উচ্চশিক্ষার মূল্যায়ণের মানদণ্ড হোক গবেষণা!
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
সঠিকপদক্ষেপ একটি জাতির উন্নতি ও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই সঠিকপদক্ষেপের জন্য প্রয়োজন নিজস্ব গবেষণা। আর সেই গবেষণা কাজের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতির দুর্দিনের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব গবেষণার তথ্য, উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান দিয়ে থাকে। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। যদিও গবেষণার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটা অতি নগন্য। এই অতি নগন্য অর্থ দিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে অধিকাংশ গবেষণার কাজ মাঝ পথে থমকে যায়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব আর চৌর্যবৃত্তির প্রভাবে গবেষণার কার্যকারিতা হারায়। দেরিতে হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্লেজারিজম ঠেকাতে নীতিমালা প্রণয়ন করছে তার জন্য ধন্যবাদ। গবেষণা কাজের সফলতা নির্ভর করে মূলত অর্থ, পরিশ্রম, ধর্য্য ও সততার উপর। গবেষণা বা RESEARCH কে বিশ্লেষণ করলে আমরা যে বিষয় গুলো পেয়ে থাকি সেগুলো হচ্ছে।
R= Rational way of thinking যুক্তিযুক্ত চিন্তা পদ্ধতি। E= Expert and exhaustive treatment সুদক্ষ এবং ব্যাপক আলোচনা। S= Search for Solution অনুসন্ধানমূলক সমাধান। E= Exaction নির্ভুলতা। R= Relationship of facts সত্যতার সম্পর্ক। C= Careful recording সতর্কতাসহ নথিবদ্ধকরণ, Critical observation সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ, Constructive attitude গঠনমূলক মনোভাব, Condensed and Compactly Stated generalization সুসংগঠিতভাবে বর্ণনা সার্বিকীকরণ।H= Honesty সততা, Hardworking কঠর পরিশ্রম করা।
গবেষণা কাজের জন্য সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে অনুকূল পরিবেশ ও দক্ষ গবেষক। মনে রাখতে হবে গবেষণার মূলস্তম্ভ হচ্ছে চিন্তাশক্তি। আর এই চিন্তাশক্তির মাধ্যমেই আসে গবেষণার আগ্রহ। আর গবেষণার মাধ্যমে আসে নতুনত্বের উদ্ভাবন। আর এই নতুনত্বের উদ্ভাবনের মধ্যেদিয়ে আসে সৃষ্টিশীলতার পরিপূর্ণতা। লক্ষ্য করলে দেখতে পাই চিন্তাশক্তির উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সমস্ত বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। বর্তমান বিশ্বে যে দেশ যতবেশি বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞানে এগিয়ে সে দেশ ততো বেশি উন্নত ও শক্তিশালী। এটাও জানি জানবার প্রবল ইচ্ছাশতির উপর ভিত্তিকরে চিন্তাশক্তির উদ্ভব ঘটে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির জ্ঞান আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করে দিয়েছে। ঠিক তার বিপরীতে প্রযুক্তিজ্ঞানের মাত্রাঅতিরিক্ত ও অপব্যবহার আমাদের চিন্তাশক্তিকে তিলেতিলে বিনাশ করে দিচ্ছে । বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম মাদক ও প্রযুক্তি জ্ঞানের অপব্যবহারে মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে হারিয়ে ফেলছে তার চিন্তাশক্তি। আর এটাই আমাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ।
শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে উদ্ভূত করবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সভা, সেমিনার, গবেষণা মেলা সহ নানান অনুষ্ঠান করে থাকে। সেটা নিসন্দেহে ইতিবাচক। তবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের তূণমূল পর্যায় থেকে অথাৎ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে এবং সেটা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষণা কাজের জন্য যে কোন বিষয়ের উপর নমুনা স্বরূপ একজন শিক্ষার্থীকে তার নিজ গ্রামে কতটি তাল গাছ / বট গাছ /পুকুর.. আছে তার তালিকা প্রণয়ন করার মধ্যে দিয়ে primary data ও Secondary data সংগ্রহ শেখা। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে দলগত ভাবে তার নিজ গ্রামে মোট মানুষের সংখ্যা... / মোট কৃষি জমির পরিমাণ.. / ইত্যাদি তালিকা করা। একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায় থেকে যখন গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেই শিক্ষার্থী নিসন্দেহে সততার সঙ্গে তার গবেষণা কাজ সম্পন্ন করবে।
