রাজশাহীতে কবর ভাড়া ৫৭ লাখ টাকা

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২০, বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ২০ পৌষ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

রাজশাহীতে একেকটি কবর ভাড়া নিতে গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৫৭ লাখ টাকা করে। এই ফি পরিশোধ করলে মিলবে কবর সংরক্ষণের অনুমতি। সিটি করপোরেশন ফি নিয়ে অনুমতি দিচ্ছে। মেয়াদ ৯৯ বছর। তবু এ রকম উচ্চমূল্য দিয়েই বিত্তবানদের কবর পাকা করছেন তাদের স্বজনরা। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, গোরস্তানে জায়গাসঙ্কুুলান না হওয়ায় কবর পাকাকরণে নিরুৎসাহিত করতেই উচ্চহারে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবু এর পরও ঠেকানো যাচ্ছে না। বিত্তশালী অনেকে বিপুল অর্থ খরচ করে লিজ নিচ্ছেন কবর।

 

রাজশাহী মহানগরীতে সিটি করপোরেশন পরিচালিত কবরস্থানের সংখ্যা মাত্র ৯টি। এর মধ্যে হেতেম খাঁ, টিকাপাড়া ও মহিষবাথান গোরস্তান সবচেয়ে বড়। নগরীতে দিনকে দিন মানুষের বসবাস বাড়ছে। এর চাপ পড়েছে গোরস্তানগুলোতেও। ফলে সেখানে জায়গার সংকট তৈরি হয়েছে। তাই পুরনো কবর ভেঙে মাটি ফেলে নতুন করে কবরস্থান তৈরি করা হচ্ছে। গত বছর প্রথমবারের মতো এ ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়। মহানগরীর গৌরহাঙ্গা, সপুরা, টিকাপাড়া, খোঁজাপুর ও হেতেম খাঁ কবরস্থানের পুরনো কবর ভেঙে নতুন জায়গা তৈরি করা হয়েছে। তবে বেশ কিছু পাকা কবর বহাল রয়েছে। কারণ, জায়গা কিনে কবরগুলো পাকা করা হয়েছে।

জানা গেছে, মহানগরীর হেতেম খাঁ গোরস্তানে পাকা কবরের সংখ্যা বেশি। এ কারণে সেখানে পুরনো কবর ভাঙার কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। সংস্কার কাজ করতেও সময় লাগছে। কবরস্থানগুলো সংস্কারের জন্য নতুন মাটি ফেলা হয়েছে। এখনো চলছে সংস্কার। ছেলের কবর চাপা পড়েছে নতুন মাটির নিচে। আন্দাজ করে নতুন মাটিতেই ছেলের কবরের সীমানা চিহ্নিত।

করছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি জানান, দেড় বছর আগে তার ছেলে হঠাৎ বমি করতে করতে মারা যায়। নতুন মাটি ফেলার কারণে ছেলের কবরের চিহ্নটাও হারিয়ে গেছে। তবু দাগ টেনে রাখছেন, কোনোভাবে যাতে ছেলের কবরের স্থানটি শনাক্ত করা যায়। তার মতোই যে যেভাবে পারছেন, স্বজনরা মৃতের কবর শনাক্ত করে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে মাটি ভরাট করায় এরই মধ্যে অনেক কবরই মিলিয়ে গেছে।

সিটি করপোরেশন পরিচালিত ওই গোরস্তানে রয়েছে রওশন আরা রানু নামে এক নারীর কবর। গত বছরের ৫ মার্চ মারা যান তিনি। কবরটি পাকা করা হয়েছে। নামফলকে লেখা রয়েছে- ‘রানা ও রূপমের মা’। এই কবরটি নিজ দায়িত্বেই পাকা করার জন্য সিটি করপোরেশনকে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন তার স্বজনরা।

সিটি করপোরেশন জানায়, হেতেম খাঁ গোরস্তানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জবেদা খাতুনের কবর পাকা করার জন্য তার স্বজনরা ১৯ লাখ ৭২ হাজার ২৫০ টাকা দিয়েছেন। একই অর্থবছরে আইরিন পারভিন পান্নার কবরের জন্য একই পরিমাণ টাকা দিয়েছেন স্বজনরা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আব্দুল কাদের সরকার ও সাজেদা খাতুনের কবরের জন্য তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৫০ টাকা করে জমা পড়েছে। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ফি বেড়েছে কয়েকগুণ।

সিটি করপোরেশনের সচিব মশিউর রহমান জানান, কবর পাকা করার ফলে গোরস্তানের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কবরের জায়গার সঙ্কুুলান হবে না। এ জন্য কবর পাকাকরণে নিরুৎসাহিত করছে সিটি করপোরেশন। এর পরও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই পাকাকরণ ফি উচ্চমূল্য হারে নির্ধারণ করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির কবর চিহ্নিত করতে ছোট আকারের প্রতিটি নামফলক স্থাপনের জন্য তিন লাখ টাকা এবং প্রতিটি কবর পাকাকরণ ফি হিসেবে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট।

সিটি করপোরেশনের গোরস্তান ও ঈদগাহ মাঠ উন্নয়ন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ বলেন, ‘ধর্মীয় বিধানে কবর পাকা করা নিষিদ্ধ। আমাদের গোরস্তানগুলোতেও জায়গা সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই সিটি করপোরেশন কবর পাকা না করতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ফি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে জায়গার সংকট না হয়। শুধু ছোট আকারে একটি বাঁশের খুঁটি দিয়ে টিনের নামফলক দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে কোনো ফি দিতে হবে না।’

হেতেম খাঁ গোরস্তানের একজন কবর খননকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিপুল টাকা খরচে অনেকেই স্বজনের কবর লিজ নিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রবাসীরা কবর কিনছেন বেশি। অনেকেই আবার মৃত্যুর আগেই কবর কিনেও রাখছেন। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার মা-বাবার কবরের পাশে নিজের জন্য কবরের জায়গা আগাম নিয়ে রেখেছেন।

তবে হেতেম খাঁ আহলে হাদীস জামে মসজিদের ইমাম শায়খ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলামে কবর সংরক্ষণ বা পাকাকরণ নিষিদ্ধ। পবিত্র মক্কা এবং মদিনাতেও এভাবে কবর পাকা করা নেই। কেউ যদি মৃতের রুহের মাগফেরাত কামনার জন্য কিছু করতে চান, তা হলে অবশ্যই দান-সদকা করতে হবে। কবর পাকা করে মৃত ব্যক্তির কোনো উপকার হবে না।’

দিনবদলবিডি/Anamul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়