দেশের ইমেজ কি ড. ইউনূসের ওপর নির্ভর করে?

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:০১, শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

 ‘তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দণ্ডিত একজন আসামি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। তিনি মামলা নিয়ে কথা বললে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।'

বাংলাদেশের ইমেজ (ভাবমূর্তি) নিয়ে কথা বলছেন কেন? দেশের ইমেজ কি ড. ইউনূসের ওপর নির্ভর করে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য আসামিদের জামিন শুনানি শেষে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন কথা বলেন তিনি।

মো. খুরশীদ আলম বলেন, যিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কেন কথা বলবেন? আমি মনে করি ড. ইউনূস এ নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার রাখেন না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দণ্ডিত একজন আসামি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। তিনি মামলা নিয়ে কথা বললে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তিনি জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আরজি করেছেন, আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। তার আইনজীবী সেটি বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নিয়ে ইমেজ (ভাবমূর্তি) নিয়ে কথা বলছেন কেন? বাংলাদেশের ইমেজ কী ড. ইউনূসের ওপর নির্ভর করে? মোটেও না, কখনো না।

দুদুকের প্রধান আইন কর্মকর্তা ও কলকারখানা পরিদশর্ক প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম আরও জানান, মাথায় রাখতে হবে সাজা বাতিল চেয়ে তিনি আপিল করেছেন। কাজেই তিনি কীভাবে বলেন বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে?

‘আমি মনে করি একটি আপিল নিয়ে শুনানির পর বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলা ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ। মাথায় রাখতে হবে ড. ইউনূস সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার ওপর দণ্ড বহাল আছে। কাজেই দণ্ড মাথায় নিয়ে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করা আইনের দৃষ্টিতে সমীচীন নয়।’

এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ড. ইউনুসসহ চার জনের জামিনের মেয়াদ আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত বড়ানো হয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২৩মে) আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালতে ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন। একই সঙ্গে ড. ইউনূসসহ চারজনের শুনানির জন্যে ওইদিন ঠিক করেছেন আদালত।

জামিন আবেদন এবং খালাস চেয়ে করা আপিলের শুনানি থাকায় এদিন বেলা ১১টার দিকে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।আদালতে ড. ইউনূসসহ এ মামলায় অন্য বিবাদী গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দুটি দেশের কূটনীতিকরাও শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালতের কার্ক্রম শুরু হলে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি খেলার চেয়ে আপিলের শুনানি মুলতবি করার আবেদন করেন। এরপর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ওই আবেদনের বিরোধিতা করেন। এরপর আদালত আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিরনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। একই সঙ্গে ওইদিন আপিলের শুনানির দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

মামলায় ১ জানুয়ারি এ অর্থনীতিবিদসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত অন্য তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকে এক মাসের অন্তর্র্বতীকালীন জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।

২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।

দিনবদলবিডি/Hossain

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়