সড়কে মৃত্যুর মিছিল নিষিদ্ধ যানে

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:১০, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশে অবাধে সড়ক-মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। নিয়মনীতি না মেনে চলছে ৫০ লাখের বেশি মোটরসাইকেল। গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী নিষিদ্ধ যান কিংবা মোটরসাইকেল।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। দেশে মাত্র একদিনের ব্যবধানে দুটি বড় বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই দুই দুর্ঘটনার মূলেই ছিল পরিবহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স ইস্যু। এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী নিষিদ্ধ যান।

এসব তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আর সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন মাত্র ১০ জন। ফলে বেশিরভাগ কাজেই হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ওপর নির্ভর করতে হয় বিআরটিএ’র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে অবাধে সড়ক-মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। নিয়মনীতি না মেনে চলছে ৫০ লাখের বেশি মোটরসাইকেল। গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী নিষিদ্ধ যান কিংবা মোটরসাইকেল।

গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের কানাইপুরের ইউনিক পরিবহনের একটি বাস যাত্রীসহ পিকআপকে চাপা দেয়। এতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে জানা যায়, বাসটির ফিটনেস ছাড়পত্র ও ট্যাক্স টোকেন কোনো কিছুই ছিল না। এমনকি যে সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেই রুটে চলাচলের অনুমোদনও ছিল না।

বুধবার ঝালকাঠির গাবখানে অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। এ দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ট্রাকটির চালক আল আমিনের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। তিনি গাড়ির মূল চালকও নন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বুধবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে (মার্চ) সারাদেশে ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ৫৬৫ জন। আহত হয়েছেন ১২২৮ জন। এই এক মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। ১৮১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মোট ২০৩ জন মারা গেছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৭৮ শতাংশ এবং মোট নিহতের ৩৫.৯২ শতাংশ। একই সময়ে রেলপথে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ৮৬ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে সাতটি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৯৭টি দুর্ঘটনায় ৬১২ জন নিহত এবং ১৩৩১ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে বিআরটিএ বলছে, সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সারাদেশের সড়কপথ নিরাপদ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া বিআরটিএ’র পুলিশ প্রশাসন কিংবা সাধারণ মানুষ- কোনো পক্ষই যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। মানা হচ্ছে না আইন। ফলে ধারাবাহিক দুর্ঘটনার প্রতিকারও মিলছে না।

বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, সারাদেশে অবৈধ যানবাহন অবাধে চলছে। পিকআপে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এসব দেখভালের দায়িত্ব তো বিআরটিএ’র একার নয়। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করলে সংকট সমাধান হবে না। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধ নছিমন-করিমন, থ্রি-হুইলার, ফিটনেসবিহীন মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল সড়ক-মহাসড়কে চলাচল, মোটরযানের অতিরিক্ত গতি এবং মালবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন ইত্যাদি অনিয়মের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং ট্রাফিক পুলিশের অভিযান জোরদার করার মাধ্যমে এসব অনিয়ম বন্ধ করে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৬টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ৫০ লাখ ৬ হাজারের বেশি। রাজধানীতে নিবন্ধিত যান ২০ লাখ ৯৩ হাজার। ১১ লাখ ১৪ হাজার ৮০০’র বেশি মোটরসাইকেল। নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে প্রায় সোয়া ৬ লাখের ফিটনেস নেই। অর্থাৎ ফিটনেস সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক যানবাহনের মধ্যে প্রায় ৩৯ ভাগ অবৈধভাবে চলাচল করছে। আবার যে পরিমাণ যানবাহন নিবন্ধিত, লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা তারচেয়ে ১২ লাখ কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল ব্যয় হলেও যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স নিশ্চিত করা, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো ও শ্রমিকদের মাদক গ্রহণ বন্ধ করা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা, সড়কের ত্রুটি দূর করা, অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা এসব নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে দুর্ঘটনাও কমেনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, দুর্ঘটনা রোধে ট্রেনিং আর লিফলেট বিতরণ ছাড়া কোনো কাজ নেই। এ অবস্থায় নিরাপদ সড়ক চাওয়া অলিক স্বপ্ন।

বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদীউজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমরা চার লেন করে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি। যার যে দায়িত্ব, তা সঠিকভাবে পালন করছি না। আইনের শতভাগ প্রয়োগ ছাড়া পথ নিরাপদ হবে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, আমরা চাই সড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন বন্ধ হোক। কেন বন্ধ হয় না, তার কারণ বের করতে হবে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরলেই দুর্ঘটনা কমবে।

এসব বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টার কমতি নেই। এর মধ্যেও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বদনাম সৃষ্টি করছে।

দিনবদলবিডি/Hossain

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়