প্রাণের স্পন্দন টিকিয়ে রাখছে সেইভ লাইফ ব্লাড ডোনেট সোসাইটি'র সদস্যরা
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
পৃথিবীতে এখনো কৃত্রিম রক্ত তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি চিকিৎসা বিজ্ঞান। আর এ কারণেই মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করছে শুধুই স্বেচ্ছায় রক্ত দানের ওপর। মানবিকতার সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো স্বেচ্ছায় রক্তদান। বাংলাদেশে প্রতিবছর রোগীদের সার্জারি চিকিৎসা সেবার জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়।
যারা রক্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তাদেরও নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে প্রয়োজন হয় রক্তের। এছাড়া রক্ত স্বল্পতা, হিমোফিলিয়া মতো রোগীর ক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজন হয়। এর বাইরে প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অপারেশন, অগ্নিদগ্ধ বা দুর্ঘটনাজনিত রোগীর ক্ষেত্রেও রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়।
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এই সেবার গুরুত্বের শেষ নেই। কারণ বাংলাদেশে বছরে রক্তের চাহিদা থাকে প্রায় ৮-১০ লাখ ইউনিট। এই অবস্থায় কারো স্বেচ্ছায় রক্ত দানের বিষয়টি খুবই বীরত্বের। জীবন মরণের সন্দিক্ষণে থাকা প্রাণের স্পন্দন টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছায় রক্তদান খুবই উত্তম কাজ।
এই বিষয়টির উপলব্ধি তারাই করতে পারে যারা রক্তের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন ভোগেছেন। দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি রোগীদের স্বজনরা রক্তের প্রয়োজন অনুভব করতে পারেন। রক্তদানে উৎসাহিত করতে ও রক্ত সংগ্রহ করতে দেশে অনেক সংগঠন কাজ করছে। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে সেইভ লাইফ ব্লাড ডোনেট সোসাইটি।
প্রতিষ্ঠা ও প্রতিষ্ঠাতা:
২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনজন তরুণ এই মানবিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারা হলেন হাবিবুর রহমান মুরাদ, আনোয়ার হোসেন আকাশ ও রাকিবুল ইসলাম রকি।
সুবিধাভোগী যারা:
মুমূর্ষ রোগীকে রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়াই এই সংগঠনের মূল কাজ। তবে এর বাইরে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, শিক্ষামুলক সেবা, সমাজের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের পাশে থেকে সাধ্যমতো সহায়তা করছে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি।
স্বেচ্ছাসেবী যারা:
স্বেচ্ছায় যাঁরা নিজেদের অর্থ, শ্রম সময় উজাড় করে আত্মত্যাগ করেন, নিজের লাভ লোকসানের হিসেব যাঁরা না কষে জীবনকে অন্যের হাসির মাঝেই বিলিয়ে দিয়ে অপার আনন্দের সহযাত্রী তারাই হলেন সেইভ লাইফ ব্লাড ডোনেট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবী।
দেশের ৩৪ জেলায় কার্যক্রম:
প্রতিষ্ঠার মাত্র ১ বছরের মধ্যেই দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি। বর্তমানে ৩৪ জেলায় টিম ভিত্তিক কার্যক্রম চলছে। তবে ভবিষ্যতে প্রত্যন্ত পাড়া গাঁও অবধি কার্যক্রম বিস্তার লাভের পরিকল্পনা আছে সংগঠনটির।
অর্থ সংগৃহ ও বন্টন:
নির্ধারিত কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে ছোটো খাটো অর্থ তহবিল ও বিশেষ শুভাকাঙ্ক্ষীদের দানকৃত অর্থের মাধ্যমে এই সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ ব্যক্তির বিবিধ পর্যালোচনা করে কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে বা সাথে নিয়ে অর্থ বন্টন করা হয়। ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এর সুবিধা ভোগ করছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
শুধু দেশের মাটিতে নয়, বিদেশেও এর প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির। ব্লাড ম্যানেজ করাসহ অসহায় দুস্থ, রুগ্ন মানবের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য ভালো কিছু করা, বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য কিছু প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করা।
কারা যুক্ত হতে পারে:
১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোনো পেশার ছেলে মেয়ে, নারী ও পুরুষ চাইলেই এই সংগঠনের সাথে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারে। সারা দেশে প্রায় ৬ সহস্রাধিক সদস্য আছে সংগঠনটির। সদস্য সংখ্যা বেশি থাকায় রক্ত যোগান দিতে বেগ পেতে হয় না। প্রয়োজনে সেইভ লাইফকে স্মরণ করলেই তারা ডোনার মেনেজ করে দেন।
সংগঠনটি প্রসঙ্গে এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, সেইভ লাইফ ব্লাড ডোনেট সোসাইটির তরুণ-তরুণীরা নির্দিষ্ট কোনো জেলায় নয়, সারাদেশে মানবসেবায় কাজ করে যাচ্ছে। রোগীর সংকটময় সময়ে রোগীর স্বজনরা সেইভ লাইফকে স্মরণ করছে। এগিয়ে এসে রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাতে কাজ করছে সেইভ লাইফ ব্লাড ডোনেট সোসাইটি। সংগঠনটি অর্থ সংকটের মধ্য থাকলেও মানবসেবায় কাজ করে যাচ্ছে।
একই প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রকি বলেন, ধর্মের থেকেও বড় পরিচয় হলো মানুষের মত মানুষ হওয়া। সমাজের জন্যে অনেক ভালো ভালো কাজ করতে চাই। শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি বা শীতবস্ত্র বিতরণেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। সমাজের উন্নয়নের জন্যে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের বিপদে-আপদে কাজ করে যেতে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এই সংগঠনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে চাই যে তরুণ প্রজন্ম সবাই বিপদগামী নয়। সমাজের উন্নয়নের জন্যে সেইভ লাইফ ব্লাড ডোনেট সোসাইটি নিজে স্বপ্ন দেখে, মানুষকে স্বপ্ন দেখায় এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
দিনবদলবিডি/Rabiul