পতিত জমিতে খিরা চাষে সফল একরাম

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৪৮, শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪, ৮ চৈত্র ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

৩০-৪০ দিনের মধ্যে ফলন উঠতে শুরু করে। ক্ষেতের খিরা দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্ষেত পরিচর্যা শুরু করেন। প্রথমে একদিন পরপর ২০০-৩০০ কেজি করে খিরা তুলে বিক্রি করেছেন। গত দুই মাসে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার খিরা বিক্রি করেছেন। এতে তার মজুরি বাদ দিয়ে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। প্রতিদিন সকালে উপজেলা সদরে গিয়ে পাইকারদের কাছে নিয়ে খিরা বিক্রি করেন।

এবার পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘা পতিত জমিতে খিরার চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক একরামুল হক। মাত্র ৭ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে দুই লাখ টাকার খিরা বিক্রি করেছেন।

খিরা হচ্ছে সালাদ তৈরির প্রধান উপকরণ। অনেকের কাছে এ সবজি চৈত্রের খরতাপে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণের দারুণ টনিক হিসেবে কাজ করে। বাজারেও সবজিটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর সব সময় খিরার চাহিদা থাকায় কৃষকরাও এ সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ও উত্তর চর চান্দিয়া এবং পূর্ব বড় ধলীসহ কিছু গ্রাম ঘুরে খিরার আবাদের এ চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলার দক্ষিণ চর চান্দিয়া এলাকায় গিয়ে খিরার ক্ষেতে কথা হয় কৃষক একরামুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, তার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে শুধুমাত্র বন্যা ও জোয়ারের লবণাক্ত পানির কারণে আমন ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল করা যেতো না।

 

এবার তিনি লবণের চরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে খিরার বীজ রোপণ করেন। সমতল মাটি থেকে প্রায় এক-দেড় ফুট উঁচুতে এটি রোপণ করা হয়। এই উচ্চতা তৈরি করা হয়েছে জমির মাটি কেটে স্তুপ করে। এক বিঘা জমিতে খিরা চাষে তার প্রায় ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। 

 

৩০-৪০ দিনের মধ্যে ফলন উঠতে শুরু করে। ক্ষেতের খিরা দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্ষেত পরিচর্যা শুরু করেন। প্রথমে একদিন পরপর ২০০-৩০০ কেজি করে খিরা তুলে বিক্রি করেছেন। গত দুই মাসে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার খিরা বিক্রি করেছেন। এতে তার মজুরি বাদ দিয়ে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। প্রতিদিন সকালে উপজেলা সদরে গিয়ে পাইকারদের কাছে নিয়ে খিরা বিক্রি করেন।

একরামুল হক আরো জানান, চলতি পুরো মাস ধরে খিরা বিক্রি করতে পারবেন। তাই এ ফসলটি কৃষকদের কাছে লাভজনক হয়ে উঠছে। এছাড়া তিনি সরিষা, বোরো ধান, সূর্যমুখী, টমেটো, বেগুন, তরমুজ, শিম, মটরশুটি, লাউ-কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ করেছেন।

একরামুল হক বলেন, তিনি লবণ ছাড়া আর কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাইরে থেকে কিনে খান না। সবই তার নিজস্ব চাষাবাদের ফলন রয়েছে।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যদি অসময়ে বৃষ্টি হয় তাহলে জমিতে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। পানি জমলে গোড়া পচে খিরার গাছ মরে যাবে। সে জন্য মাটি কেটে স্তুপ করে এই উচ্চতা তৈরি করা হয়েছে। আবার খরতাপে মাটি শুকিয়ে গেলে তখন জমে থাকা বা সেচের পানি কাজে লাগানো যায়।


কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন তিনিও এক বিঘা জমিতে খিরার আবাদ করেছেন। প্রতিদিন সকালে খিরা তুলে বাজারে বিক্রি করেন। দিনের বেলায় অন্যান্য ফসলের পরিচর্যা শেষে বিকেলে তিনি খিরার জমি পরিচর্যা করেন। গত বছরও তিনি খিরা চাষ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার যে ফলন হয়েছে তা বাজারে বিক্রি করতে পেরে গতবারের ক্ষতি পুষিয়েও লাভবান হয়েছেন। তিনি খিরা ছাড়াও লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছেন। এ সবজির বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, পূর্ব বড়ধলী এলাকার একরামুল হক শুধু কৃষক নয়, তিনি একজন কৃষি উদ্যোক্তা। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তাকে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয়। একরামকে দেখে আরো অনেকে খিরাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলায় এবার প্রায় ২৫৫ হেক্টর জমিতে খিরার চাষাবাদ হয়েছে। আবহওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরাও বেশ লাভবান হয়েছেন। সামনে খিরার চাষ আরো বাড়বে।

তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন যুক্ত হওয়ায় চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকরা অনেকটা কৌশলী হয়ে উঠছেন। তারা নিচু জমিতে ধান চাষের পাশপাশি মৌসুমভিত্তিক সবজি আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য ক্রেতাকে উৎপাদনস্থলে টেনে আনছেন। এতে বুঝা যায়, কৃষকরা নিত্য নতুন কৃষি প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন।

দিনবদলবিডি/Nasim

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়