ছাগলের নাম যখন ‘শাহরুখ’
দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ
সেই বাড়ির লোকজন এখন নতুন নতুন পোশাক পরতে পারছেন; হাতে-গলায় স্বর্ণের অলংকারে ভরছেন! দূর শহরে গিয়ে চা-কফিও খাচ্ছেন! সবই সম্ভব হয়েছে এই শাহরুখের অসিলায়!
এক পীরের কাছে ঝাড়ফুঁক নিতে এসেছেন নানা পেশার মানুষ! পীর এক বৃদ্ধার মাথায় হাত রেখে ঝেড়ে দিচ্ছেন, ফুঁকে দিচ্ছেন। আরেকজন পীরকে দেওয়া হাদিয়া বাক্সের মধ্যে রাখছেন। আর পীরের পাশেই শুয়ে আছে একটি ছাগল!
ছাগল?
হ্যাঁ! এই ছাগলটির নাম ‘শাহরুখ’; তাকে ঘিরেই এত লোকজনের সমাগম। শাহরুখ যেনতেন ছাগল নয়!
যে বাড়ির লোকজন একবেলার খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতেন। ক্ষুদ্রঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন কষ্ট করে চলেছেন; এনজিওর লোকজনের কাছে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
সেই বাড়ির লোকজন এখন নতুন নতুন পোশাক পরতে পারছেন; হাতে-গলায় স্বর্ণের অলংকারে ভরছেন! দূর শহরে গিয়ে চা-কফিও খাচ্ছেন! সবই সম্ভব হয়েছে এই শাহরুখের অসিলায়!
অসিলায়? হ্যাঁ। শাহরুখের গায়ে যে ‘আল্লাহু’ লেখা!
বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পাওয়ার মুহূর্তের মধ্যেই এলাকায় ছড়িয়ে যায় খবরটি। হুড়মুড়িয়ে আসতে থাকে মানুষজন।
বিষয়টি কাজে লাগান বাড়ির মুরব্বি। শাহরুখকে সামনে রেখে ময়ূরের পাখার এক গোছা হাতে নিয়ে বসে যান বাড়ির উঠোনে।
ব্যস!
থানা থেকে পুলিশ আসে, ডিসিও আসেন শাহরুখকে দেখতে। এলাকার এমপি প্রার্থী এসে দোয়া নিয়ে যান। তার পার্টির লোকজন শাহরুখকে নিয়ে মিছিল করেন। তিনি এমপি হন। কদর বেড়ে যায় শাহরুখের। ঝাড়ফুঁক নিতে চলে আসেন ক্রিকেট টিমের লোকজন জার্সি-প্যাড নিয়ে! কদর আরও বেড়ে যায় শাহরুখের। ছুটে আসেন সৌদি বাদশাহর পিএস। শাহরুখকে দেখতে বাদশাহ স্বয়ং আসবেন। শুধু আসবেনই না, তিনি শাহরুখকে কিনতে চান। দরদাম হাঁকা হয় অর্ধ কোটি টাকা। অ্যাডভান্সও দেওয়া হয়।
ব্যস!
বিষয়টি রটে যায় এলাকায়। ব্যাংক ম্যানেজার ছুটে আসেন ফরম নিয়ে তার ব্যাংকে ডিপিএস করানোর জন্য। ছুটে আসেন এলাকার মসজিদ কমিটির লোকজন। এবার এক হিন্দু পুরোহিত ছুটে এসে জানান, ওই শাহরুখের বাবা ‘কালি’ ছিলেন হিন্দু। তাই তাকে অর্ধেক টাকা দিতে হবে। এ নিয়ে ঘটে বিপত্তি।
এলাকার মুসলমানরা বলে শাহরুখের গায়ে ‘আল্লাহু’ লেখা এটি তাদের। তারা টাকা দিয়ে মসজিদ বানাবে। এলাকার হিন্দুরা বলে শাহরুখের গায়ে ‘ত্রিশূল আঁকা’ এটি তাদের। তারা টাকা দিয়ে মন্দির বানাবে।
ব্যস!
ডাকা হয় বিচার।... অথচ ঋণের বোঝা কমাতে একদিন এই শাহরুখকেই বাড়ির লোকজন বিক্রি করতে চেয়েছিলেন!
তবে বাড়ির আট বছরের ছোট ছেলে জুলফি সেটি চায়নি; ওর মন খারাপ হয়। ছাগলটি তার খুব আদরের।
ছাগলটি বিক্রি হয়ে যাবে জুলফি কিছুতেই মানতে পারছিল না। একবার তো বাড়ি থেকে ছাগল নিয়ে পালিয়ে যায়।
জুলফির বড় বোনকে যে ছেলেটি পছন্দ করে সেই তাকে সাহায্য করে। বুদ্ধি করে রং দিয়ে ছাগলটির গায়ে ‘আল্লাহু’ লিখে দেয়!
ব্যস!
পুরো এলাকা ছাগলময়।
এটি একটি সিনেমার গল্প।
সিনেমা?
হ্যাঁ! সোশ্যাল স্যাটায়ার সিনেমা। সিনেমাটি স্যাটায়ারের মাধ্যমে সমাজে ঘটে যাওয়া বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছে। সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হেসেছি। মনে হয়েছে পাশের গ্রামের ঘটনা এটি। কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস আর ধর্মকে পুঁজি করে কীভাবে মানুষ ধান্ধা করে সেটিই আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে।
২০১৪ সালে বলিউডে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং খুবই কম! মাত্র ৩.৯। আমার বিশ্বাসই হয় না কেন এত কম! তারপরও যদি দেখতে চান তাহলে ইউটিউবে ‘ইয়ে হ্যায় বাকরাপুর’ লিখলেই পেয়ে যাবেন।
দিনবদলবিডি/Rony