আইনগত সহায়তা পাওয়া দরিদ্র-অসহায় নাগরিকের অধিকার: আইনমন্ত্রী

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৫৩, রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল যেকোনো নাগরিক আইনগত সহায়তা পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। আইনগত সহায়তা পাওয়া তার প্রতি করুণা নয় বরং এটা তার অধিকার।

তিনি বলেন, সমাজের দরিদ্র-অসহায় নাগরিকদের আইনগত সহায়তা পাওয়ার সঙ্গে দেশের আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সামাজিক সমতা জড়িত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মূল সংবিধানেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক সুবিচার ও সমতার বিধানাবলীসহ বিচার প্রক্রিয়ায় ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব নাগরিকের প্রবেশাধিকারের বিধান সন্নিবেশ করে গেছেন।

মন্ত্রী রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দুজনকে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্যানেল আইনজীবী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।

আইনমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ একুশটি বছর আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মানুষগুলোর আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারের প্রতি কেউ দৃষ্টি দেয়নি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি প্রথমবার সরকার গঠন করেই ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন' প্রণয়ন করেন। ফলে বাংলাদেশে প্রথম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অসচ্ছল ও সহায়-সম্বলহীন নাগরিকদের আইনগত অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মূল উদ্দেশ্য- দরিদ্র অসহায় মানুষকে আইনগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রদান করা।

তিনি বলেন, আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরও সফল ও বেগবান করে তুলতে হলে এটিকে অবশ্যই জনগণের দোরগোড়ায় অর্থাৎ যারা আইনি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে হলে উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটিকে অধিকতর কার্যকর করতে হবে। কারাগারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আইন সহায়তা প্রদানকালে পুঁথিগত আইন প্রয়োগের দৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণকেও স্থান দেওয়া উচিত। পাশাপাশি আইনগত সহায়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বঃপ্রণোদিত, দ্রুত ও কার্যকর আইনিসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রত্যেক লিগ্যাল এইড কমিটি, লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্যানেল আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, মামলার সঠিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি’ বা এডিআর মামলাজট নিরসনের সহায়ক একটি পন্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। জার্মান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড’র এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৮৭ ভাগ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী এবং শতকরা ৩০ ভাগ নাগরিকের প্রাথমিক দ্বন্দ্বের কারণ প্রতিবেশির সঙ্গে ছোট-খাটো বিরোধ বা মারামারি যা স্থানীয়ভাবেই নিষ্পত্তিযোগ্য। এটি খুবই আশার কথা হলেও আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির হার অতি নগণ্য। এর মূল কারণ সামাজিক পরিবর্তন, সামাজিক উন্নয়ন, মানুষের ব্যস্ততা এবং মধ্যস্থতাকারীর প্রতি আস্থার অভাব।

তিনি বলেন, এমন অবস্থার প্রেক্ষিত বিবেচনা করে আমরা ২০১৫ সালে ‘আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ বিধিমালা প্রণয়ন করেছি এবং এতে লিগ্যাল এইড অফিসারদেরকে মধ্যস্থতা করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। সুখবর হলো ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করে লিগ্যাল এইড অফিসাররা ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৮৩৬টি বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন। তারা যেহেতু বিচারক এবং আইনি বিধি-বিধানের অধীনে মধ্যস্থতা করে থাকেন তাই লিগ্যাল এইড অফিসগুলো এখন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এই আস্থা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা আমাদের আরও মজবুত করতে হবে।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার সম্মানিত পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন।

 

দিনবদলবিডি/Rabiul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়