যমুনা সার কারখানা বন্ধ

সরিষাবাড়ী সংবাদদাতা || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৫৪, বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২, ১২ শ্রাবণ ১৪২৯
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দেওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দেওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। চলমান বন্ধের মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোড শেডিং। এর ফলে ইউরিয়া সার উৎপাদনের শংকায় রয়েছে কারখানার কর্তৃপক্ষ।

উৎপাদনে অনিশ্চিত দেখা দেওয়ায় এতে করে কারখানার আওতাধীন জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় সামনের বোরো আমন মওসুমে ইউরিয়া সারের তীব্র সস্কট দেখা দেওয়ার আশস্কা রয়েছে।

আমদানি নির্ভর সারের কথা উল্লেখ করে কোনো সংকট হবেনা বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

সরজমিন ঘুরে জানা যায়, কেপিআই-১মান সম্পন্ন বিসিআইসির যমুনা সারকারখানা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ সালে উপজেলার তারাকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মে. টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম হলেও গ্যাস সংকট এবং বিভিন্ন যান্ত্রিক দুর্বলতায় এখন তা কমে ১২০০ শ থেকে ১৪ শ মে. টনে নেমে এসেছে। বাৎসরিক ৩ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও গত অর্থ বছরে কারখানাটিতে বাৎসরিক উৎপাদন হয়েছে ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন।

বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদনের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ মেট্রিক টনের ফারাক থাকলেও বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে অক্ষম দেশের এই বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারখানা চালাতে চাহিদামাফিকের তুলনায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের ২১ জুন থেকে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারখানাটিতে পরিমাণ মতো ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে প্রতিদিন গ্যাসের প্রয়োজন ছিল ৪০ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এর পরিবর্তে কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ হতো ৩৫ থেকে ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন হ্রাস প্রায় শতকরা ১০ ভাগ।  

গ্যাস সংকটে কারখানাটি এক মাস যাবৎ বন্ধ, এর মধ্যে শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোড শেডিং। উৎপাদনে অনিশ্চিত দেখা দেওয়ায় এতে করে কারখানার আওতাধীন জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় সামনের বোরো আমন মওসুমে ইউরিয়া সারের তীব সস্কট দেখা দেওয়ার আশস্কা রয়েছে। যদিও কারখানা কর্তৃপক্ষ আমদানি নির্ভর সারের কথা উল্লেখ করে সারের সস্কট হবে না বলে জানিয়েছেন। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার গ্যাস সংকট নিরসন করে পুনরায় কারখানাটির উৎপাদন সচল করবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

কারখানার একাধিক শ্রমিক বলেন, যমুনা সার কারখানা প্রায় ১ মাস যাবৎ বন্ধ থাকার করণে আমরা পরিবহণ শ্রমিকরা খুবই দুচিন্তায় আছি। এ ভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো। পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

সারকারখানার ডিলার আশরাফুল আলম মানিক, আবুল সরকারসহ একাধিক সারের ডিলার বলেন, যমুনা সার কারখানাটি নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের ২১ টি জেলায় সার রপ্তানি করে থাকে। আমরা ডিলাররা খুবই সল্প খরচে এখান থেকে সার বিভিন্ন জেলাতে পাঠাতে পারি । যদি এ কারখানা সচল না হয় তবে আমাদের অন্য জেলা থেকে সার আমদানি করতে হবে। এতে খরচের পরিমাণ গিয়ে দাড়াবে দ্বিগুণ।

তারাকান্দি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কম্পানির টেকনেশিয়ান এবিএম নূর ইসলাম বলেন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি তারাকান্দিতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় আমরা যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। লোড শেডিং থাকায় গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলে কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা যমুনার সার জমিতে ব্যবহারের অভ্যস্ত। যমুনার সার কৃষকরা না পেলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বে। যমুনার উৎপাদন এভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে সামনে বোরো - আমন মৌসুমে এ অঞ্চলের লক্ষ মাত্রা পূরণ হবে না। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির আশংকা দেখা দিতে পারে।

যমুনা সারকারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আব্দুল হালিম গণমাধ্যমকে বলেন, গত মাসের ২১ তারিখ থেকে গ্যাস সংকটের কারণে যমুনা সার কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পাইপে গ্যাস নেই। কর্তৃপক্ষ সরবরাহ দিতে পারছে না। উৎপাদন বন্ধ থাকায় কৃষক,  ডিলার ও কারখানাকে গিয়ে সবার ক্ষতি হচ্ছে। সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ঘন ঘন লোড শেডিং হচ্ছে। কবে নাগাদ গ্যাস পাওয়া যাবে সেটা সরকার বলতে পারবে। তাই কারখানার উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চিতায় মধ্যে রয়েছেন বলেও তিনি জানান।

দিনবদলবিডি/এইচএআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়