মিরাজের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:২৩, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

৬৯ রানে নেই ৬ উইকেট। বাংলাদেশের আকাশে ছিল ঘোর অন্ধকার। এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব? হয়তো ভাবতে পারেননি কেউই…

৬৯ রানে নেই ৬ উইকেট। বাংলাদেশের আকাশে ছিল ঘোর অন্ধকার। এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব? হয়তো ভাবতে পারেননি কেউই। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেটি সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ পেলো ৭ উইকেটে ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ।

মিরাজ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। মাহমুদউল্লাহর হাফসেঞ্চুরি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম। সপ্তম উইকেটে তারা ১৬৫ বলে গড়েন ১৪৮ রানের জুটি। যে কোনো উইকেটে যেটি কি না ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড।

৪৭তম ওভারে উমরান মালিকের বলে মাহমুদউল্লাহ আউট হন ৭৭ রান করে। ৯৬ বলে গড়া তার দায়িত্বশীল ইনিংসে ছিল ৭ বাউন্ডারির মার। তবে মিরাজকে আটকাতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা।

শেষ ওভারে তার সেঞ্চুরির জন্য দরকার ছিল ১৫ রান। শার্দুল ঠাকুরের করা ওভারের দ্বিতীয় আর চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে চলে আসেন মিরাজ। পঞ্চম বলে ২ আর ইনিংসের একদম শেষ বলে সিঙ্গেলস নিয়ে সেঞ্চুরির উচ্ছ্বাসে ভাসেন এই অলরাউন্ডার।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসভাগ্য ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক লিটন দাস।

লিটনের সঙ্গে আজ ওপেন করেন এনামুল হক বিজয়। শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু সেই ভালোটা বেশিক্ষণ রইলো না। ৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১১ রান করা বিজয় জীবন পেয়েও সেটা হেলায় নষ্ট করলেন।

মোহাম্মদ সিরাজের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন বিজয়। কিন্তু রোহিত শর্মা সেই ক্যাচ ফেলে দেন। হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভারতীয় অধিনায়ক। পরের বলেই আউট বিজয়।

ওভারের পঞ্চম বলটি বিজয়ের প্যাডে বল লাগলে আবেদন করেন সিরাজ, আম্পায়ারও আঙুল তুলে দেন। অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নিয়েছিলেন টাইগার ওপেনার। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মিডল স্টাম্পে আঘাত হানতো।

এনামুল হক বিজয়ের পর লিটন দাসকেও সাজঘরের পথ দেখান মোহাম্মদ সিরাজ। ভারতীয় এই পেসারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক (২৩ বলে ৭)।

ইনিংসের ১২তম ওভারে উমরান মালিক বল হাতে নিয়েই গতিতে ঝড় তুলেছেন। সাকিব আল হাসানকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে সামলাতে। এক ওভারেই কয়েকবার পরাস্ত হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তবে ওই ওভারটি মেইডেন দিলেও আউট দেননি সাকিব।

এক ওভার পর নাজমুল হোসেন শান্তকে পেয়ে আর উইকেট তুলে নিতে দেরি করেননি উমরান। প্রথম বলেই তিনি ১৫১ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতির এক বলে ভেঙে দেন শান্তর স্টাম্প। ৩৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২১ রান করে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

এরপর সাকিব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ওয়াশিংটন সুন্দরকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ২০ বলে ৮ রানেই থামে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ইনিংসটি।

এরপর এক ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন ওয়াশিংটন সুন্দর। মুশফিক খেলছিলেন বেশ দেখেশুনে। সুন্দরের ঘূর্ণিতে তার প্রতিরোধও ভেঙে যায় ১৯তম ওভারে। মুশফিক ডিফেন্ডই করেছিলেন। বল তার গ্লাভসে লেগে শর্ট লেগ ফিল্ডার ধাওয়ানের হাতে চলে যায়।

২৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। সুন্দরের তার ঠিক পরের বলেই আফিফ হোসেন লাইন মিস করে হন বোল্ড (০)।

১৯তম ওভারে ৬৯ রানেই নেই ৬ উইকেট। বাংলাদেশের জন্য বড় লজ্জাই অপেক্ষা করছিল। তবে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য লড়াই করে দলকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ওয়াশিংটন সুন্দর। ৩৭ রানে তিনি নেন ৩টি উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার উমরান মালিক আর মোহাম্মদ সিরাজের।

প্রথম ম্যাচে বীরত্বপূর্ণ ইনিংসের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও মেহেদী হাসান ঝলক দেখালেন মিরাজ! টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৯ রানেই ৬ উইকেট নেই বাংলাদেশের। এমন পরিস্থিতিতে আবারও ত্রাতা মিরাজ। তুলে নিলেন বিস্ময়কর এক শতরান। এবার তাকে সঙ্গ দিলেন অনেক সমালোচনাকে সঙ্গী করে মাঠে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দুজনের রেকর্ড জুটিতে বিপর্যয়ে পড়েও ভারতকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ।

বুধবার মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে ৭ উইকেটে ২৭২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে ১০০, ক্যারিয়ার সেরা রান। মাহমুদউল্লাহ ফিরেছেন ৭৭ রানে। সপ্তম উইকেট জুটিতে দুজন মিলে গড়েছেন রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি, যা ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

সিরিজ জয়ের মিশনে নেমে বুধবার ১০০ রান তোলার আগেই নেই ৬ উইকেট। বাংলাদেশ তখন ঘোর বিপদে। তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দুজনের ব্যাটে চড়েই বিপর্যয় সামাল দিয়েছে লিটন দাসের দল।

বাংলাদেশ তাদের ৬ষ্ঠ উইকেট খুইয়েছে ৬৯ রানে। এরপর থেকে মেহেদি আর রিয়াদ কোনোপ্রকার ভুল করেননি। বাংলাদেশকে দিয়েছে ধ্বংসস্তুপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর দিশা। দু'জন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে লড়লেন। 

দিনবদলবিডি/Rony

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়