পদ্মায় পানি কমেছে ১৫ হাজার কিউসেক
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
গঙ্গার উজানে ভারত চুক্তি অনুযায়ী পানি না ছেড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলেই ভাটিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায় বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল এলাকাগুলোতে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্বনা।
‘৯৬-এ স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি বছর জানুয়ারির শুরুতেই ১ বছরের ব্যবধানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ কমেছে।
জানা গেছে, গঙ্গার উজানে ভারত চুক্তি অনুযায়ী পানি না ছেড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলেই ভাটিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায় বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল এলাকাগুলোতে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্বনা।
পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আঞ্চলিক হাইড্রোলজি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঐতিহাসিক ওই পানি চুক্তিতে গঙ্গার পানি বণ্টনের সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সেখানে শুষ্ক ও ভরা মৌসুমে ভারত-বাংলাদেশ কোন প্রক্রিয়ায় কতটুকু পানি ভাগাভাগি করবে তার গ্যারান্টি কজ রয়েছে। তবে এই গ্যারান্টি কজে যাই থাকুক না কেন, পানি পেতে গঙ্গার শাখা নদী পদ্মাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
‘৯৬-এ বাংলাদেশ-ভারতের গঙ্গা-পদ্মায় পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পাবনার ঈশ্বরদীর পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। গত ১-২ জানুয়ারি দুই দিন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ৪ হাজার ফুট উজানে প্রতিনিধি দল পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও পরিমাণ করে। ১ জানুয়ারি ৭৫ হাজার ৪০৯ কিউসেক ও ২ জানুয়ারি ৭২ হাজার ৯৬৯ কিউসেক পানি পরিমাপ করা হয়। অথচ ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে পদ্মায় পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল তুলনামূলক বেশি।
প্রথম ১০ দিন | ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার চেয়ে কম পানি প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ-ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে |
দ্বিতীয় ১০ দিন | ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে ও বাকিটা পাবে ভারত |
তৃতীয় ১০ দিন | ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার চেয়ে বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ |
ভারত-বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা ‘৯৬-এর গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরই গঙ্গা-পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানির স্তর পরিমাপ করেন। দুই দেশের পানির প্রবাহের যৌথ পর্যবেক্ষণ চলবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত।
পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম। এ সময়ে উভয় দেশই পানি সংকটে থাকে। তাই প্রতি ১০ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে ফারাক্কায় পানি প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন হয়ে থাকে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার চেয়ে কম পানি প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ-ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে।
দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে ও বাকিটা পাবে ভারত।
তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার চেয়ে বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ।
জেআরসি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পরিমাপ করা হয় ৭৮ হাজার ২৪৪ কিউসেক, ২০২২ সালে ১ জানুয়ারি পানি পরিমাপ করা হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ২০ কিউসেক, ২০২৩ সালে পানির পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৭৩০ কিউসেক ও ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পানির পরিমাপ করা হয় ৭৫ হাজার ৪০৯ কিউসেক।
পানি পরিমাপের কাজ।
জানা গেছে, ভারতের পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ দলে রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় জল কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অঙ্কিত দুদেজা ও সহকারী পরিচালক মুকেশ কুমার শর্মা। ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে সহযোগিতা করছেন পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আঞ্চলিক হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেনসহ পাবনা পাউবো কর্মকর্তারা।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন জানান, ভারতীয় পানি পর্যবেক্ষক দলের দুই প্রতিনিধি দল ১-২ জানুয়ারি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ করেছেন। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত যৌথভাবে পানি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চলবে। বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াদুর রহমানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যেবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি প্রবাহ পরিমাপ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
‘৯৬-এ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গঙ্গার পানি বণ্টন সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় ও ‘৯৬-এর ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে নির্ধারিত হয় উভয় পরে সম্মতিক্রমে গৃহীত ফর্মুলা মোতাবেক ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি হবে। সেই সঙ্গে নদীটির জলপ্রবাহের মাত্রা ভারত গত ৪০ বছরের গড় মাত্রায় বজায় রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
দিনবদলবিডি/Hossain