ছিনতাইকারী ধরা সেই পারিশা ফিরে পেলেন ফোন
নিজস্ব প্রতিবেদক || দিন বদল বাংলাদেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার বাসে ফোন ছিনতাই হওয়ার পর ধাওয়া করে একজন ছিনতাইকারীকে ধরে ফেললেও ওই সময় তার ফোনটি ফেরত পাননি। ১১ দিন পর পুলিশ আরেক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার ও ফোনটি উদ্ধার করে আজ ফেরত দিয়েছে তাকে।
বুধবার (৩ আগস্ট) তেজগাঁও থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামান।
জানা যায়, পারিশার ফোন ছিনতাইয়ের প্রধান অভিযুক্ত আকাশ গত ১৪ জুলাই জামিনে কারাগার থেকে বের হন। এরপর আবার জড়ান ছিনতাইয়ে।
কারাগার থেকে বেরোনোর সাত দিনের মাথায় পারিশার মোবাইল ফোনটি ছিনতাই করে আকাশ। বিক্রি করে মাত্র চার হাজার টাকায়। বিক্রির পর ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি টের পেয়ে মোবাইল ফোনটি রিসেট দেয় ক্রেতা।
ঘটনা ২১ জুলাইয়ের। মাস্টার্স থিসিসের কাজ শেষে বাসযোগে বাসায় ফিরছিলেন পারিশা। সন্ধ্যার দিকে কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনে জ্যামে আটকা বাসের জানালা দিয়ে তার পোকো এম থ্রি কালো রঙের মোবাইল ফোনটি টান দিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী।
পারিশা দ্রুত বাস থেকে নেমে ধাওয়া করে সন্দেহভাজন একজনকে ধরে ফেলেন। এরপর তাকে উত্তম-মধ্যম দেন। পারিসার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ঘটনাস্থল থেকে আরো একজনকে ধরে।
তবে সন্দেজভাজন দুজন বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পারিশার মোবাইল ছিনতাইয়ে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে জানা যায়। পারিশা ও তার বন্ধুদের সাহসী ভূমিকার বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হয়।
এডিসি রুবাইয়াত জামান বলেন, ওই ঘটনায় সেদিনই তেজগাঁও থানায় একটি জিডি করেন পারিশা আক্তার। পরে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন তিনি। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও অপরাধীর বিষয়ে অভিযোগকারীর মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে তেজগাঁও থানার পুলিশ।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাশেদুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রিপন ওরফে আকাশ নামে আরেকজনের জড়িত থাকার কথা জানান। পরে আকাশকে ধরতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সে জেলে আছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ ওই ছিনতাইয়ে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, ছিনতাই করা মোবাইল ফোনটি চার হাজার টাকায় কারওয়ান বাজারের চোরাই মোবাইল ক্রেতা শফিকের কাছে বিক্রি করেন। তার দেয়া তথ্যে, কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় শফিককে এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পারিশার ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন।
পারিশার সাহসিকতার বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পারিশা ও তার বন্ধুরা সেদিন সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ধরনের অপরাধীরা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। যা হোক, পারিশা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। ছিনতাইকারীদের পোশাক ও শারীরিক গঠন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন পুলিশকে। আমরা তার বিবরণ অনুযায়ী ছিনতাই করার সময়কার পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
তেজগাঁও এলাকায় অনেক ছিনতাই হলেও তা প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। শুধু কী ভাইরাল হলেই মোবাইল উদ্ধার হয়- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘পারিশা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি জিডির পর মামলা করেছেন। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন।’
এই ছিনতাইয়ে জড়িত আকাশ গত ১৪ জুলাই অন্য একটি মামলায় জামিনে বেরিয়েছে জানিয়ে এডিসি বলেন, ‘কিন্তু সমস্যা এটাই যে, জামিনে বেরিয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে সে। আমরা শুধু তেজগাঁও এলাকাতেই গত জুলাইয়ে অন্তত ৫০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছি। ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে সাতটি মামলার বাদী কিন্তু পুলিশই।’
পারিশার মামলায় জড়িতরা যাতে পুনরায় জামিনে বেরিয়ে অপরাধে জড়াতে না পারেন, সেজন্য অপরাধ দমন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে তদন্ত কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে শেষ করা হয়েছে বলে জানান এডিসি। বলেন, ‘মামলা করার ১০ দিনের মধ্যে আজ (বুধবার) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’
মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার ও তার ফোনটি উদ্ধার হওয়ায় অনেক খুশি পারিশা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পারিশা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ খুব দ্রুত আমার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে। সবচেয়ে খুশির কথা হলো, ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমি আশা করব, এই ছিনতাইকারীরা যেন কোনোভাবে জামিনে ছাড়া না পায়। যাতে আবারো কেউ ছিনতাইয়ের শিকার না হয়।’
নিজের সাহসিকতা সম্পর্কে পারিশা বলেন, ‘আমার সাহসিকতায় জনগণসহ সবাই সাহস দিয়েছেন। আমি চাই, সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসুক। সবাই সাহসিকতার পরিচয় দিক।’
এডিসি রুবাইয়াত বলেন, অভিযুক্ত আকাশের নামে বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। এছাড়া রাশেদের বিরুদ্ধে চারটি ও শফিকের নামে দুটি মামলা আছে বলে জানা গেছে।
দিনবদলবিডি/আরএজে