ঢাকায় ইইউ প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতেই দেশব্যাপী সহিংসতা: কে কাকে কি বার্তা দিলো?

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:০৬, বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩, ৪ শ্রাবণ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

যারা মঙ্গলবারের সহিংসতার জন্য বিএনপি ও সমমনাদের দায়ী করছেন তাদের মতে, সরকার বিরোধীরা একদিকে পুলিশ ও অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উস্কানি দিয়ে সহিংসতায় জড়িয়েছে, যাতে বিদেশিদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে বরাবরের মতোই দমন পীড়নের অভিযোগ তোলা যায়।

প্রায় সব পত্রিকার প্ৰধান শিরোনাম ছিল এমন- "সংঘর্ষগুলো, নিহত ১, আহত শতাধিক।" খবরে বলা হয়েছে,  সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। একই দিন এ কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ রাজধানীসহ সারাদেশে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা পালন করেছে।

দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১ জন নিহত ও ৫ শাতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মাঝে ছিলেন বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী,পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ পথচারী।

দেশব্যাপী এমন সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য কিছুকিছু সংবাদ মাধ্যম সরাসরি শাসক দলকে দায়ী করলেও অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম এমন সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচি পালনের মতো ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছে, কেননা দেশের সাম্প্ৰতিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন সিদ্ধান্তের  জন্য উপযুক্ত নয়। এটি জেনেও প্রশাসন কেন উভয় দলকে একইদিন কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে, তা নিয়েও প্ৰশ্ন তুলেছেন অনেকে।

তবে ঘটনার জন্য যে বা যারাই দায়ী হোক না কেন, ঢাকায় ইইউ'র  প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে এমন ঘটনার জন্ম দিয়ে কারা কাদের কী বার্তা দিতে চাচ্ছে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দৈনিক যুগান্তরের শিরোনাম ছিল "নির্বাচনের খারাপ বার্তা পেলেন বিদেশিরা' -এতে বলা হয়েছে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর হামলা বিদেশিদের কাছে পরিষ্কার বার্তা। বিষয়টি মঙ্গলবার আরও স্পষ্ট হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায়।" - অর্থাৎ পরপর সৃষ্ট দুটি অপ্রীতিকর ঘটনায় বিদেশিরা কি বার্তা পেলো সেটি  মূল্যায়ণের তাগিদ অনুভব করছেন রাজনীতিক, বিশ্লেষক ও সমালোচকরা।

বিষয়টি নিয়ে 'পাবলিক পার্সেপ্সন' আছে নানান রকম। কারো কারো মতে বিদেশিরা 'ম্যানেজড'।  শাসক দল একরকম গ্রীন সিগনাল পেয়েই উস্কানি দিয়ে বিদেশি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সরকার বিরোধীদের সহিংসতায় জড়িয়েছে। এর উদ্দেশ্য হতে পারে দুটি।

এক: বিদেশিরা 'ম্যানেজড'। তাই তাদের উপস্থিতিতেও সরকার ভীত নয়।

দুই: বিদেশিদের তোয়াক্কা না করা। সরকার বিরোধীদের মাঝে ভবিষ্যৎ কঠোর কর্মসূচি পালনে ভীতি সঞ্চার করা। বিদেশিদের মাঝেও ভীতি সঞ্চার করা, যাতে  আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানো হয়।

পক্ষান্তরে যারা মঙ্গলবারের সহিংসতার জন্য বিএনপি ও সমমনাদের দায়ী করছেন তাদের মতে, সরকার বিরোধীরা একদিকে পুলিশ ও অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উস্কানি দিয়ে সহিংসতায় জড়িয়েছে, যাতে বিদেশিদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে বরাবরের মতোই দমন পীড়নের অভিযোগ তোলা যায়।

তারা মনে করেন, ঢাকায় ইইউ প্রতিনিধিদের উপিস্থিতিতে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধাদানের মতো ভুল আওয়ামী লীগ কখনোই করবে না। কাজেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিসা নীতির সুযোগে সরকারকে গণতন্ত্রবিরোধী প্রমাণের বার্তা বিদেশিদের কাছে পৌঁছে দিতেই তারা উস্কানি দিয়ে এমন সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো বিগত বছরগুলোতে বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচিতে বাধাদানের অভিযোগ পেলে কালবিলম্ব না করে খুব অল্প সময়ের মাঝেই ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিবৃতি প্ৰদান করেছিল।

এমনকি সর্বশেষ উপনির্বাচনে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায়ও তারা কয়েক ঘন্টা পরেই বিবৃতি প্রদান করে। কিন্তু মঙ্গলবারের দেশব্যাপী বৃহৎ পরিসরে সহিংসহতার ঘটনায় ২৪ ঘন্টা পরও(এই লেখা প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত) কোনো বিবৃতি প্রদান না করে তারাই বা সরকার ও বিরোধীদের কী বার্তা দিলো, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

দিনবদলবিডি/Rakib

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়