নিভৃত পল্লীর এক কবিকে ঘিরে জাদুর শহরে ভিন্নধর্মী ‘কাব্য আড্ডা’

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:০৭, শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়ায় এক সীমান্তবর্তী গ্রামে জন্ম নেয়া কবি ওবায়েদ মজুমদার সত্তর দশক থেকেই সাহিত্য চর্চা করছেন নিভৃতে। এবারের অমর একুশে বইমেলায় তার ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ ও ‘নর্মদা রমণী’ নামক দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে; যেগুলোর মোড়ক উন্মোচন হলো গত বৃহস্পতিবার সেই কাব্য আড্ডায়। রাজধানীর কাঁটাবনের কবিতা ক্যাফেতে সেই আড্ডা লেখক-কবি-সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

তখনও জাদুর শহরে বিষাদ নামেনি। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর বইমেলা, শাহবাগের ফুলের দোকানে লম্বা লাইন কিংবা মিন্টু রোডের সুনশান আবহে যুগলদের আড্ডা—বছরের একমাত্র অতিরিক্ত দিনে এমনই আমুদ-উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল পুরো ঢাকা। সেই সময়ে শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রেই দীর্ঘ পথপরিক্রমা পাড়ি দেওয়া নিভৃত পল্লির এক কবিকে ঘিরে আয়োজিত হলো ভিন্ন একটা ‘কাব্য আড্ডা’। তিনি আর কেউ নন, সীমান্তের কবিখ্যাত ওবায়েদ মজুমদার।

 

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়ায় এক সীমান্তবর্তী গ্রামে জন্ম নেয়া কবি ওবায়েদ মজুমদার সত্তর দশক থেকেই সাহিত্য চর্চা করছেন নিভৃতে। এবারের অমর একুশে বইমেলায় তার ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ ও ‘নর্মদা রমণী’ নামক দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে; যেগুলোর মোড়ক উন্মোচন হলো গত বৃহস্পতিবার সেই কাব্য আড্ডায়। রাজধানীর কাঁটাবনের কবিতা ক্যাফেতে সেই আড্ডা লেখক-কবি-সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

 

বিশিষ্ট কবি ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত রেজাউদ্দিন স্টালিনের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন কবি, গবেষক ও সাংবাদিক কাজল রশীদ খান। কবি সৈকত হাবিবের সঞ্চালনায় ওবায়েদ মজুমদারের কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন কবি টোকন ঠাকুর, লেখক ও গবেষক ড. হালীম দাদ খান, লেখক ও চলচ্চিত্রকার ইরানী বিশ্বাস, কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ, কবি শফিকুল হাসান, লেখক ও অনুবাদক ইসফানদিওর আরিয়ান, লেখক ও সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।

সভাপতির বক্তব্যে কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, ওবায়েদ মজুমদারের সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হয়, তখন আমি বুঝতে পারিনি যে তিনি কবিতার ব্যাপারে এত সিরিয়াস। এখন মনে হয়েছে, না। কবি ওবায়েদ মজুমদার সামাজিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তার মধ্যে একটি ইতিহাসচেতনা আছে। দ্রোহ, প্রেম আছে।

 

বক্তারা সবাই এ বিষয়ে একমত হন যে, ওবায়েদ মজুমদার প্রান্তে বসবাস করলেও তার কবিতায় দ্রোহ, প্রেম, বর্তমান সময়ের নানা অসংঙ্গতি ও সমস্যার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সীমান্তে বসে তিনি কবিতা ও সাহিত্যপ্রেমিদের অনুপ্রেরক হিসেবে কাজ করেছেন।

ছোট ছোট গ্রাম মিলে আমাদের এই দেশ, বিশাল পৃথিবী। আসলে গ্রামের আছে নিজস্ব জীবনীশক্তি। কবি ওবায়েদ মজুমদারের কবিতায় তেমনই ফুটে উঠেছে বার বার। তিনি অজোপাড়ায় পুকুরের পাড়ে বসে বসেই কলমের কালি খরচ করে সংগ্রাম করছেন যুগ যুগ। তার কবিতার সীমাবদ্ধতা শুধু গ্রাম নিয়ে নয়; ভাষা আন্দোলন থেকে পৃথিবীর নানা প্রান্তের প্রেম-বিরহ-যুদ্ধ-বিগ্রহের নানা কথকতা উঠে আসে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! তার একটা কবিতার মাত্র তিনটি লাইন ঈশ্বর-সংগ্রামীদের একই সুতোয়া গেঁথেছেন—

‘‘গুলি হলো।
ঈশ্বর জানতেন না গুলি হবে।
মিছিলে কি গুলি হয়?’’

ওবায়েদ মজুমদার নিজেই জীবনের ভাঁজে ভাঁজে কবিতার আঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পাওয়া-না পাওয়ার অনুরণন থেকে সংবেদনশীলতাকে নির্ভার কাব্যিক করে তুলে আনার কৃত কৌশল একান্তই বিনয়ীও ঘরনার। তার গ্রামীণ দর্শন বা একতরফা অবদমন থেকে মাউথ অর্গানের মতো বাজিয়ে সুর তুলে এনে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সর্বজনের মধ্যে; তা আড্ডায় উপস্থিত সাহিত্যিকরা কথা ভাঁজে ভাঁজে বার বার প্রমাণ করেছেন। সেই আড্ডায় হঠাৎই মনে পড়লো কবির ‘আবার ফিরাও মোরে’ কবিতাটি।

‘‘প্রশ্ন জাগে—
সম্পর্কগুলো কই?
শতরূপা পিঠা আর রসের শিন্নি কই?
কোথায় পাবো মাটির হাঁড়ির ভাত
কোথায় পাবো জেয়াফতের দই?’’

কবিতাটি আমার মনে আওড়াতে আওড়াতে শেষ হলো আড্ডা। অপরদিকে খবর এলো শহরের অপরপ্রান্তে দাউ দাউ করে জ্বলছে একের পর এক প্রাণ। হয়তো তারাও আকুতি করে বলছিল, ‘আবার ফিরাও মোরে....।’

দিনবদলবিডি/Nasim

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়