আবহাওয়া পরিবর্তনে বাড়ছে জ্বর-সর্দি-কাশি, চিকিৎসা কী জানুন

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৪৭, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় জেরবার জনজীবন। দিনে গরম, শেষ রাতে হালকা ঠান্ডা। তাতে বাড়ছে হাঁচি, কাশি, জ্বর, সর্দির মতো সমস্যা। বেশি করে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে বয়স্ক ও শ্বাসের সমস্যায় ভোগা রোগীদের নিয়ে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বারবার আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে থাকলে এই ভোগান্তিও বাড়ে।

আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এমনিতেই ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ মাথাচাড়া দেয়। তার সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে। ফলে শিশু থেকে বয়স্কদের অনেকেই জ্বর এবং টানা শুকনো কাশির প্রকোপে ভুগছেন। রাতে ঘুমানোর সময় সেই কাশির দমক আরও বাড়ছে। কাশির সিরাপ বা অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধেও সহজে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

বক্ষরোগ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ঠান্ডা থেকে তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেলে গলায় বসে থাকা ভাইরাসগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন শ্বাসনালির উপরিভাগে সংক্রমণ ঘটে। প্রতি বছরই শীতের পর এই সমস্যা দেখা যায়।

এর চিকিৎসার জন্য সাধারণত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিছু উপদেশ মেনে চললে ঘরে বসেই নিজের যত্ন নেওয়া যায়। তা ছাড়া কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমানো যায়।

ফ্লু ও সর্দি-কাশি বা ঠান্ডার লক্ষণ

 

ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির লক্ষণ প্রায় একই রকম। তবে সাধারণ সর্দি-কাশির তুলনায় ফ্লু এর লক্ষণগুলোর তীব্রতা বেশি হতে পারে এবং সেরে উঠতেও বেশি সময় লাগতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো লক্ষণগুলো বড়দের তুলনায় বেশিদিন ধরে থাকতে পারে।

 

কীভাবে বুঝবেন আপনার ফ্লু হয়েছে না কি সর্দি-কাশি?

ফ্লুতে শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের পাশাপাশি ডায়রিয়া ও বমির সমস্যা বেশি দেখা যায়। সেই সাথে শিশুর কান ব্যথা হতে পারে এবং চঞ্চলতা কমে যেতে পারে। অন্যদিকে জ্বর, নতুন করে একটানা কাশি হওয়া, অস্বাভাবিক স্বাদ-গন্ধ পাওয়া অথবা স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা কোভিড-১৯ ইনফেকশন বা করোনার লক্ষণ হতে পারে।

 

ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা

কারণ ও লক্ষণে পার্থক্য থাকলেও ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা প্রায় কাছাকাছি।

 

ঘরোয়া চিকিৎসা

বিশ্রাম নিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। শরীর উষ্ণ রাখুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানির পাশাপাশি তরল খাবারও উপকারী। যেমন- ফলের জুস, চিড়া পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, ইত্যাদি। পানিশূন্যতা এড়াতে এমন পরিমাণে তরল খাওয়া উচিত যেন প্রস্রাবের রঙ স্বচ্ছ অথবা হালকা হলুদ হয়।

গলা ব্যথা উপশমের জন্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। তবে ছোট শিশুরা ঠিকমতো গড়গড়া করতে পারে না বলে তাদের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ প্রযোজ্য নয়। কাশি উপশমের জন্য মধু খেতে পারেন। এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য এই পরামর্শ প্রযোজ্য নয়

ফ্লু ও সর্দি কাশির ওষুধ

সাধারণ সর্দি-কাশি সাধারণত কোনো ওষুধ ছাড়াই ৭–১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। ফ্লু-ও সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। তবে লক্ষণ উপশমে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন—

প্যারাসিটামল

জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। তবে প্যারাসিটামল সেবন চলাকালে অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ, কফ সিরাপ অথবা সর্দি-কাশির হারবাল ওষুধ সেবনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসবের অনেকগুলোতে প্যারাসিটামল থাকে। ফলে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে প্যারাসিটামল সেবন করার ঝুঁকি থাকে।

নাক বন্ধের ড্রপ

এগুলোকে ‘ন্যাসাল ডিকনজেসট্যান্ট’ বলা হয়। নাক বন্ধ উপশমে এসব ড্রপ ব্যবহার করা যায়। তবে টানা ১ সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করবেন না, তাতে নাক বন্ধের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। ১ সপ্তাহেও উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের এসব ড্রপ দিবেন না। ডাক্তারের পরামর্শে ৬–১২ বছর বয়সী শিশুদের এই ধরনের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রেও সাধারণত পাঁচ দিনের বেশি দেওয়া হয় না।

কফ সিরাপ

কাশি বেশি হলে সর্দি-কাশির ওষুধ বা কফ সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

অ্যান্টিহিস্টামিন: নাক থেকে পানি পড়া এবং হাঁচি কমানোর জন্য ডাক্তার এই ধরনের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। এগুলো কারও কারও কাছে ‘অ্যালার্জির ওষুধ’ হিসেবেও পরিচিত।

অ্যান্টিভাইরাল

সাধারণত ফ্লু-এর চিকিৎসায় বিশেষ কোনো ওষুধের দরকার হয় না। তবে যাদের ফ্লু-এর তীব্র লক্ষণ দেখা দেয় এবং জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সেবন করতে পারেন। তবে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া শিশুদের কোনো ধরনের ওষুধ দিবেন না।

১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ফ্লু হয়েছে বলে সন্দেহ হলে তাদের অ্যাসপিরিন ও স্যালিসাইলেট যুক্ত সব ধরনের ওষুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। স্যালিসাইলেট যুক্ত ওষুধের মধ্যে রয়েছে পিংক-বিসমল, পেপ্টো, পেপ্টোফিট ও পেপ্টোসিড জাতীয় পেট খারাপের ওষুধ।

অ্যান্টিবায়োটিক কেন নয়?

সর্দি-কাশি ও ফ্লু-এর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। কারণ সর্দি-কাশি ও ফ্লু ভাইরাস বাহিত রোগ। আর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়। তাই অযথা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে অন্যান্য জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দিনবদলবিডি/Jannat

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়