অস্ত্রোপচারে পুরুষকে 'নারী' বানাতেন তারা

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:০০, রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২, ১৬ শ্রাবণ ১৪২৯
হাদিউজ্জামান ও সোনিয়া খাতুন

হাদিউজ্জামান ও সোনিয়া খাতুন

লিঙ্গ পরিবর্তনে যারা আগ্রহী, তাদের প্রথমে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর অস্ত্রোপচার করেন হাদিউজ্জামান ও তার স্ত্রী…

স্ত্রী সোনিয়াকে নিয়ে ঢাকার মালিবাগে 'লেজার বিউটি পার্লার' নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেন খুলনার ফুলতলার ছাতিয়ানি এলাকার হাদিউজ্জামান। তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের লিঙ্গ রূপান্তর, ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট ও উচ্চমাত্রার হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করে নারী-পুরুষের কণ্ঠসহ অন্যান্য অবয়ব বদলে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড চলত।

কোনো চিকিৎসাবিদ্যা না জানা সত্ত্বেও বছরের পর বছর লিঙ্গ বদলের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে আসছিলেন এই ভুয়া চিকিৎসক। মূলত তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনকে টার্গেট করে ভয়ংকর এই কারবার চালিয়ে আসেন ওই দম্পতি।

গত বুধবার রাতে রাজধানীর মালিবাগে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক হাদিউজ্জামান, তার স্ত্রী সোনিয়া খাতুনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার অপর দু'জন হলেন- তাদের সহযোগী নুর ইসলাম ও জনি আহমেদ। এরপর তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশ জানায়, হাদিউজ্জামানের একটি বড় চক্র আছে। নানা প্রলোভন ও ফাঁদ পেতে অনেককে তার কাছে নিয়ে আসা হয়। লিঙ্গ পরিবর্তনে যারা আগ্রহী, তাদের প্রথমে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর অস্ত্রোপচার করেন হাদিউজ্জামান ও তার স্ত্রী। আর পরিবর্তিত অবস্থায় তৃতীয় লিঙ্গের এসব ব্যক্তি চাঁদাবাজি ও ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ান। আবার মাদক বহন, মাদক পাচার, মাদক-বাণিজ্যে জড়াতেও অনেকে স্বেচ্ছায় তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত হন।

ডিবির পরিদর্শক শেখ আতিয়ার রহমান জানান, তার বিউটি পার্লার থেকে ১৭টি হরমোন ইনজেকশন, সার্জিক্যাল ব্লেড ২৫টি, ব্লাড কালেকশন টিউব ৭০টি, সার্জিক্যাল কাঁচি ১২টি, রং ফর্সা করার ইনজেকশন ১০টি, স্যালাইনের ক্যানোলা ৩০টি ও ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। বিউটি পার্লারের আড়ালে এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন বিনা বাধায় চালিয়ে আসছিলেন তারা।

ডিবির আরেক কর্মকর্তা জানান, অনেকেই জানতেন, হাদিউজ্জামান সত্যিকারের চিকিৎসক। অনেক প্লাস্টিক সার্জন তার কাছ থেকে নানা সরঞ্জাম কিনে নিতেন। যদিও ভুয়া চিকিৎসক স্বীকার করেছেন, এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। একেকজনের লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য ২০-৩০ হাজার টাকা নিতেন তিনি।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে কথিত চিকিৎসক পুলিশকে জানিয়েছেন, হাদি একসময় খুলনায় এক সার্জনের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ওই সার্জনের নাম প্রশান্ত। সেখানে পুরুষদের অপারেশনের মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করা হতো। প্রায় ছয় বছর আগে সেখান থেকে রাজধানীর মালিবাগে চলে আসেন হাদিউজ্জামান। মালিবাগের মাহি হাসান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় লেজার বিউটি পার্লারের আড়ালে তিনি পুরুষদের তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত করেন। শারীরিক অবয়বও পরিবর্তন করে দেওয়া হতো। স্ত্রী সোনিয়া খাতুনসহ বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে তার। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম চীন থেকে আনত চক্রটি। এ পর্যন্ত অন্তত একশ ব্যক্তিকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করেছেন তিনি। গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার শাহজাহানপুর থানায় মামলা করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া এই চক্রের আর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, লিঙ্গ রূপান্তর দেশের আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া গ্রেপ্তার দম্পতির কোনো চিকিৎসা সনদও নেই।

দিনবদলবিডি/Rony

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়