সাকরাইনে উৎসবের নগরী পুরান ঢাকা

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৫৬, শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩০ পৌষ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন উৎসব হলো সাকরাইন বা পৌষসংক্রান্তি। প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরেও পুরান ঢাকার অলি-গলিতে শুরু হয়েছে সাকরাইন উৎসব। এই সাকরাইন উৎসবের মূল আকর্ষণ হচ্ছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। এই উৎসবে পুরান ঢাকার আকাশ রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে ছেয়ে যায়। শনিবার থেকেই ঢাকার আকাশে নানা রঙয়ের ঘুড়ি ওড়া শুরু হয়ে গেছে। শিশু থেকে কিশোর সবাই মেতে উঠেছে এ উৎসবকে ঘিরে।

 

এই উৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার বিখ্যাত শাখারি বাজারে চলছে ঘুড়ি এবং এর সঙ্গে অনান্য উপকরণ (ঘুড়ি, নাটাই, সুতা) বিক্রির উৎসব। শাখারি বাজার ছাড়াও ধূপখোলা, লক্ষ্মীবাজার, গেন্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার অলি-গলিতে হয়েছে ব্যাপক ঘুড়ি বেচাকেনা। প্রতিবছর সাকরাইনে লক্ষাধিক ঘুড়ি বিক্রি করেন বলে জানান শাখারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। এখানে সাকরাইন উপলক্ষে কোটি টাকার ঘুড়ি, নাটাই ও সুতো বিক্রি হয় বলেও জানান তারা।

চশমাদার, কাউটাদার, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার, ঈগল, সাদা ঘুড়ি, চারবোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা, লাভ ঘুড়ি, ৩ টেক্কা, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুর, চিল, এংগ্রি বার্ডসসহ নানা নামের ঘুড়ি বিক্রি হয় শাখারি বাজারে। এছাড়াও এবার আমির খান, শাহরুখ খানসহ অনেক তারকাদের ছবিসহ ঘুড়িও উড়বে ঢাকার আকাশে।

সাধারণ ঘুড়ির দাম ৮ থেকে ২৫ টাকা। বিদেশি ও নকশা ঘুড়ির দাম ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। নানা রকমের বাটিওয়ালা, মুখবান্ধা, লোহা নাটাই, কাঠের নাটাই, চাবাডী নাটাই বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। ড্রাগন সুতা, ভুত সুতা, বিলাই সুতো, ঘুড়ি উড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সুতা বিক্রি হয়ে থাকে ১৫০ থেক ৫০০ টাকায়।

শাখারি বাজারের অনিল বিশ্বাস ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সাকরাইন উপলক্ষে ভালোই বেচাকেনা হয়েছে আমাদের। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন ঘুড়ি কিনতে। আমাদের দোকানে ৮ থেকে ১০ রকমের ঘুড়ি রয়েছে। ঘুড়ির সঙ্গে নাটাই ও সুতাও ভালোই বিক্রি হয়েছে।

আরেক ব্যবসায়ী অপূর্ব কুণ্ডু বলেন, আমার ছোট দোকান। বড় কোনো ক্রেতা আসেন না। তরুণ-তরুণীরা আসে বেশি। সব মিলিয়ে মোটামুটি ভালোই হচ্ছে বেচাকেনা।

শাখারি বাজারে লালবাগ থেকে ঘুড়ি কিনতে এসেছে ইমন ও তার বন্ধু রবিউল। দুজনই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা বলেন, প্রতিবছর সাকরাইন আসলেই আমরা সবাই মিলে ঘুড়ি কিনতে এখানে আসি। উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা সাকরাইন উদযাপন করে থাকি।

ওয়ারী থেকে সাকিব হাসান তার দশ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এসেছেন ঘুড়ি কিনতে। তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমরা ঘুড়ি উড়িয়েছি। এখন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সময়। তাই তাদের জন্য প্রতিবছর ঘুড়ি কিনে দিই। ওদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখে আমরাও হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে স্মরণ করি।

আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাকরাইন। মহাভারতে যেটাকে মকরক্রান্তি বলা হয়। এই দিনে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙ-বেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ। এখন পুরান ঢাকা ছাড়াও ঢাকার অন্যান্য এলাকায় এই উৎসব পালন করা হয়। আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাকরাইন পালন করলেও এখন বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে সব ধর্মীয় মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে।

দিনবদলবিডি/Rabiul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়