শুধু ভাড়াই কমেনি বরিশাল-ঢাকা নৌপথে, কমেছে নৌযানও

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:১১, সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২, ২০ আষাঢ় ১৪২৯
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সপ্তাহ না গড়াতেই বরিশাল-ঢাকা পথে লঞ্চের ভাড়াই শুধু কমেনি, কমেছে নৌযানের সংখ্যাও। পরিস্থিতি আগের জায়গায় ফিরে যাবে মনে করলেও মালিক-কর্মচারীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে ভাড়া কমেছে ডেকে প্রায় অর্ধেক, প্রথম শ্রেণির কেবিনে কমেছে পাঁচ শ টাকা, আর দ্বিতীয় শ্রেণির সোফার ভাড়া এক শ থেকে দুই শ টাকা করে কমেছে গত কয়েক দিনে।

এমভি মানামী লঞ্চের কর্মচারীর বাবুল মিয়া বলেন, তাদের লঞ্চে ডেকের ভাড়া সাড়ে তিন শ’র জায়গায় ২০০ টাকা করা হয়েছে। দেড় হাজার টাকার সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার টাকা এবং ডবল কেবিন আড়াই হাজার থেকে কমিয়ে দুই হাজার করা হয়েছে।

‘কারণ যাত্রী আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে মাত্র শ তিনেক যাত্রী নিয়ে বরিশালে এসেছি। কারণ টাকা একটু বেশি খরচ হলেও সবাই এখন পদ্মা সেতু দিয়ে যেতে আগ্রহী। নতুন নতুন সবাই পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছে।’

‘পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে’ বলে জানান সুরভী-৯ লঞ্চের কর্মচারী দিপু মিয়া।

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গেল কেবিনের যাত্রী এখন বাসে চলে যাচ্ছে। তিন ঘণ্টায় ঢাকা যেতে পারছে। তাহলে তারা কেন পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করবে?’

লঞ্চের সংখ্যাও কমেছে বলে জানান কর্মচারীরা।

বরিশাল ঘাটের লঞ্চের কলম্যান বাবুল শরীফ বলেন, ‘প্রতিদিন বরিশাল থেকে সাতটি লঞ্চ ছেড়ে যায় আর ঢাকা থেকে বরিশালের পথে আসে সাতটি লঞ্চ।’

‘কিন্তু বৃহস্পতিবার বরিশাল থেকে পাঁচটি লঞ্চ ছেড়ে গেলেও ঢাকা থেকে এসেছে চারটি। আর শুক্রবার বরিশাল থেকে ছেড়েছে চারটি লঞ্চ।’

বাবুল বলেন, ঢাকা-বরিশাল যাওয়া-আসা করতে একটি লঞ্চের বিভিন্ন ফি ও তেল খরচসহ সাড়ে তিন  থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়। টাকা না উঠলে মালিকরা লঞ্চ চালাবে কিভাবে?

‘আগে একটি লঞ্চের ডেকে পাঁচশ থেকে সাতশ যাত্রী আসত। সেখানে শুক্রবার এসেছে দুই শ থেকে আড়াই শ  যাত্রী। ভাড়াও কমেছে। কিন্তু খরচ তো কমেনি।’

সুন্দরবন-১০ লঞ্চের কর্মচারী মো. হুমায়ন কবিরও এক ধরনেই তথ্য দিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান।

তবে এতে লঞ্চের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।

ঈদের সময় কেমন চিত্র দাঁড়ায় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন বলে জানান লঞ্চের কর্মচারীরা।

কলম্যান বাবুল বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রী ফেরাতে মালিকরা ঈদের পর সভা করবেন। সেই সভায় নানা পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে শুনেছি।’

তবে যাত্রী কমে যাওয়ায় হতাশ হননি মালিকরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহ সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুন্দরবন লঞ্চের মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী একটু কমেছে। ব্যবসায়ীক কারণে ভাড়া একটু কমানো হয়েছে।’

‘তবে এটা কোনো সমস্যা না। প্রথম প্রথম দুই-এক মাস যাত্রী একটু কম হবে। পরে আবারও স্বাভাবিক হয় যাবে।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, লঞ্চে পরিবার-পরিজন ও মালপত্র নিয়ে শান্তিতে যাওয়া যায়। বাসে সেটা সম্ভব না। যাত্রীরা লঞ্চেই ফিরে আসবে বলে আমি আশাবাদী।

আসন্ন ঈদের তিন দিন আগে লঞ্চে বিশেষ সার্ভিস শুরু হবে বলে তিনি জানান।

রিন্টু বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে এবার যাত্রী কম হবে। সেই বাস্তবতা ইতোমধ্যে দেখেছি। তাই ঈদে কী পরিমাণ যাত্রী হবে তা আগেভাগে অনুমান করতে পারছি না। এই ঈদে অভিজ্ঞতা অর্জন করব।’

বৃহস্পতিবার থেকে ‘বিশেষ সার্ভিস’ শুরু করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, বুধবারও যদি যাত্রীর চাপ থাকে তাহলে সেদিনও অতিরিক্ত লঞ্চ সার্ভিস দেওয়া যাবে। ঢাকার ঘাটে ১৫ থেকে ১৭টি লঞ্চ প্রস্তুত থাকবে। আর ঈদের পরে বরিশাল থেকে ১৬ জুলাই বিশেষ সার্ভিসে শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

‘যত দিন যাত্রীর চাপ থাকে ততদিন চলবে।’

বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নেওয়া হলেও ঈদ ট্রিপে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

দিনবদলবিডি/এইচএআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়