সাধু সাবধান : ওয়ান-ইলেভেন'র পথেই দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশীরা!

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৩২, শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩, ৩১ আষাঢ় ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

সমস্যা চিহ্নিত হলে স্বাভাবিকভাবেই তার সমাধান সহজ হয়।কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতক পরিস্থিতি তার বিপরীত বার্তাই প্রদান করছে।মূল সমস্যা চিহ্নিত হবার পরও সমাধান যেন অধরা।আর এর কারণটিও   প্রায় পরিচিত রূপেই প্রকাশিত।সেটি হলো 'পলিটিক্যাল ইগো'।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সর্বসম্মতিক্রমেই বলা যায় বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার মূল কারণটি হলো 'নির্বাচন প্রক্রিয়া'।আর চিহ্নত সমস্যাটির সমাধান দুরহ হয়ে পড়েছে পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস,সর্বোপরি বিদেশী  হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টার দরুন।

 

সর্বশেষ কারণটি নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকতেই পারে, যারা মনে করেন নিজেরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে না পারার দরুনই বিদেশিদের আসতে হয়েছে।কথাটি সর্বৈব মিথ্যে না হলেও পুরোপুরি সত্যি নয়।কেননা বিদেশীরা বারবার অবাধ,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার কথা বললেও একটিবারও তার পথ বা প্রক্রিয়া নিয়ে টু শব্দটিও করেননি, যা খুবই  সিগনিফিকেন্ট।

অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ- মোটাদাগে এই ৩ শব্দ ব্যবহার করে বাংলাদেশে সত্যিকারের একটি নির্বাচন আয়োজনের স্পষ্ট বার্তা দিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরকারী প্রতিনিধি বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া।তার সাথে ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির ওপর চোখ রাখা বহুল আলোচিত এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুও।

কূটনৈতিক সূত্রমতে, উজরা জেয়া এবং ডোনাল্ড লু এমন নির্বাচন দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে গেছেন যাতে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু সেই নির্বাচনটি কোন ফর্মে হবে অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, কার হাতে স্ট্রিয়ারিং থাকলে এটি দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা ঠিক করার ভার একান্তভাবেই বাংলাদেশের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। বলা যায়, বাংলাদেশের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন তারা। পারসেপশন বা জনমনের উপলব্ধি যেমনই হোক,সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তিতে এখন পর্যন্ত 'হোমগ্রোন সলিউশন' চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এটাই ডিপ্লোম্যাসি। কিন্তু আদতেই কি তাই? দৃশ্যমান রাজনৈতিক কর্মকান্ডের আড়ালেও তাদের চাওয়া কি অভিন্ন?

আলাপচারিতার টেবিলে পরিপক্ক অনেক রাজনীতিবিদ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ তাবৎ কূটনীতিকরা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের (জেনেভা কনভেনশন'র আর্টিকেল ৪১) অজুহাতে সমস্যার মূলে অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে  চাইছেননা বটে, যদিও ইতিপূর্বেই তারা সেই সীমা অতিক্রম করেছেন অনেকবার।
বিদেশীরা ভালো করেই জানেন যে, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দুই প্রতিপক্ষ নির্বাচনকালীন ইস্যুতে একমত হবেনা।বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়েই দল দুটি সেই বার্তা দিয়ে ফেলেছে।

উজরা জেয়া ও লু'র দেশে অবস্থানকালীন সময়ে প্রধান দুটি প্রতিপক্ষ ১২ জুলাই নজিরবিহীনভাবে পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলেও 'নির্বাচনকালীন সরকার' ইস্যুতে তাদের বিপরীতমুখী ঘোষণা ও দাবী উচ্চারণ করেছে।বিএনপি বরাবরের মতোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছে।তবে সরকারী দল সংবিধানের বাইরে কোনকিছু হবেনা বললেও এবার সরাসরি 'শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন'র দাবী তুলেছে এবং সম্ভবত দাবির পক্ষে জোরালো কর্মসূচিও গ্রহণ করবে দলটি।অর্থাৎ দেশে গুরুত্বপূর্ণ একডজন বিদেশী কূটনীতিকদের উপস্থিতিতেই দল দুটি প্রধান ইস্যু অর্থাৎ 'নির্বাচনকালীন সরকার' ইস্যুতে দুই মেরুতে অবস্থানের বার্তা দিয়েছে।

কিন্তু বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বিএনপি  তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কথা বললেও কোনো মন্তব্য করেননি বিদেশীরা।তাদের প্রধান দাবির প্রতি বিদেশী কূটনীতিকদের নীরব থাকার অর্থ কি বিএনপি বোঝেনা? তবু কেন দলটি কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথা বললেও তা না করে বিদেশী কূটনীতিকদের এত বেশি পাত্তা দিয়ে যাচ্ছে তা মোটেই বোধগম্য নয়।

বিদেশীরা ভালো করেই জানেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ 'পলিটিক্যাল ইগো'র দরুন পরষ্পরের কাছে হার মানতে চাইবেনা ।ধীরে ধীরে হার্ড লাইনে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।নিজেরা সমাধানের পথ বন্ধ করে দিলেই সৃষ্টি হবে বিদেশী হস্তক্ষেপের সুযোগ।হয়তো বিদেশীরাও সেটিই চাইছেন।এমনটি ভেবে নেয়ার কোনো কারণ নেই যে কোনো এজেন্ডা ব্যতিরেকেই বিদেশীরা উড়ে এসে দৌড়ঝাঁপ করে আমাদের দেশে গণতন্ত্র ও মানিবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবকিছু করছেন।বরং বিপরীত ধারণাটিই প্রবল।প্রধান দুই প্রতিপক্ষ দেশকে নিয়ন্ত্রণহীন,অস্থিতিশীল করে তুললেই তারা ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন,যাতে জনগণ প্রধান দুই প্রতিপক্ষের হাত থেকে বাঁচতে তৃতীয় কোনো পক্ষের কামনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।তৃতীয় শক্তির আগমনকে নির্দ্বিধায় স্বাগত জানায়।অর্থাৎ আরেকটি 'ওয়ান ইলেভেন'।তবে অতীতের মতো নয়, নতুন কোনো ফরমেটে,যেখানে জনগণের সমর্থন এমনকি অনেক রাজনৈতিক দলের সমর্থনও পেতে পারেন তারা। কাজেই সাধু সাবধান।

দিনবদলবিডি/Rakib

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়