সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে মুসলমানরা আবির্ভূত হবে। আর তা ২০৪০ সালের মধ্যেই হবে
যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় আমেজে ঈদ উদযাপন প্রবাসী বাংলাদেশিদের
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের ৩ হাজারেরও বেশি মসজিদের ব্যবস্থাপনায় এবারে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে…
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশীয় আমেজে উদযাপন করল পবিত্র ঈদুল আজহা। স্থানীয় সময় শনিবার (৯ জুলাই) সকালে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি পরিচালিত মসজিদ, মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, পার্কের মাঠে ও গির্জার মিনলায়তনে ঈদের জামাতে অংশ নেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩ হাজারেরও বেশি মসজিদের ব্যবস্থাপনায় এবারে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ২ হাজার ৫০০টি ঈদ জামাত এবং বাকি জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ ও গির্জার মিনলায়তনে।
গত দুই দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদ ও মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২০৯টি, ২০১১ সালে মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২ হাজার ১০৬টি এবং ২০২০ সালের সর্বশেষ গণনায় যুক্তরাষ্ট্রে মোট মসজিদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৯৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মসজিদ রয়েছে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ৩৪৩টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৩০৪টি, টেক্সাসে ২২৪টি, ফ্লোরিডায় ১৫৭টি ইলিনয়সে ১০৯টি এবং নিউ জার্সিতে ১৪১টি মসজিদ রয়েছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাংলাদেশিদের পরিচালনাধীন পাঁচ শতাধিক মসজিদ বা তৎসংলগ্ন মাঠে ঈদ জামাতগুলো শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। এ ছাড়াও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের পরিচালনাধীন মসজিদেও পর্যায়ক্রমে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্থানীয় প্রশাসন।
জামাইকা মুসলিম সেন্টারের (জেএমসি) উদ্যোগে সকাল ৮টায় জ্যামাইকার টমাস এডিসন স্কুল মাঠে একটি ঈদের জামাত আয়োজন করা হয়। জ্যামাইকার আরাফা ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে ঈদুল আজহার আরেকটি জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় হিলসাইড এভিনিউস্থ সুসান বি এন্থনী স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
জ্যামাইকার মসজিদ মিশন সেন্টারের (হাজী ক্যাম্প মসজিদ) উদ্যোগে মসজিদ ভবনে ঈদের জামাত হয় ৪টি। সকাল সোয়া ৬টায়, সোয়া ৭টায়, সোয়া ৮টায় ও সকাল সোয়া ৯টায়। এখানে নারীদের জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা করা হয়।
জ্যামাইকার আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের (এএমসি) উদ্যোগে ঈদুল আজহার নামাজ হয় তিনটি। বিশেষ জামাত হয় সকাল ৬টায় এএমসি ভবনে। অপর দুটি জামাত হয় যথাক্রমে যথাক্রমে সকাল ৮টায় এবং সকাল ১০টায় স্থানীয় রুফজ কিং পার্কে।
নিউ ইয়র্ক ঈদগাঁহর আয়োজনে ঈদুল আজহার ৫টি জামাত হয় জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায়। যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৬টা, সাড়ে ৭টা, সাড়ে ৮টা, সাড়ে ৯টা এবং সকাল সাড়ে ১০টায় জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
এস্টোরিয়ার আল আমীন মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে ঈদুল আজহার একটিই জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে ধর্মপ্রাণ প্রবাসী বাংলাদেশিরাদের প্রচেষ্টায় এবারও খোলা মাঠে সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব মেডফোর্ড (আইসিসিএম) বোস্টনের পার্শ্ববর্তী মেডফোর্ডের হোরমেল স্টেডিয়ামে সকাল ৮টায় এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের জনবহুল ও বাংলাদেশি অধুষ্যিত নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, পেনসিলভানিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ওহাইও, ইলিনয়স, কলারাডো, ডেলাওয়ার, জর্জিয়া, কানসাস, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, সাউথ ক্যারোলিনা, ওয়াশিংটন ডিসি ও কেন্টাকির প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঈদের জামাত আদায় করে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তার পরেই অবস্থান করছে ইহুদিরা। তবে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩.৪৫ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১.১ ভাগ।
এর আগে ২০১৫ সালে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ছিল ১.৮ শতাংশ। অন্যদিকে মুসলিমদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ ছিল। ৫ বছর আগে মুসলিম জনগোষ্ঠীর এই সংখ্যা ছিল ০.৯ শতাংশ।
গবেষণায় দেখানো হয়, আগামী দুই দশকে মুসলিমদের সংখ্যা দাঁড়াবে ১.৮ শতাংশ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা হবে ৮০ লাখের বেশি। ওই সময় ইহুদি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১.৪ শতাংশ।
গবেষণায় আরও বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে মুসলমানরা আবির্ভূত হবে। আর তা ২০৪০ সালের মধ্যেই হবে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রতি বছর ১ লাখ মুসলিম যোগ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। মুসলমান অভিবাসী এবং একই সঙ্গে আমেরিকান মুসলমানদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। ইহুদি জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুসলমানদের সংখ্যা অনেক দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দিনবদলবিডি/আরএজে