গে) ছিলেন এবং সরাসরি পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু জিএম কাদের সারা বছর নীতি কথা বলে দল ও জনগণের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেও পচেছেন, জাতীয় পার্টিকেও জনগণের কাছে হাসির পাত্রে পরিণত করেছেন।’

এদিকে জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী ঢাকা টাইমসকে জানান, নির্বাচনি প্রচারণায় পার্টি থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা থাকলেও করা হয়নি। শুধু তাই নয়, সরকার সমর্থকদের হামলা এবং প্রশাসনের হুমকি-ধমকি নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য একাধিকবার ফোন করলেও জিএম কাদের বা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কেউ কল রিসিভ করেননি।’

জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার জানামতে, নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য সরকার থেকে বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং দলীয় চাঁদা বাবদ সাড়ে চার কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে, সে টাকা কোথায়? এ টাকার হিসাব জিএম কাদেরকে দিতেই হবে।’

জাপার দপ্তর সূত্র জানায়, জিএম কাদের নির্বাচনের শেষমুহূর্তে কয়েকজন প্রার্থীকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। তবে এখানেও মুখ দেখে এবং জিএম কাদেরের আস্থাভাজন কয়েকজনকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে বলে একটি সূত্র ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। জিএম কাদের যাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছেন তাদের কেউ জয়লাভ করতে পারেননি বলেও জানান দলটির একাধিক নেতা।

দিনবদলবিডি/Rabiul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়