এবার শিরোপার স্বাদ পূরণ হবে কি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুরের?

স্পোর্টস ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৯, সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

তিনবার ফাইনাল খেললেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি বেঙ্গালুরুর। ২০০৯ সালে ডেকান চার্জাস, ২০১১ সালে চেন্নাই সুপার কিংস ও ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে শিরোপা খুইয়েছিল আরসিবি। তবে এবারের আইপিএলে এমন অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পর কোহলি ভক্তদের মনে প্রশ্ন যেই ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি কখনো, এবার কী হবে? নাকি আরো একবার আরসিবির আফসোসের কারণ হবে আইপিএলের ওই ট্রফিটা।

ইন্ডিয়ার প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) একটা দল আছে নাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। বছরের পর বছর ধরে গেইল-ভিলিয়ার্সদের মত বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের দলে ভিড়িয়েও পায়নি কোনো ট্রফির দেখা। তারপরও আইপিএলের প্রতি আসরে লাখ লাখ ক্রিকেটপ্রেমী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আরসিবি, আরসিবি বলে গলা ফাটায়। কারণ ওই একটাই, এই দলেই যে খেলছেন আধুনিক ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান কিং কোহলি!

কখনই দর্শকদের প্রত্যাশার পারদের হিসাব মেলাতে পারেনি আইপিএলের রেড ডেভিলরা। চলতি আসরেও তাদের শুরুটা হয়েছিল একদম বাজে! প্রথম আট ম্যাচে এক জয়ে মাত্র দুই পয়েন্ট! সবার আগে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়াটা যেন সময়ের অপেক্ষা! প্রত্যাবর্তনের গল্পটা তখনো যে লেখা বাকি! কে জানতো এই দলটাই পরের সবগুলো ম্যাচ জিতে, সমীকরণ মিলিয়ে কোয়ালিফাই করবে শেষ চারে? এটাকেই বলে বুঝি- পুরাণের ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়ানো!

২০২৩ সালে আইপিএলের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর নারী ক্রিকেটারদের উদ্দেশে এক ভাষণে কিং কোহলি বলেছিলেন, ‘মাঝেমধ্যে ১ শতাংশ সম্ভাবনাও যথেষ্ট। আপনি আপনার সেরাটা দিন। ম্যাজিকটা ঘটে যেতেই পারে।’

আইপিএলের চলতি আসরে ৮ ম্যাচে ১ জয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে আরসিবি’র কোয়ালিফাই করার চান্স ছিল মাত্র ১ শতাংশই। কোহলি যেন নিজের কথা রাখলেন, ১ শতাংশ সম্ভাবনা থেকে নিজ ব্যাটে ভর করিয়ে টানা ছয় ম্যাচে জয় নিয়ে দলকে টেনে তুললেন কোয়ালিফাইয়ে। এ যেন রূপকথার মতো প্রত্যাবর্তন, আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা প্রত্যাবর্তন। এখন কেবলমাত্র অধরা কাপটা ধরা দিলেই ষোলকলা পূর্ণ হবে।

এবার আসি কোয়ালিফাই করতে সর্বশেষ বাধা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের বিপক্ষের ম্যাচের সমীকরণে। এই ম্যাচে সমীকরণটা ছিল- আগে ব্যাট করলে জিততে হবে ১৮ রানে আর পরে ব্যাট করলে জিততে হবে ১৮.১ ওভারে। এদিকে কঠিন ম্যাচের আগে এই ১৮ নাম্বারটি নিয়ে নানা কথা! ১৮ নম্বর জার্সি পরে খেলেন কোহলি, ১৮ তারিখে ম্যাচ, ১৮ তারিখে হারে না আরসিবি! আরো কত কথা। তবে আবহাওয়া বলছিল- বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।

মহারণে ব্যাট করতে নেমে কোহলি-ডু প্লেসি ঝড় থামিয়ে দেয় বৃষ্টি। তবে বৃষ্টি দেবতাও বুঝি চাইছিল দুই গ্রেট কোহলি-ধোনির মাঠের লড়াইটা জমে উঠুক। বৃষ্টির বাগরাও বেশিক্ষণ থাকেনি। নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় খেলা। অধিনায়ক ডু প্লেসির ফিফটি আর কোহলি-গ্রিন-ম্যাক্সওয়েলের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বেঙ্গালুরু ২০ ওভারে করে ২১৮ রান। অর্থাৎ চেন্নাইকে প্লে অফ নিশ্চিত করতে হলে করতে হবে অন্তত ২০১ রান। অন্যদিকে আরসিবিকে প্লে অফে যেতে হলে চেন্নাইকে ২০১ রান অতিক্রম করতে দেয়া যাবে না।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো চেন্নাইকে কখনোই মনে হয়নি জিততে পারবে। ম্যাচের প্রথম বল থেকেই চেন্নাইয়ের টুটি চেপে ধরে বেঙ্গালুরুর ব্যাঙ্গালুরুর বোলাররা। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের সমীকরণ দিয়ে দাঁড়ায়, চেন্নাইকে প্লে অফ নিশ্চিত করতে হলে করতে হবে ১৭ রান! ব্যাটিংয়ে স্ট্রাইকিং প্রান্তে রয়েছেন সময়ের সেরা ফিনিশার মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর বোলিংয়ে ছিলেন ভারতের তরুণ তুর্কি কিছুটা অনভিজ্ঞ যশ দয়াল!

দয়ালের প্রথম বলটাই ছক্কা হাঁকালেন ধোনি! তাও আবার ১১০ মিটারের মাঠ ছাড়ানো ছক্কা! সমীকরণ দাঁড়ালো পাঁচ বলে এগারো রান। আধুনিক ক্রিকেটে ধোনির মতো ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকলে যেটা ডাল-ভাত। ছক্কা খাবার পর ২৬ বছর বয়সী যশ দয়ালের ফ্লাশব্যাকে রিংকু সিংয়ের সেই দু:সহ স্মৃতি ভেসে ওঠার কথা! তবে উত্তরপ্রদেশের এই বোলার স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণে এনে শেষ পাঁচ বলে লিখলেন ইতিহাস! ছক্কার পরের বলে ধোনিকে আউটসহ পাঁচ বলে দিলেন মাত্র এক রান! আর খাদের কিনারা থেকে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু লিখলো অমরকাব্য।

এর আগে তিনবার ফাইনাল খেললেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি বেঙ্গালুরুর। ২০০৯ সালে ডেকান চার্জাস, ২০১১ সালে চেন্নাই সুপার কিংস ও ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে শিরোপা খুইয়েছিল আরসিবি। তবে এবারের আইপিএলে এমন অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পর কোহলি ভক্তদের মনে প্রশ্ন যেই ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি কখনো, এবার কী হবে? নাকি আরো একবার আরসিবির আফসোসের কারণ হবে আইপিএলের ওই ট্রফিটা। তবে বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট ভক্তদের প্রার্থনা- এভাবে ফিরে আসে যারা, যাদের রক্তে জয়ের নেশা; তাদের সুদিন আসুক। কোহলির ব্যাঙ্গালুরু ট্রফি উঁচিয়ে হাসুক!

দিনবদলবিডি/Hossain

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়