লক্ষণীয় বিষয়, যে কোন গবেষণার মূল স্তম্ভ হচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য ( Primary data) ও দ্বিতীয় পর্যায়ের তথ্য ( Secondary data) । তাই Primary data ও Secondary data নির্ভুল ভাবে সংরক্ষণের ব্যাবস্তা নিশ্চিত করা। যার ফলে গবেষণার কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে । বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজেস্ব তথ্য ও উপাত্ত সংরক্ষণাগার গড়ে তুলবে এবং গবেষণার তথ্য, উপাত্ত অনলাইন ও অফলাইনে অন্তর্ভুক্ত করবে (জাতীয় নিরাপত্তা সম্পৃক্ত গবেষণার তথ্য ব্যতীত) যার ফলে কোন গবেষণা মাঝপথে থেমে গেলেও সেটা পূনরায় শুরু করা সম্ভব হবে । কেন্দ্রীয় গবেষণা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গবেষণার সমস্ত কাজ পরিচালনা করতে হবে । একটা গবেষণা অ্যাপস তৈরি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর গবেষণা কাজের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে এবং গবেষকের সংখ্যা, গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, গবেষণা কাজের সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত তথ্য প্রদান সহ গবেষণাকে প্লেজারিজম ( কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কপি-পেস্ট) মুক্তর মাধ্যমে গবেষণার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল ( গ্রহণযোগ্যতা) নিশ্চিত করবে ।
গবেষণা মূলত একক গবেষণা, দলগত বা যৌথ গবেষণা হয়ে থাকে। বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পৃক্ত গবেষণার জন্য Primary data & Secondary data অতিসুক্ষ্ম বিশ্লেষণে ল্যাব আবশ্যক। তবে সামাজিক ও জনমিতি গবেষণার জন্য তথ্য উপাত্ত Primary data ও Secondary data বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণার কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ল্যাবের অতিসুক্ষ্ম বিশ্লেষণের কার্যক্ষমতার উপর গবেষণার ফলাফল বা গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে। তাই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের পূর্বে ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে কি না সেটা আগে বিবেচনায় নিতেহবে । শতভাগ ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত হলেই তার পরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিতেহবে। গবেষণা কাজের সার্বিকভাবে সহয়তার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, অর্থ-বিভাগ , পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আন্তঃসম্পর্ক আবশ্যক এবং গবেষকদেরব সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
মুখস্থ বিদ্যার উদগীরণের ভিত্তিতে প্রথাগত যে মূল্যায়ণ পদ্ধতি আছে সেটা বাতিল করতে হবে। শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন হবে গবেষণা কাজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জনের স্বার্থকতা লাভ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের প্রথম শতভাগ গবেষণা নির্ভর বিদ্যাপীঠ হিসাবে গড়ে তোলা তা পর্যায় ক্রমে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার অফুরন্ত ভান্ডারে পরিনত করতে পারলেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভবহবে। স্মার্ট, সমৃদ্ধি, উন্নতি ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হলে গবেষণার বিকল্প পথ নেই। তাই আমরা বলতে পারি উচ্চশিক্ষার মূলমন্ত্র হোক এটাই..
"গবেষণায় নেই যার মন!
সে যেন না করে উচ্চশিক্ষার পণ"
লেখক : মোহাম্মদ তুহিন মিয়া
গবেষক ও লেখক
দিনবদলবিডি/Anamul