ইস! যদি ছক্কাটা হয়ে যেত মাহমুদউল্লাহর

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৫৮, মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ম যেন এক টুকরো বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। গ্যালারিতে যেদিকে চোখ যায় শুধু দুটি প্রিয় রং-লাল ও সবুজ। সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে যৌবন গর্জন। নাসাউ রূপ নেয় মিরপুরে। ৫০ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশের আশার দীপ হয়ে জ্বলছেন তখন মাহমুদউল্লাহ ও হৃদয়।

সেই দীপ অর্ধেক নিভে গেল ১৮তম ওভারের প্রথম বলে হৃদয়ের এলবিডব্লুতে। এরপর সমীকরণ দাঁড়াল-১৮ বলে ২০, ১২ বলে ১৮ এবং ছয় বলে ১১ রান। নাটকের শেষ দৃশ্যে মহারাজ। তৃতীয় বলে আউট জাকের আলী। লং-অনে মার্করামের ক্যাচ। দুই বল পর দপ করে নিভে গেল আশার শেষ দীপ। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং-অন বাউন্ডারিতে মার্করামের অবিশ্বাস্য ক্যাচে মাহমুদউল্লাহর মাথায় হাত। ঘোর অবিশ্বাসে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন মার্করামের দিকে। ২৭ বলে ২০ রানে থামল তার লড়াকু ইনিংস। পরের বলে তাসকিনের এক রানে বাংলাদেশ থামল ১০৯/৭-এ।

১১৪ তাড়া করতে নেমে এমন দুর্ভাগ্যজনক সমাপ্তিতে দিনশেষে জুটল চার রানের হার না-মানা হার। বাংলাদেশের ইনিংসের হৃদয় হয়ে থাকলেন তাওহিদ ৩৪ বলে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করার সুবাদে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ১৪ রান ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। কেশব মহারাজ তিনটি এবং কাগিসো রাবাদা ও আনরিখ নরিয়ে দুটি করে উইকেট নেন। ম্যাচসেরা হেনরিখ ক্লাসেন। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল একটি ম্যাচজয়ী জুটি।

মাহমুদউল্লাহ ও হৃদয় পঞ্চম উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের একেবারে কাছে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর অবিশ্বাস্য আউটে জিততে জিততে হারতে হলো শান্ত-হৃদয়রদের। ১৮ বলে যখন ২০ রান দরকার, হাতে ছয় উইকেট, রাবাদা হৃদয়তে তুলে নিয়ে ওই ওভারে মাত্র দুই রান দেন। শেষ ওভারে তিনটি ফুলটস দিয়েও মহারাজ রাজ করেন।

নাজমুল হোসেন শান্ত টসে জিতলে আগে বোলিং নিতেন। এইডেন মার্করাম সেই সুযোগটা করে দিলেন তাকে। বাংলাদেশ অধিনায়কের ইচ্ছাপূরণের পর শুরু হয় নতুন বলে তানজিম হাসানের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে উপেক্ষা করে নির্বাচকরা তরুণ তানজিমকে সুযোগ দেওয়ায় সমালোচনা কম হয়নি। তানজিম দুর্দান্ত গতির প্রদর্শনীতে দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ চার ব্যাটারের মধ্যে তিনজনকে ফিরিয়ে দিয়ে তার প্রতি আস্থা রাখার প্রতিদান দেন।

তার অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে প্রোটিয়ারা পাওয়ারপ্লেতে ২৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খায়। হেনড্রিক্স (০), মার্করাম (৪) ও কুইন্টন ডি কক (১৮) নেদারল্যান্ডসের পর এই ম্যাচেও ব্যর্থ। তানজিমের বলে ডি কক পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন। ওই ওভারের শেষ বলে তানজিম দারুণ এক ডেলিভারিতে আরেক ওপেনার রিজা হেনড্রিক্সকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন। পাওয়ারপ্লেতে পরের দুই ওভারে আরও দুই উইকেট নিয়ে নিউইয়র্কের নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লাল-সবুজ ঢেউ তোলেন তানজিম।

তার অফ-স্টাম্পে পিচ করে ভেতরের দিকে ঢোকা ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলেন হেনড্রিকস। বল তার পেছনের পায়ে লাগলে এলবিডব্লুর আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। এক ওভার পর আবার বোলিংয়ে এসে ফেরান ডি কককে। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি বল অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে পারেননি প্রোটিয়া ওপেনার। বোল্ড হয়ে ফেরেন ১১ বলে ১৮ রান করে। তানজিমের দেখানো পথে দ্বিতীয় ওভারে এসে সাফল্য পান তাসকিন আহমেদও। অফ-স্টাম্পের বাইরে পিচ করা লেংথ ডেলিভারি ভেতরে ঢোকার মুখে ভুল লাইনে ব্যাট চালান মার্করাম। বল আঘাত করে স্টাম্পে।

আউট হওয়ার পর বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে পিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। প্রথম দুই ওভারে সাফল্য পাওয়ায় পাওয়ারপ্লেতে আরও এক ওভার বল করতে আসেন তানজিম। রীতিমতো উড়তে থাকে বাংলাদেশ। পাঁচ ওভারের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম চার ব্যাটার ফেরেন সাজঘরে। তানজিমের অফ-স্টাম্পের বাইরে শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি অফ-সাইডে খেলার চেষ্টায় ঠিকঠাক মারতে পারেননি স্টাবস।

শর্ট কভারে নিচু হয়ে দারুণ ক্যাচ নেন সাকিব আল হাসান। শূন্য রানে ফেরেন স্টাবস। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান এসে কিপটে বোলিং করেও উইকেট পাননি। ১৩ রানে তিন উইকেট নেন তানজিম হাসান। পরে ১৬তম ওভারে নিজের শেষ ওভারে এসে পাঁচ রান দেন তিনি।

তবে পাওয়ারপ্লের দারুণ শুরুটা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার একশ পার করান দলকে। ১১তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর করা বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস। জীবন পেয়ে মিলার দলকে টানেন। ২৯ রানে তাকে ফেরান রিশাদ হোসেন। ক্লাসেন ৪৬ রান করেন ৪৪ বলে। তানজিমের তিনটি ছাড়া তাসকিন নেন দুই উইকেট।
 

দিনবদলবিডি/Anamul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়