মোটরসাইকেল যেন মৃত্যুযান!

সৃপ্তমত মুক্তমত ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:১৫, রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২, ১৬ শ্রাবণ ১৪২৯
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, দেশে ২০২১ সালে ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে

দিন দিন সড়কপথে বেড়েই চলেছে লাশের মিছিল। মোটরসাইকেল যেন হয়ে উঠেছে ‘মৃত্যুযান’। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর শুধু ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ১৩ দিনে ৩০০ জনের মতো সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১২৭ জন মোটরসাইকেল আরোহী।

জুন মাসে দেশে ৪৭৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫২৪ জন নিহত হয়েছেন ও ৮২১ জন আহত হয়েছেন। সারাদেশে ৪৭৬টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে মোট দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ১৮ শতাংশের জন্য দায়ী মোটরসাইকেলে। এই তথ্য রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের। তবে মনে করা হয়, দুর্ঘটনা কিংবা মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি বৈ কম নয়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, দেশে ২০২১ সালে ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২ হাজার ২১৪ জন, যা ছিল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় এই মৃত্যুর ৫১ শতাংশ বেশি। আরো উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ২০২২ সালে তা আরো আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, নিহতদের বেশির ভাগই দেশের কর্মক্ষম জনশক্তি। কাজেই পঙ্গু হচ্ছে এক একটি পরিবার।

মোটরসাইকেলকে অপেক্ষাকৃত অনিরাপদ বাহন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে এ পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩৬ লাখ ৫০ হাজার; পক্ষান্তরে মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের সংখ্যা সাড়ে ২৩ লাখের মতো। অর্থাৎ একটি বৃহৎ সংখ্যক অদক্ষ মোটরসাইকেল চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীতই সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। মোটরসাইকেল স্বল্পপাল্লার বাহন হলেও মড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লার চলাচলে দেখা যায় বাইকারদের। যার দরুন দুর্ঘটনা বাড়ছে। বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা যায়, চালক ও আরোহীর হেলমেটসহ নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার না করা। এছাড়া চালকদের ওভারটেকিং টেন্ডেন্সি, বেপরোয়া গতি, নিয়ম না জানা কিংবা না মানা, একজনের বেশি আরোহী বহন করা, মোটরসাইকেল চালনাকালীন মোবাইলে কথা বলা কিংবা গান শোনা ইত্যাদি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা অন্যতম কারণ। কিশোর- যুবকরা মোটরসাইকেলে ভিডিও ধারণ করতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকারে পরিণত হচ্ছে। আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— মোটরসাইকেলের হর্ন ব্যাপকভাবে শব্দদূষণ ঘটায়।

প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাড়ছেই। কাজেই, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধ করতে এখনই কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রত্যেকে যেন ট্রাফিক আইন ও ট্রাফিক সাইন মেনে চলে, সেজন্য আইনকানুনে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। রাস্তায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয় যেন মানসম্মত হেলমেট ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করতে হবে। মোটরসাইকেল আরোহীর যেন হালনাগাদ বৈধ কাগজপত্র (ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স-টোকেন ইত্যাদি) এবং রেট্রো-রিফ্লেকিভ নম্বরপ্লেট থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। সন্তানদের প্রাপ্তবয়স্ক না পর্যন্ত এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত সড়ক বা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালাতে নিরুত্সাহিত করতে হবে। মোটকথা, শুধু জরুরি প্রয়োজনে স্বল্পদূরত্বে মোটরসাইকেল ব্যবহার করুন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মুত্যু কিংবা আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করার হাত থেকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করুন। এই আহ্বান সবার প্রতি।

লেখক: আফিয়া সুলতানা একা (শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

দিনবদলবিডি/আরএজে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়